মুহাম্মদ কামারুজ্জামান একটি নাম, একটি আন্দোলন ও একটি বিষ্ময়কর প্রতিভা। যুগ নয়, শতাব্দীর ক্ষনজন্মা ইসলামী আন্দোলনের এক অগ্রসেনানী মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসাবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সেরা মেধাবী ছাত্র তিনি। যিনি একাধারে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়ে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন। মেধাবীদের সাহসী ঠিকানা শহীদি কাফেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের মত একটি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম হিসেবে ঐতিহাসিক অবদান রেখেছেন। নেতৃত্ব দিয়েছেন সে আন্দোলনের সিপাহসালারের। তাঁর ক্ষুরধার লেখনির মাধ্যমে এদেশের মানুষ সমাজ, সভ্যতা ও পাশ্চাত্যের নানা অসঙ্গতির ইতিহাস জানতে সক্ষম হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুনগত পরিবর্তন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার লড়াইয়ে তিনি অন্যতম। দেশে-বিদেশে সভা-সেমিনারে তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী উপস্থাপনা সেক্যুলার ও বামপন্থীদের ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপারে জিঘাংসা বাড়িয়ে দিয়েছে। সেখান থেকেই শুরু হয় হত্যার পরিকল্পনা। রাজনীতিতে জনাব কামারুজ্জামান সাহচর্য লাভ করেছেন মরহুম অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারদর্শীতা অর্জনে খুব অল্প সময়ে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে তাঁর। মূলত যারা আদর্শের লড়াইয়ে পরাজিত তারাই ইসলামী আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে চায়। হত্যা, গুম, অপহরণ এবং বিচারের নামে রাষ্ট্রীয়ভাবে হত্যার ভিন্ন অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। জনাব মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মেধা, যোগ্যতা, নেতৃত্বের গুণাবলী ও নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয়তায় আতঙ্কিত হয়েই প্রতিপক্ষরা তৈরি করছে তাঁকে হত্যার গভীর নীল নকশা ।
পৃথিবীর সকল নীতি-নৈতিকতা, মানবাধিকারকে উপেক্ষা করে আওয়ামীলীগ শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যার পর আবার জনাব কামারুজ্জামানকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি একাধারে একজন রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, লেখক, ইসলামী ব্যক্তিত্ব, সদালাপী প্রাণপুরুষ। আজকের এই মূহূর্তে বিশ্বের কোটি-কোটি মানুষ হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা আর অশ্রুশিক্ত চোখে জায়নামাজ ভাসাচ্ছে এই প্রিয় মানুষটির জন্য। আজ যেন হত্যা করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে মানবাধিকার, সত্যপন্থা, কল্যাণ, সুন্দর আর ন্যায়ের প্রতিককে। কুলষিত করা হচ্ছে সত্য, সুন্দর, বিনয়, নম্রতা আর ভদ্রতাকে। জনাব কামারুজ্জামানের দীর্ঘ সাফল্যমন্ডীত কর্ম, বুদ্ধিদীপ্ত পথচলা মহান আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমত। মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৫২ সালের ৪ জুলাই শেরপুর জেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের মুদিপাড়া গ্রামে এক ধর্মপ্রাণ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষাজীবন:- জন্মগতভাবেই জনাব কামারুজ্জামান অত্যন্ত মেধাবী । কুমরী কালিতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনায় হাতেখড়ি। ১৯৬৭ সালে জিকেএম ইন্সটিটিউশন থেকে ৪টি বিষয়ে লেটারসহ এসএসসি, মোমেনশাহী নাসিরাবাদ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৩ (১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত) সালে ঢাকা আইডিয়াল কলেজ থেকে ডিস্ট্রিংশনসহ বিএ পাস করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবৃত্তি লাভ করেন। ১৯৭৬ সালে কৃতিত্বের সাথে সাংবাদিকতায় এমএ পাস করেন।