জনাব, আপনার কি দুই মিনিট সময় হবে? যদি হয় তাহলে চলুন একটু গল্প করি। আচ্ছা আপনার কি আবু বকরকে মনে পড়ে? ওই যে দিনমজুরের ছেলে! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র ছিল। ছিল বলছি এই জন্য যে, ছেলেটি তো এখন আর নেই। ছাত্রলীগের গুলিতে খুন হয়ে গেছে সেই কবে। খুন হবার আগে সর্বশেষ পরীক্ষায় যার সিজিপিএ ছিল রেকর্ড ৩.৭৫ ! রেজাল্ট বের হবার আগেই সে খুন হয়, রেজাল্ট বের হবার পরে দেখা গেল- মৃত আবুবকরই বরাবরের মত অর্জন করেছিল প্রথমস্থান।
তার হত্যাকারী ছাত্রলীগের নেতারা কিন্তু ঠিকই ২০১৭ সালে আদালতের রায়ে খালাস পেয়েছে। কারাগার থেকে বেরিয়ে এখন মুক্ত হাওয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বীরদর্পে। জনাব, জানতে চাইছি, আবু বকরকে কি কেউ খুন করেছিল নাকি সে এমনিতেই খুন হয়ে গেছে? আদালতের রায় বিবেচনায় নিলে তো আবু বকরকে কেউ খুন করেনি! একই ঘটনা ঘটেছিল বিশ্বজিৎ নামের ছেলেটির সাথে, আপনারা দেখেছিলেন কারা ওকে কুপিয়েছিল। কিন্তু আইন অন্ধ…. তাই দেখেনি… সবাই ছাড়া পেয়ে গেছে… সব্বাই!
তনুকে মনে আছে ? কুমিল্লার সেই মেয়েটির কথা? অথবা বগুড়ার সেই মা আর মেয়ের কথা। যাদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেছিলো তুফান লীগ ? পটুয়াখালীর সেই হিন্দু মা আর মেয়ের কথা। যাদের তুলে নিয়ে ট্রলারে ধর্ষণ করেছিল ৬ টি সোনার ছেলের দল ? অথবা বুশরা নামের মেয়েটি … যাকে ধর্ষন করে হত্যা করা হয়েছিলো ? ফাঁসির রায় পাওয়া সব নেতারাও কিন্তু খালাস পেয়ে বের হয়ে গেছে। অথবা , গাজীপুরের সেই হতদরিদ্র বাবা আর মেয়েটির কথা , যে শিশু মেয়েটির ধর্ষনের বিচার না পেয়ে অসহায় বাবা মেয়েটিকে নিয়ে রেলগাড়ির নিচে শুয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিল ? মনে পড়ে ?
মনে আছে পহেলা বৈশাখে মেয়েদের গণযৌননির্যাতন ? সকল ভিডিও ফুটেজ আর ইমেজ ছিল …কিন্তু কারা অপকর্ম করেছিল , তার কি বিচার হয়েছে ? মনে আছে ৭ ই মার্চের সমাবেশ উপলক্ষে রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায় সোনার ছেলেদের দ্বারা মেয়েদের যৌননির্যাতন ? হয়রানি ?
অথবা শাজাহান খানের শ্রমিকদের দ্বারা মেয়েদের শরীরে মাখানো কালি ? প্রতিনিয়ত বাসের ভেতর ধর্ষন ? কোন সুবিচার পেয়েছেন ?
আপনি নিশ্চয় পড়াশোনা শেষে এখন চাকরি করছেন। কিন্তু আপনার কি মনে পড়ে হলের ভেতর নিয়মিত ছাত্রীনির্যাতনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে উলটো বহিষ্কৃত হতে হয়েছিল আপনার সহপাঠিনীদের ? অথবা চাকরির দাবীতে আপনার ও আপনার সহপাঠীর উপর নেমে আসা নির্যাতন, আপনার সহপাঠিনীর বুকের ওড়না ছিড়ে ফেলা …অথবা সংবেদনশীল অঙ্গে পশুদের হাত …মনে পড়ে ?
অথবা নিরাপদ সড়কের দাবীতে রাস্তায় নামা আপনার ছোট ভাই বোনদের উপর নেমে আসা অত্যাচার ?
আপনার কর্মব্যস্ত জীবনে আগামী ৩০ ডিসেম্বর আপনি সব ভুলে বাসায় একদিনের আরামপ্রদ ছুটি কাটাতে পারেন। আগামী ৫ বছর রাস্তাঘাটে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজেদের এবং নিজের আপনজনদের হয়রানির শিকার হতে দেখতে পারেন। নিশ্চিত থাকুন, আপনিও কোনো বিচার পাবেন না । যদি তেমনটা না চান, যদি চান সবার জন্য নিশ্চিত হোক ন্যায়বিচার তাহলে আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে। ৩০ ডিসেম্বর কষ্ট করে ভোট কেন্দ্রে যেতে হবে। নিজের ভোটটি নিজেকেই দিতে হবে। তাহলেই সকল অবিচারের পাওনা সুবিচার আদায়ের একটি পথ বের করতে পারেন। আজ হয়তো অন্যের জন্য, কিন্তু আগামীতে এই পথ আপনার নিজের প্রয়োজনেও আসতে পারে। কারন আপনি সমাজবিচ্ছিন্ন কোনো প্রাণী নন। তাই পছন্দ আপনার । কারন ভবিষ্যতটাও আপনার। আজকে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে আগামীতে ভুগবেন আপনি নিজে, আপনার পরিবার এবং প্রতিবেশী।