নিজস্ব প্রতিবেদক: ইতিহাস নির্মম, নিষ্ঠুর। আবার অনিবার্য এবং অপ্রতিহতও। ইতিহাসের আরো বৈশিষ্ট্য আছে। ইতিহাস আইনের মতো অন্ধ ও পক্ষপাতহীন। তবে আইন-বিচার বিজয়ী নিয়ন্ত্রণ করে, ইতিহাস বিজয়ীর ধার ধারে না। ইতিহাস নিজস্ব ধারায় এগোয়। নিজেই নিজের গতিধারা ঠিক করে। ইতিহাস অব্যয় অক্ষয়ও। ইচ্ছে করলে এর গতিধারা সাময়িকভাবে রোধ করা যায়, স্থায়ীভাবে পাল্টে দেয়া যায় না। স্থায়ীভাবে বাঁক ঘুরিয়ে দেয়া কিংবা বিকৃত করাও সহজ নয়। এটি চেপেও রাখা যায় না। তবে স্মৃতি ও শ্রুতিনির্ভর ইতিহাস অনেক সময় বিভ্রম সৃষ্টি করে। আরোপিত ইতিহাস বিপত্তির কারণ ঘটায়। ফরমায়েশি ইতিহাসও বিড়ম্বনার কারণ হয়; কিন্তু কালের স্রোতে ভেসে যায়। এটাও ঠিক মহাকালের ভেতর ইতিহাসের একটি প্রাগৈতিহাসিক পর্ব থাকে। সেটি হয় ধারণাতীত, গবেষণালব্ধ। তবে অনুমাননির্ভর ও জ্ঞাননির্ভর মানুষ সেই ইতিহাসকে বশ করতে চায়। নিজের মতো করে সাজাতে চায়। মনের মাধুরী মিশিয়ে বর্ণনা করতে চায়। যেমন ইতিহাসের জড়বাদী ব্যাখ্যা। নিকট অতীত, সুপ্রাচীন ও প্রাগৈতিহাসিক- এভাবে ভাগ-বিভাজন করে ইতিহাস বোঝার একটা প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। শতক ও যুগ ভাগ করে ইতিহাস বোঝার একটা নিয়মও চালু আছে।
হিস্ট্রি রিপিটস ইটসেলফ বা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে বলে যে কথাটি চালু আছে সেটি সর্বাংশে সত্য নয়। ইতিহাসের নির্মমতা বোঝাতে অনেকেই সত্যের সাথে এর সাংঘর্ষিকতা বোঝেন অথচ সত্য অন্য কিছুর সাথে তুল্য নয়। সত্য সব সময় আপন মহিমায় ভাস্বর। ইতিহাস সত্যকে অকপটে মেনে নেয়া থেকে যারাই বিরত থাকে, রাজরাজড়াদের বানানো কাহিনীকে প্রাধান্য দেয়, তারা সময়ের কাছে প্রতারিত হয়। তারাই ইতিহাসের স্বাভাবিকতা নষ্ট করে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ খাড়া করে। ঘটমান বর্তমানের শাসক শ্রেণীর ইচ্ছে থাকে ইতিহাসকে তাদের মতো করে বর্ণনা করার। করেও। বাস্তবে প্রকৃত ইতিহাস নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের কারণে সামনে এসে দাঁড়ায়। আজকের সময় ও প্রেক্ষাপটটা অনেক বেশী ইতিহাস বিকৃতির সুযোগ সৃষ্টি করছে। তাই সঠিক ইতিহাসকে বেশি মাত্রায় টেনে তুলতে উদ্বুদ্ধ করছে।