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বাংলাদেশের সরকার ও রাজনৈতিক ময়দান, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও সংগ্রাম, গণমাধ্যম তথা সাংবাদিকতা ও কূটনৈতিক মহলসহ দেশের সর্বত্র একটি আলোচিত নেতৃত্ব। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আজ কামারুজ্জামান একটি উল্লেখযোগ্য নাম। একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ও ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। বাংলাদেশে আদর্শ ও ইসলামী রাজনৈতিক ধারা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বিগত চার দশক ধরে তাঁর মেধা মনন বুদ্ধি দিয়ে নিরলস পরিশ্রম ও আন্দোলন সংগ্রামে আত্মনিবেদিত এক প্রাণ।
জনাব মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি, পরবর্তীতে কেন্দ্রিয় সেক্রেটারী জেনারেল ও ১৯৭৮-৮৯ সালে শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। এই প্রতিভাধর মানুষটি আন্তজার্তিক আঙ্গনেও অনেক অবদান রেখেছেন। বিশ্ব মুসলিম যুব সংস্থা (WAMY) এবং বাংলাদেশ সরকারের যুব মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ১৯৭৯ সালে মৌচাক স্কাউট ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক ইসলামী যুব সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে তিনি প্রধান সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় যুব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন শেরপুরের আরেক কৃতী সন্তান মরহুম খন্দকার আব্দুল হামিদ। উল্লেখ্য যে, এই সম্মেলনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন।
কর্মজীবন:- ছাত্রজীবন পরিসমাপ্তির পর জনাব মুহাম্মদ কামারুজ্জামান সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি বাংলা মাসিক ‘ঢাকা ডাইজেস্ট’ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হন। ১৯৮১ সালে তাঁকে সাপ্তাহিক ‘সোনার বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সোনার বাংলায় ক্ষুরধার লেখনির কারণে এরশাদের শাসনামলে পত্রিকাটির প্রকাশনা নিষিদ্ধ হয়। ‘সোনার বাংলা’ রাজনৈতিক কলাম ও বিশ্লেষণে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
জনাব মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দশ বছর দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের একজন সদস্য এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য। ১৯৮৫-৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে তিনি ছিলেন প্রথম কাতারে। রাজপথে এবং অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তিনি ছিলেন সদা তৎপর।
রাজনীতিবিদ হিসেবে-: জনাব মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৭৯ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। ১৯৮১-৮২ সালে তিনি কিছুদিনের জন্য ঢাকা মহানগরী সহকারী সেক্রেটারী, ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯২ সাল কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক এবং ১৯৯২ সাল থেকে তিনি জামায়াতের অন্যতম সহকারী সেক্রেটারী জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কমিটি ও লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য হিসাবে বিগত স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ১৯৮৩-৯০ পর্যন্ত তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৩-৯৫ সাল পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য।
বর্তমানে তিনি জামায়াতের কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটি, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা ও বিভিন্ন কমিটির সদস্য এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক সেক্রেটারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। চারদলের কেন্দ্রীয় লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসাবে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্য প্রচেষ্টায় তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। এজন্য দলীয় রাজনীতি ছাড়াও বিভিন্ন ফোরামের সভা-সমাবেশ, সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি সকল মহলে সাড়া জাগিয়েছে।
