বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি কমন ভীতি রয়েছে। আর সেটা হচ্ছে অংক ভীতি। আমি নিজেও অংকে কাঁচা। তারপরও জীবনের অংক আমাদের সবাইকে মেলাতে হয়। আসুন আজ আমরা কিছু অংক শিখি। বাংলাদেশের মানুষ যতই অংক ভীতি আক্রান্ত হিসাবে বেড়ে উঠুক না কেন, যোগ-বিয়োগ, গুন-ভাগ সকলেই করতে পারে। আর এখন যে হিসাবটা করতে চাই সেটা কোনও হাওয়ায় পাওয়া কন্সপিরেসি থিওরী বা “এমন কিন্তু হইতে পারে, আমার কাকার শালায় কইছে” টাইপ সূত্রের উপর ভিত্তি করে নয়। এটা নির্বাচন প্রসঙ্গে। নির্বাচনে কোন কেন্দ্রে কতজন ডিপ্লয়মেন্ট হবে পুলিশ হেড কোয়ার্টারের সেই ডকুমেন্ট দেখেই হিসাবটা কষতে বসলাম। আর সাথে সূত্র হিসাবে ব্যবহার করবো নির্বাচন কমিশনের গেজেট।
আজকের অংকের জন্য ৩৬০ আউলিয়ার পূন্যভূমি সিলেট-১ আসনটি নিচ্ছি। আপনারা চাইলে আপনাদের নিজেদের আসন ধরে হিসাব করবেন। নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল গেজেট অনুযায়ী সিলেট-১ আসনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ২১৫টি। পুলিশ হেড কোয়ার্টারের সিকিউরিটি প্ল্যান অনুযায়ী মেট্রোপলিটন এলাকার প্রতি ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রসহ পুলিশ থাকবে ৩ জন; লাঠিসহ আনসার থাকবে ১২ জন; আর লাঠিসহ চৌকিদার বা দফাদার থাকবে ১ জন। সর্বমোট ১৬ জন। “গুরুত্বপূর্ণ” কেন্দ্রে অস্ত্রসহ পুলিশ থাকবে ৪ জন, মোট থাকবে ১৭ জন। মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে এই সংখ্যা কমে যাবে: অস্ত্রসহ পুলিশ থাকবে ১ জন, সাথে লাঠিসহ আনসার, চৌকিদার ১৩ জন, মোট ১৪ জন।
তার অর্থ দাঁড়ালো ৩০ তারিখ সকালে যদি সিলেট-১ আসনের ভোটাররা ২০০-৫০০ হয়ে একেবারে সকাল বেলা ভোটকেন্দ্রের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে যান, তাইলে পুলিশ দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরার স্বপ্ন যারা দেখতেছেন, তাদের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। ৪ জন পুলিশ দিয়ে ৫০০ জন ভোটারকে “সিস্টেম” করা যায় না। এইটা সবচেয়ে ভালো জানেন মাঝারি সারির পুলিশ কর্মকর্তারা। এখন দেখি সিলেট-১ আসনে লীগের পোলাপান দিয়ে ভোটকেন্দ্রে দখল করে ব্যালট বাক্স ভরার যদি কোন স্বপ্ন থাকে তাইলে সেটার কি হিসাব। প্রতিটা ভোটকেন্দ্র দখল করতে (বা “গেট লক”) করতে মিনিমাম মানুষ লাগে ৫০ জন (এই হিসাবটা আমি পাইছি আওয়ামী লীগেরই এক নেতার কাছে)। সিলেট-১ আসনের সবকটি ভোটকেন্দ্র দখল করতে তাইলে লাগবে ২১৫ x ৫০ = ১০,৭৫০ জন আর ৫০টি ভোটকেন্দ্র দখল করতে লাগবে ১০৭ x ৫০ = ৫,৩৫০ জন। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মৌলভীবাজার থেকে লোক এনেও কিন্তু এই ম্যানপাওয়ার ডিপ্লয় করা যায়নি। এইবারতো আরো অসম্ভব। যদি কেন্দ্র খালি থাকে শুধুমাত্র তখনই প্রতি কেন্দ্রে ২৩ জন লোক নিয়ে করা আওয়ামী লীগের “সেন্টার কমিটি” ব্যালট বাক্স ভরার সুযোগ পাবে। এর মানে হইলো এই যে ৩০ তারিখ সকালে যদি সিলেট-১ আসনের ভোটাররা ২০০-৫০০ হয়ে একেবারে সকাল বেলা ভোটকেন্দ্রের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে যান, তাইলে কিন্তু পুরা গেইম অন!
এই যে হিসাব এইটা সবচেয়ে ভালো জানে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। এই জন্যই তারা পাখির মতো একটা কথাই বলে যাইতেছে: ৩০ তারিখ সকাল, সকাল ভোট দিতে যান এবং ভোটকেন্দ্র পাহারা দেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এখন অনেক গুজব ছড়াচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। মানুষকে সম্পূর্ণরূপে ডিমোরালাইজড করে দেয়াই তাদের এই গুজবের আসল উদ্দেশ্য। নির্বাচনের দিন তারা মরণ কামড় দেবে সন্দেহ নেই। তার বিপরীতে ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের দেখেন, মার খেয়ে রক্তাক্ত হচ্ছেন তাও কিন্তু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন না। তাদের হিসাবটা খুব সোজা: ৩০ তারিখ সকালে যদি বাংলাদেশের ভোটাররা ২০০-৫০০ হয়ে একেবারে সকাল বেলা ভোটকেন্দ্রের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে যান, তাইলে সব খেলা শেষ।