জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অল পার্সনস ফ্রম এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স ২০০৬ অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় অনুমোদন, সাহায্য অথবা মৌন সম্মতিতে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার, বিনা বিচারে আটক, অপহরণ অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ করা এবং আইনি রক্ষাকবচের বাইরে ওই ব্যক্তির নিয়তি বা অবস্থানের তথ্য গোপন রাখা হলে ধরে নিতে হবে ওই ব্যক্তি গুম হয়েছেন।
বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোপন আদালত : ২০১৩ সাল থেকে শত শত মানুষকে গোপন স্থানে আটকে রেখেছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জানিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। যাদের মধ্যে কয়েকজন বিরোধী নেতাও রয়েছেন। ৮২ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে অন্তত ৯০ জনের তথ্য রয়েছে, যাদের শুধুমাত্র ২০১৬ সালেই গুম করা হয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগকে এক সপ্তাহ বা একমাস গোপন স্থানে আটকে রাখার পর আদালতে হাজির করা হয়। এ রকম আটক ২১ জনকে পরে হত্যা করা হয়েছে আর ৯ জনের কোন তথ্যই আর জানা যায়নি। এই ৯০ জনের তালিকায় মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া ৩ বিরোধী নেতার তিন সন্তান রয়েছে, যাদের একজন ৬ মাস পরে ফিরে এসেছেন। বাকি দু’জনের এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনটিতে বিএনপির ১৯ জন কর্মীর তথ্য রয়েছে, যাদের ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের পূর্বে বিভিন্ন এলাকা থেকে তুলে নেয়া হয়। সবচে’ দু’টি সংস্থার প্রতি বেশি অভিযোগ, তারা হল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি)। এ বছর ২০১৭ সালের প্রথম পাঁচ মাসে এরকম ৪৮ জন নিখোঁজ হয়েছেন।
একটি সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে হলে ঠিক কত মানুষকে অদৃশ্য হয়ে যেতে হয়, তার মূল্য দিতে হয়? বাংলাদেশে প্রতিটি সরকারের শাসনামলে এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। আমরা নীরব থাকতে পারি না। বিশেষ করে বাংলাদেশে র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়নের বিচার বর্হিভূত ক্ষমতার অপপ্রয়োগ যে কোন সময়ের থেকে মাত্রা ছাড়িয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেছেন, ”মানুষজনকে আটক করে তারা দোষী না নির্দোষ নির্ণয় করা, শাস্তি নির্ধারণ করা, এমনকি তারা বেঁচে থাকবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাও যেন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের যেন এই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।”
এভাবে যদি গোপন আদালতে অপরাধ নির্ধারণ করে বিচারবর্হিভূত খুন, গুম করা হয় তাহলে প্রচলিত আদালত ও বিচারব্যবস্থা থাকার কি দরকার? সংবিধান কি করছে? বিচারকরা কি করছেন? আইন-আদালত কি শুধু চুরি আর জমিজমার বিচারের জন্য বরাদ্দ? অর্থ, ক্ষমতা ও রাজনৈতিক কারণে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর নিজের দেশের মানুষের উপর এমন নিপীড়ন একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চালাতে দেয়া যেতে পারেনা। অনেক পরিবার যেমন তাদের প্রিয়জন হারাচ্ছে, কেউ কেউ ভয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, এ ধরনের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা যেমন প্রত্যক্ষভাবে ঘটছে তেমনি সমগ্র সমাজে এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী। মানুষ ভয়ের পরিবেশের মধ্যে বাস করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। এ অভ্যস্ত হয়ে পড়াটা মানুষকে মানসিকভাবে পঙ্গু করে দিচ্ছে।
জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চালিয়ে আবার তাদের গোপন কারাগারে নিক্ষেপ করে দেয়া হচ্ছে। গুম-খুন করে নিজ দেশের মানুষকে গোপন আদালতের বিচারে দীর্ঘদিন আটক রাখা নিজ দেশ ও মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া কিছু নয়। একটি নিরাপদ-সুন্দর-শৃঙখলাবদ্ধ সমাজ গঠন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অঙ্গীকার হওয়া উচিত। এবং সেজন্য দীর্ঘদিন সমাজের ভেতরে প্রবেশ করে কাজ করতে হয়। ব্যক্তি উদ্যোগে, প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে অনেকের সেরকম কাজ নানা ক্ষেত্রে বহাল আছে। কিন্তু রাষ্ট্র যখন মানবিক হয়ে এগিয়ে আসে তখন মানবিক রাষ্ট্র গঠনের কাজ মানবিক মূল্যবোধের দেশ নির্মাণের কাজ তরান্বিত হয়। যদি তার উল্টো হয় তার মানে হল ক্ষমতাসীনরা বা সরকার রাষ্ট্রকে বা দেশকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করছে। আর তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ স্বীকার হচ্ছে মানুষ।
বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোপন আদালত, গোপন ডিটেনশন সেন্টারগুলো বন্ধ হোক। হারিয়ে যাওয়াদের ফিরিয়ে এনে তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। রাষ্ট্র মানবিক হয়ে উঠে মানুষের জীবনের মূল্য দিতে শিখুক। একটি প্রাaaণও হারিয়ে গেলে তা আর অন্ধকারের উৎস থেকে ফেরে না, যতদিন সে প্রাণটি বেঁচে থাকবে সুন্দর-নিরাপদ একটি সমাজে বাঁচুক।
নয়। একটি নিরাপদ-সুন্দর-শৃঙখলাবদ্ধ সমাজ গঠন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অঙ্গীকার হওয়া উচিত। এবং সেজন্য দীর্ঘদিন সমাজের ভেতরে প্রবেশ করে কাজ করতে হয়। ব্যক্তি উদ্যোগে, প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে অনেকের সেরকম কাজ নানা ক্ষেত্রে বহাল আছে। কিন্তু রাষ্ট্র যখন মানবিক হয়ে এগিয়ে আসে তখন মানবিক রাষ্ট্র গঠনের কাজ মানবিক মূল্যবোধের দেশ নির্মাণের কাজ তরান্বিত হয়। যদি তার উল্টো হয় তার মানে হল ক্ষমতাসীনরা বা সরকার রাষ্ট্রকে বা দেশকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করছে। আর তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ স্বীকার হচ্ছে মানুষ।
বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোপন আদালত, গোপন ডিটেনশন সেন্টারগুলো বন্ধ হোক। হারিয়ে যাওয়াদের ফিরিয়ে এনে তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। রাষ্ট্র মানবিক হয়ে উঠে মানুষের জীবনের মূল্য দিতে শিখুক। একটি প্রাaaণও হারিয়ে গেলে তা আর অন্ধকারের উৎস থেকে ফেরে না, যতদিন সে প্রাণটি বেঁচে থাকবে সুন্দর-নিরাপদ একটি সমাজে বাঁচুক।