রাজনৈতিক ময়দানে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের পাশাপাশি মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বাংলাদেশের রাজনীতি, ইসলামী সংগঠন ও আন্দোলন, গণতন্ত্র ও তার বিকাশ, নির্বাচন, গণমাধ্যম, সমাজ সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রচুর চিন্তা ও গবেষণা করে চলেছেন। তিনি বাংলাদেশে অবাধ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাসহ ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠা ও তার কৌশল নিয়ে বেশ কয়েকটি মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং সেই বইগুলো পাঠকমহলে বেশ সমাদৃত হয়েছে। তাঁর সর্বশেষ বই ‘সাঈদ বদিউজ্জামান নুরসী’ সাপ্তাহিক সোনার বাংলায় বিগত কয়েকমাস ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে যা পাঠক মহলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান যেমন একদিকে সফল রাজনীতিবিদ ও সংগঠক অন্যদিকে একজন সফল সাংবাদিক ও সম্পাদক। তাঁরই সফল সম্পাদনায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক সোনার বাংলা আজ বাংলাদেশের শীর্ষে অবস্থানকারী সাপ্তাহিক পত্রিকা। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মুহাম্মদ কামারুজ্জামান তাই আজ সরকার ও ইসলাম বিরোধী রাজনৈতিক মহলের মারাত্মক অপপ্রচারের শিকার। সরকারের রোষানলে পড়ে দেশপ্রেমিক এই রাজনীতিবিদ আজ রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ডের মুখোমুখি দন্ডায়মান।
যে কথিত অভিযোগে কামারুজ্জামানকে আজ কারাগারে আটক রাখা হয়েছে সে অভিযোগের কোন রকম সত্যতা নেই। তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামী ও আদর্শিক মূল্যবোধের চেতনার সমন্বয় ঘটিয়ে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠনে অনন্য অবদান রেখে চলেছেন। তিনি একজন জাতীয় রাজনীতিবিদ ও ইসলামী চিন্তাবিদ। রাজনৈতিক ময়দানে তাঁর অবদান দেশের ইসলাম বিরোধী শক্তির সহ্য হচ্ছে না। তাই তাঁর বিরুদ্ধে আজ যুদ্ধাপরাধের কথিত অভিযোগ।
এমন প্রতিভাসম্পন্ন একজন মানুষকে আজ হত্যা করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। মানব সমাজে আজ মনে হচ্ছে সত্য পন্থীরাই যেন অপরাধী। প্রকৃত অপরাধীরা যেন সাধু!!! জালেমের বিষাক্ত হুংকার মানব সমাজকে কাঁপিয়ে তুলছে। খোদাদ্রোহী দুনিয়া আজ অত্যাচার, নিপীড়ন, প্রতারণা, হঠকারিতা ও দুর্ধর্ষতা ও অপরাজনীতির সীমানা ছেড়ে গেছে। নির্যাতিতের করুণ ফরিয়াদে আকাশ বাতাস দলিত মথিত ও তিক্ত-বিষাক্ত। কিন্তু তারপরও কি সত্য পথের সৈনিকেরা ভিত? না, বরং প্রতিটি মুমিন এই বিপদ সংকুল পথ পাড়ি দেয়াকে নিজের ঈমানী দায়িত্বের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেই এগিয়ে চলছে। এই রকম কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে সকল নবী-রাসুলকে। যুগে-যুগে যারাই সেই পদাংক অনুসরন করবে, তাদের প্রত্যেককেই একই পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে এটাই স্বাভাবিক।
আজ আমাদের প্রিয় নেতা জনাব কামারুজ্জামান ভাই সেই পরীক্ষায় অবতীর্ণ। কোনো এক ব্যক্তি রাসূলূল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! কবরে সকল মুমিনের পরীক্ষা হবে, কিন্তু শহীদের হবে না, এর কারণ কী? হুজুর (সা.) জবাবে বলেন, তার মাথার ওপর তলোয়ার চমকানোই তার পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট।’ আল্লাহর দ্বীনের দা’য়ী হিসেবে শুধু সারা বাংলাদেশে নয়, বরং ছুটে বেড়িয়েছেন আমেরিকা, ইউরোপ, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান, পাকিস্তান সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর অনেক প্রান্তে। মিথ্যা কালিমা আর ষড়যন্ত্রের কালো কাপড় কি সেই আলোচ্ছটাকে আবৃত করতে পারে? যেই শির আজন্ম এক পরওয়ারদিগার ছাড়া কারো কাছে নত হয়নি, ফাঁসির আদেশে সেই শির দুনিয়ার কোন শক্তির কাছে নতি শিকার করতে পারে?
মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের কারাগারে পরিবারের সাক্ষাৎ শেষে বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আব্বা চিন্তিত ও বিচলিত নন। আমরাও বিচলিত নই। তিনি সুস্থ আছেন। তার মনোবল অটুট আছে। আব্বা আমাদের হাসিমুখে বিদায় দিয়েছেন। উনি আমাদের সবসময় সৎপথে চলতে ও সত্যের উপর অবিচল থাকতে বলেছেন।’ তার বাবা বলেছেন, ‘এটি একটি ভ্রান্ত রায়। দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং যেসব বিচারপতি এ মামলার রায় দিয়েছেন, যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের বিচার আল্লাহ তায়ালা করবেন। নতুন প্রজন্ম একদিন সত্যের উদঘাটন করবে। আমার বিশ্বাস, আমার মৃত্যুর পর এদেশে ইসলামী আন্দোলন আরো জাগ্রত হবে।’ (সুত্র: নয়াদিগন্ত)
আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাদের প্রধান এজেন্ডা হিসেবে গ্রহন করেছে এ জমীন থেকে ইসলামের শিকড় স্বমুলে উৎখাতের। তার অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে ঠিক করা হয়েছে এদেশের প্রধান ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে দমন করার। এজন্য তারা বেছে নেয় জুলুম-নির্যাতন, হত্যা, গুম, অপপ্রচার, হামলা মামলা আর তথাকথিত যুদ্ধাপরাধী বিচারের নামে নেতৃবৃন্দকে হত্যা করার গভীর ষড়যন্ত্র। আইনের সকল নীতি নৈতিকতা বিবেক বুদ্ধি উপেক্ষা করে অত্যন্ত হীন কায়দায় রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রতিপক্ষ দমনের এই আয়োজনে প্রকাশ্য মদদ যোগাচ্ছে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। কারণ তারা এদেশের সম্পদ লুন্ঠন ও আধিপত্য বিস্তারে প্রধান বাঁধা মনে করছে এদেশের ইসলামী শক্তিকে। সুতরাং এক ঢিলে দুই পাখি শিকারের সহজ পথ হিসেবে বেছে নেয় তথাকথিত যুদ্ধাপরাধী বিচারকে।
৫ জানুয়ারির একতরফা ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের পূর্বে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং এরশাদকে নির্বাচনে আনার জন্য সাক্ষাত করেও বলেছেন ” আপনি নির্বাচনে না আসলে তো জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় আসবে” এমন বক্তব্য শিষ্ঠাচারের চরম লঙ্ঘন নয় কি? অনেকটা পুতুল খেলার মতই সাজানো নাটকের মধ্যে দিয়ে চলছে একের পর এক ফাঁসির রায়। বিচারের রায়ের ক্ষন তারিখ আর ফাঁসির রায় কার্য়কর করার ঘোষনা দিয়েই চলছেন প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অন্য মন্ত্রী-এমপিরা পর্যন্ত।
এদিকে কামারুজ্জামানের রিভিউ রায়ে একজন বিচারপতি দিয়েছেন নোট অব ডিসেন্ট” কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড স্থগিত করতে এইচআরডব্লিউ আহ্বান জানান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবিলম্বে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ডের রায় স্থগিত করা এবং মামলাটি স্বাধীনভাবে পুনর্বিবেচনা না করা পর্যন্ত তা কর্তৃপক্ষের মুলতবি রাখা উচিত। এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, মৃত্যুদন্ড একটি অপরিবর্তনযোগ্য ও নিষ্ঠুর শাস্তি। বিচার বিভাগ যখন এ ধরনের শাস্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গরূপে পুনর্বিবেচনা করতে ব্যর্থ হন, তখন সেটি আরও গর্হিত পর্যায়ে উপনীত হয়। তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচারসমূহ নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়া লঙ্ঘনের পুনঃপুনঃ ও বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের মহামারীতে বিপর্যস্ত, যেখানে পক্ষপাতহীন বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা আবশ্যক। (সুত্র: মানব জমিন)
