ঢাকায় বাসের ধাক্কায় দু’জন স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নিরাপদ সড়কের দাবীতে শুরু হওয়া ছাত্র বিক্ষোভ সাড়া তুলেছে পুরো বাংলাদেশে। এরপর প্রথম কয়েকদিন স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও পরবর্তীতে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ হয় ঢাকায়।
নিরপরাধ ছাত্রদের মারধর করছে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও সরকারের মদদপুষ্ট অন্যান্য সন্ত্রাসীরা!
২৯ শে জুলাই এক ড্রাইভারের বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের শিকার হলো বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। ২জন নিহত হওয়ার সংবাদ প্রকাশ করছে মিডিয়াগুলো, প্রকৃতপক্ষে এর সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দেখা যায়। আর, মারাত্মকভাবে আহত হওয়া শিক্ষার্থীদেরও কোন সংবাদ পরে পাওয়া যায়নি। তাদের কী অবস্থা- সে ব্যাপারে কোথাও জানা যায়নি। এদিকে, বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ দাবিতে মাঠে নামে তারা। কিন্তু, দেশের সরকার কি আর এই ধরণের আন্দোলনকে সহ্য করতে পারে!!? তার মনে ভয়, হয়তো এবার গদি উল্টাবে! মোটকথা, সরকারসংশ্লিষ্ট কোন আন্দোলনকেই সহ্য করতে পারে না তারা। তাই, ছাত্রদের উপর লেলিয়ে দিলো তার পুলিশবাহিনীকে, যারা জনতার নিকট এখন বৈধসন্ত্রাসী(!) নামেও পরিচিত; তাদের আরো কিছু নাম রয়েছে, যাক সে কথা এখন বলতে চাই না। আন্দোলন দমনের নামে নিরপরাধ, নিষ্পাপ ছাত্রদেরকে পেটাল পুলিশ। আন্দোলনকে থামিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা করে চলেছে ঐ পুলিশ বাহিনী। প্রথম আলোর বরাতে জানা যায়< পাশাপাশি, আরেকটি দলকে সবসময় সরকারসংশ্লিষ্ট আন্দোলনগুলোতে ভিন্ন ভূমিকায় দেখা যায় সব সময়। সরকারের মদদপুষ্ট সেই সন্ত্রাসী বাহিনীকেও সামান্য ইশারায় চিনতে পারে জনতা। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ইত্যাদি নামের সকল সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা গেছে। না জানি, তাদের ‘প্রভু’ হাসিনার মুখোশ জনতার সম্মুখে উন্মোচিত হয়ে যায়! কিন্তু, তা কি আর বাকি আছে!? জনগণের প্রতি হাসিনা সরকারের নির্মমতা মানুষ প্রত্যক্ষ করছে নিজ চোখে! যাইহোক, সরকারের নির্দেশনা ব্যতীত পুলিশ কারো উপর গুলি চালায় না বলেই জানি। তাহলে ,গতকাল(২রা আগস্ট) নিরপরাধ ছাত্রদের থামাতে যে গুলি চালানো হলো এর নির্দেশও কি কোন দেশের সরকার দিতে পারে! এখন কি তাহলে পুলিশের গুলির উপরই দেশের সরকারের নির্ভরতা! ‘সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলবে, তো গুলি মেরে তার জীবনের স্বাদ মিটিয়ে দেবে ঐ পুলিশ!’- বিগত দিনগুলোতে এই বাক্যটিরই বাস্তবায়ন দেখে এসেছে জনতা। গতকাল ২রা আগস্ট ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিরপরাধ ছাত্রদের উপর পুলিশ এবং সরকারের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের যে হামলা হয়েছে , এমনকি ফটো কিংবা ভিডিও ধারণেও যে বাধা দিয়েছে বৈধসন্ত্রাসীরা! এ হামলার পেছনে উদ্দেশ্যে কি এই নয় যে, মাজলুমদের মুখকে বন্ধ করে দেওয়া!
এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রতি সমবেদনা জানানোর পরিবর্তে শাজাহান খান নামের এক মন্ত্রীর নিষ্ঠুর হাসি জনতার হৃদয়কে ক্রুদ্ধ করেছে, বিশ্লেষকদের আলোচনার বস্তুতে পরিণত হয়েছে ঐ হাসি! কিন্তু কেন? কেননা, ঐ মন্ত্রীর নিষ্ঠুর হাসির মাঝে সরকারের একটি বিষয় ফুটে উঠে! যদিও হাসির কারণে ঐ মন্ত্রী পরে ক্ষমা চেয়েছে, কিন্তু এতে কি তার যে চরিত্রটি মানুষের সামনে প্রকাশ হয়ে গেছে তা আর ঢাকা যাবে! তার হাসির পেছনে যে হিংস্রতা লুকিয়ে আছে তা কি জনতা ভুলতে পারবে?! সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী মারা গেছে আর দেশের মন্ত্রী হাসছে! এই ধরণের মন্ত্রীদের কাছ থেকে দেশের মানুষ কী করে তাদের অধিকার পাওয়ার আশা করতে পারে? কী করে এরকম সরকার জনগণের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে বলে দাবি করে!? যারা জাতির রক্ত দেখে খুশিতে হাসতে পারে, নিজ জাতির উপর গণহত্যা চালানোও কি তাদের দ্বারা অসম্ভব কিছু!! বরং, তারও নজির আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি! দেখেছি সত্যের পথে, ন্যায়ের পক্ষে যারাই সোচ্চার হয়েছে, তাদেরকে দমন করতে গুলি চলেছে বুকে, মাথায়! নিরপরাধ লোকদেরকে পুলিশের পায়ের নিচে পিষ্ট হতে দেখেছি! কিন্তু, জনতা কি নির্বাক হয়ে থাকবে!? হত্যাকালীন সময়েই কি কেবল অপরাধ থাকে! হত্যার পর কি হত্যাকারী নিরপরাধ হয়ে যায়?!!
সহপাঠীদের মৃত্যুতে শোকাহত কিন্তু সংঘবদ্ধ দায়িত্বশীল একটি জাতিকে দেখার পর, মনে হচ্ছে জুলুমের দিন ফুরিয়ে আসছে! জালিমের কবল থেকে নির্যাতিতদের মুক্তির দিন ফিরে আসছে!