ছাত্রলীগ ১৯৭১ সালের পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি জলজ্যান্ত কলংকের নাম। বাংলার মানুষের এটি একটি আতংকের নাম, একটি ভোগান্তির নাম।এই সংগঠনের সদস্যরা সব ছাত্র নামের অছাত্র। এদের কাজ পড়াশোনা নয়। এদের কাজ রাহাজানি, হত্যা, টেন্ডারবাজী, ইভ টিজিং, মারামারি ইত্যাদি নানা ধরনের কুকর্ম।বলা হয়ে থাকে, এই সংগঠন তৈরীর পেছনে মহৎ উদ্দেশ্য ছিল যা নিবেদিত থাকবে দেশ ও জনগণের কল্যাণে।
১৯৪৮ সালের ৪ই জানুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহিরুল হক হলে যাত্রা শুরু করে “পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ” যা পরে মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে ছাত্রলীগ করা হয়।প্রতিষ্ঠার পর এই সংগঠনের কর্মকান্ড স্বাভাবিক ভাবেই চলে।এই সংগঠনের আসল চেহারা প্রকাশ করতে শুরু করে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কালে।
স্বাধীন বাংলাই ক্রমেই এই সংগঠন হয়ে উঠে সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্যে। এদের হিংস্র থাবা ক্রমে জাতির উপর অতি মাত্রায় চরম রূপ লাভ করে।অন্য ছাত্র সংগঠনের উপর হামলা করে ছাত্র হত্যা করা এদের হাতের তুডিতে পরিণত হয়।এই সংগঠনের কর্মকাণ্ডে বেজায় নাখোশ তাদের অভিবাবক দল আওয়ামীলীগ।বার বার দেশকে চরম অনিশ্য়তা আর হানাহানির দিকে ঠেলে দিয়ে দেশের চরম ক্ষতি করে চলেছে এরা।
অনাচার প্রতিরোধ করার প্র্তয় নিয়ে গঠিত সংঘ এখন পাপাচার প্রজনন সংগঠন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।মারামারি,কাটাকাটি যাদের নিত্য নৈমিত্ত বাপার।বলতে গেলে – কোন এমন নোংরা ক্ষেত্রে এদের নাম নাই তা বলা সূর্যের কাছে মানুষ পৌছানোর মত অতিমাত্রায় অসম্ভব।বলা চলে এদের কোনো আদর্শিক কোনো ভিত্তি নাই।
জুলুম,নির্যাতন,ধর্ষন,চাদাবাজি,,হত্যা,ঘূম ,জবর দখল,জালাও পড়াও নিয়ে বেতি ব্যস্ত।
***চাদাবাজি:> এই অভিশপ্ত ছাত্র সংগঠনের প্রধান কাজ হচ্ছে চাদাবাজি করা।সাম্প্রতিক সময়ের বিবেচনায় কিছু ঘটনা উল্লেখ্য।
** ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, দুটি ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ(১৬-০২-২০১৩)। ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মোট ৮০ কোটি টাকার নির্মাণকাজ চলছে। ছাত্রলীগ ২ শতাংশ হারে চাঁদা দাবি করছে। ঠিকাদারেরা জানিয়েছেন, চাঁদা না দেওয়ায় তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
** বাণিজ্য মেলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি(১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২) । ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার বাকি দুই সপ্তাহ। তবে এর মধ্যেই মেলাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের চাঁদাবাজিতে বিপাকে পড়েছে মেলা আয়োজক ও পরিচালনা কমিটি। কমিটি ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রতিনিয়তই চাঁদার দাবিতে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে তাদের। “বিভিন্ন সময় মেলায় এসে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হাসান সম্রাট নিজের ভিজিটিং কার্ড দিয়ে ঠিকাদারদের যোগাযোগ করতে বলেছেন। হুমকি দিয়ে ছাত্রলীগের ওই নেতা ব্যবসায়ীদের বলেন, মেলা করতে হলে আগে টাকা ছাড়তে হবে।”
** বুয়েটে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি-ত্রাসের রাজত্বঃ(২১ শে মার্চ, ২০১১) সম্প্রতি কিছু ছাত্র যারা মূলত ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় ক্যাম্পাসে থাকে তারা বুয়েটে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। কেউ স্বনামে এর প্রতিবাদ করার সাহস করতে পারছে না। কিন্তু বিভিন্ন ব্লগে ছদ্মনামে মন্তব্য দেখে বোঝা যায় বুয়েটের বর্তমান অবস্থা কতটা ভয়াবহ। ছাত্রলীগের এই পাপীগ্রুপ বুয়েটের উপাচার্য, ছাত্রকল্যান উপদেষ্টা, উপ-উপাচার্য প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। প্রশ্রয়দাতা হিসেবে বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক মূণাজ আহমেদ নূরের নামও দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন ব্লগে।