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় জনাব মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিচারের রায় ব্যাপকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে সরকার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় আরেক নেতাকে ফাঁসি দিতে যাচ্ছে বলে আখ্যায়িত করেছে। অনেক মিডিয়ায় এই ইসলামিক স্কলারের হত্যার ষড়যন্ত্রকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বলে প্রতিবেদন ছেপেছে। বিশ্ববিখ্যাত সংবাদ সংস্থা বিবিসির হেডলাইনটি হলো ‘ইসলামিস্ট লিডার কামারুজ্জামানস এপিল রিজেকটেড’। যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত গার্ডিয়ান পত্রিকার অনলাইনেও গতকাল পরিবেশিত খবরে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে একজন ইসলামিস্ট লিডার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আলজাজিরা পরিবেশিত খবরে কামারুজ্জামানকে জামায়াত নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি’র অনলাইন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস,ওয়াশিংটন পোস্টও এ বিচার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিভিউ আবেদন খারিজ করে রায় ঘোষণার সাথে সাথেই বিশ্বের বিভিন্ন টিভি, অনলাইন পোর্টাল এবং সংবাদপত্রের অনলাইন ভার্সনে বিশেষ গুরুত্বের সাথে খবরটি পরিবেশন করা হয়। (সুত্র: নয়াদিগন্ত)
আজ আওয়ামীলীগ জামায়াত নেতৃবৃন্দকে হত্যা করার দিনক্ষন ঠিক করে যেন আনন্দ উপভোগ করছে, তাদের কি জানা নেই যে, আল্লাহ তায়ালা মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণ, জীবন-মৃত্যু নিজের হাতে রেখে দিয়েছেন। এই হাদীসে সেই ঘটনায় বর্ণিত হয়েছে: হযরত আবু আব্বাস আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা:) বর্ননা করেছেন- “একদিন আমি রাসুল (স:) এর পেছনে ছিলাম তিনি আমাকে বললেন হে যুবক! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখাবো। আল্লাহকে স্বরণ করবে তো তিনি তোমাকে রক্ষা করবেন, আল্লাহকে স্বরন করলে তাঁকে তোমার সামনেই পাবে। যখন কিছু চাইবে তো আল্লাহর কাছেই চাইবে। যখন সাহায্য চাইবে তো আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে। জেনে রাখ, সমস্ত মানুষ যদি তোমার কোনো উপকার করতে চায় তবে আল্লাহ তোমার জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, তা ব্যতিত আর কোনো উপকার করতে পারবে না। আর যদি সমস্ত মানুষ তোমার কোন অনিষ্ট করতে চায় তবে আল্লাহ তোমার জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তা ব্যতিত আর কোন অনিষ্ট করতে পারবেনা। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং পৃষ্ঠা শুকিয়ে গেছে”।
যে আইন মানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের পরিপন্থী, যে আইন সমাজে বিশৃঙ্খলা, জিঘাংসা আর হানাহানির আশংকার জন্ম দেয় সেটিই “কালো আইন”। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ আইন যে একটি কালো আইন তা নিয়ে এখন আর কোন সন্দেহ নেই। এই আইন দিয়ে কোন ন্যায় বিচার একেবারেই অসম্ভব। যা নিয়ে আজ দেশে-বিদেশে বিতর্কের শেষ নেই। অবশ্য আইন বিশেষজ্ঞরা ভাল বলতে পারবেন পৃথিবীতে কোন আইন বা ট্রাইবুনাল নিয়ে এর আগে এত বিতর্ক হয়েছে কিনা?