**অস্ত্রবাজির পর এবার ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি(১২ই অক্টোবর ২০১২।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত মঙ্গলবার সংঘর্ষে শিবিরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি ও অছাত্র আখেরুজ্জামান তাকিম মাথায় সাদা কাপড় বেঁধে মোটরসাইকেলে নিয়মিত ক্যাম্পাসে মহড়া দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ক্যাডাররা প্রকাশ্যে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন-মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিচ্ছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ী এবং ডাকাতি মামলার আসামি ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত তৌহিদ আল তুহিন ক্যাম্পাসে তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে নিয়মিত শোডাউন করছে। এছাড়া অস্ত্রহাতে সংঘর্ষে জড়িত উপ-পাঠাগার সম্পাদক নাসিম আল সেতু, উপ-দপ্তর সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক ও মাদার বখশ হল শাখার সভাপতি জুবায়ের আহমেদ তাকিম ক্যাম্পাসে দিব্যি ঘোরাফেরা করছে।
** ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি : চট্টগ্রামের হিউম্যান হলার বন্ধ(১৬ই সেপ্টেম্বর ২০১২)। ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হামলা ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরীর একটি সড়কে অনির্দিষ্টকালের জন্য যাত্রীবাহী হিউম্যান হলার চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। গত বৃহস্পতিবার থেকে এ সড়কে বন্ধ রয়েছে হিউম্যান হলার চলাচল।
**জবিতে ক্যান্টিন সমাচার(৯ই জুলাই ২০০৯)। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ক্যান্টিনটি সাত বছর ধরে বন্ধ পড়ে আছে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বছরের শুরুতে ক্যান্টিনটি চালুর উদ্যোগ নিলেও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের চাঁদাবাজির কারণে তা সম্ভব হয়নি।
** রাবি ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি (১৩ই মে ২০১২)। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বর্তমান সরকারের বিগত ১১ মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ব্যাপক চাঁদাবাজি করেছে। এমন কি তাদের নিজস্ব সংগঠনের নেতাকর্মীরাও এর থেকে রেহাই পায়নি।তারা রাবির বিভিন্ন হলের শিার্থীদের কাছ থেকে বিগত ১০ মাসে পায় ৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছেন বলে জানা গেছে।
**পলিটেকনিক সংঘর্ষের নেপথ্যে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি(২৮শে সেপ্টেম্বর ২০১২)। রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের সঙ্গে ট্রাক শ্রমিকদের রাতভর সংঘর্ষের নেপথ্যে ছিল পলিটেকনিক ছাত্রলীগের নেতাদের চাঁদাবাজি। প্রতিদিন ছাত্রলীগের সভাপতি জাকির হোসেনের নেতৃত্বে ট্রাকপ্রতি ১০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হতো। গত বুধবার রাতেও চাঁদা তোলার সময় ট্রাক শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতি লেগে যায়।
** বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, ২০১০ সালের ২১শে মার্চ তারিখে এই কুলাঙ্গার ছাত্রলীগের জনা কয়েক নেতা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ফটকের পূর্ব পাশের ফার্মেসী গুলোতে পুনরায় চাঁদাবাজি পুরোদমে শুরু করেছে। তারা এই সব ফার্মেসীর নিজস্ব ব্রোকারদের অর্থের বিনিময়ে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে প্রবেশ করতে দেয়। চাঁদাবাজির বিষয়টি সম্প্রতি সুস্পষ্ট ভাবে পরিলক্ষিত হয় যখন কতিপয় ইন্টারনী ডাক্তার মেডিসিন ব্রোকারদের হাসপাতালে আনাগোনা বন্ধে এগিয়ে আসে। তখন ইন্টারনী ডাক্তারদের উপর আক্রমণ করে ব্রোকারদের পক্ষ নেয়া ছাত্রলীগ নেতারা। এই বিষয়টি ছাত্রলীগের সুকর্মের একটি ক্ষুদ্র নমুনা মাত্র। তাদের চাঁদাবাজির ঘৃণ্য ঘটনাগুলো লিখে সমাপ্ত করা যাবে না। আজকে তাহলে শুধু চাঁদাবাজিতেই আমার লেখনী সীমাবদ্ধ রাখছি। নিকট ভবিষ্যতে লিখব ছাত্রলীগের মারামারি বিষয়ে। আজকে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার লেখা শেষ করছি।