এটি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত, সমালোচিত, বিতর্কিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, কালো আইন ও ক্যাঙ্গারু কোর্ট হিসেবে গ্রীনিজ বুকে স্থান করে নিতে সক্ষম হবে। আইনের প্রভুর দেশ হিসেবে খ্যাত যুক্তরাজ্যের হাউজ অব লডর্স এটিকে শুধু কালো আইন হিসেবেই চিহ্নিত করেনি বরং আইনটি সংশোধনের জন্য ১৭ টা পয়েন্টে তাদের অবজারবেশন তুলে ধরে বাংলাদেশ সরকারের নিকট তাদের মতামত পাঠিয়ে দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফেন জে র্যাপ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে প্রণীত আইন যথেষ্ট নয়।“
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এশিয়া বিভাগ, দ্যা ওয়ার ক্রাইমস কমিশন অব দ্যা ইন্টারন্যাশনাল বার এ্যাসোসিয়েশন, দ্যা ওয়ার ক্রাইমস প্রজেক্ট ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে প্রয়োজনীয় সংশোধন ছাড়া এই আইনের মাধ্যমে বিচারকাজ চালিয়ে গেলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিতর্ক বাড়বে।” ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যালেন ডানকান ব্রিটিশ এ মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা প্রয়োজন। এ বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করলে চলবে না।” ব্রিটিশদের এমন পুরাতন মনোভাবে খুব ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন আমাদের আইনমন্ত্রী।
টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার, ইশান ঠাকুরের লেখা ওই প্রতিবেদনটি টাইম-এর ৩রা আগস্ট অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়। ‘বাংলাদেশ : ব্রিফিং এ ফরগটেন জেনোসাইড টু জাস্টিস’ শীর্ষক রিপোর্টে আশঙ্কা করা হচ্ছে সরকার তার পরিচিত প্রতিপক্ষ এবং রাজনৈতিক শত্রুদেরকে দমন করতেই এ বিচারকে ব্যবহার করছে। মুলত পৃথিবীর যত জায়গায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, প্রায় তার সবকটিই In the name of law তথা আইনের দোহাই দিয়ে। বর্তমান সরকার ও আইনের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ও আদালতকে ব্যবহার করে সেই অন্যায়টি-ই করছে বে-আইনী ভাবে। এটি ও শাসক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণকে এক প্রকার ধোঁকা। দেশের জনগণ এটি খুব ভালোভাবেই জানে। বর্তমান সরকার কালো আইন দিয়েই বিচারের নামে প্রহসন করে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে রাজনীতির অঙ্গন থেকে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ইতিহাস সাক্ষী ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে কেউ সফল হয়নি। এবারও হবে না ইনশা-আল্লাহ।
সুতরাং আমাদের জীবনে জেল-জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, ফাঁসির রায় এগুলো নতুন হলেও ইসলামী আন্দোলনে তা একেবারেই পুরাতন। পৃথিবীতে নবী-রাসুলগন সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ও যুক্তিসংগত পন্থায় মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবানের পর সেখানেও বিরোধীরা বেছে নেয় অন্ধ আবেগ ও উন্মত্ত হিংস্রতার পথ। সৃষ্টি করে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় আজো কিন্তু তার ব্যতিক্রম হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ, উপহাস, গালিগালাজ ও অশালীন উপাধি সব যেন একই কারখানায় তৈরী। নবী-রাসূল (সা) খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে আজমাঈন শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে নিজেদের ধন্য করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। আজও আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে এই পথে কবুল করবেন তাদের থেকে বেশী সৌভাগ্যের অধিকারী আর কে হতে পারে?
আমার এই লিখা যখন শেষ করছি তখন ইসলামী আন্দোলনের এই প্রাণপ্রিয় নেতাকে হত্যা করার গভীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে দেশের জনগণ। ক্ষুব্ধ ও ভারাক্রান্ত গোটা বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ। ফাঁসির আদেশ বন্ধ করতে সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রয়েছে বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠন, ক্ষমতাধর ব্যাক্তি ও আইন বিশেষজ্ঞ ও অনেক দেশের পক্ষ থেকে। হে আল্লাহ! বান্দাহর সকল প্রচেষ্টা যেখানে শেষ, তোমার সাহায্য সেখানে শুরু। হে মাবুদ! তুমি ইসলামী আন্দোলনের খেদমতের জন্য তোমার প্রিয় গোলাম, আমাদের প্রানপ্রিয় নেতা কামারুজ্জামান ভাইকে সুস্থ অবস্থায় আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দাও। হে আরশের মালিক! তুমি আমাদের অশ্রুসিদ্ধ এই ফরিয়াদ কবুল কর। আমীন।