একটা পোস্টের লিঙ্ক ধরে লেখালেখি করার মতো ‘লিখালিখি’ প্ল্যাটফর্মটার সন্ধান পেয়ে যাই। যে লেখাটা পড়ার জন্য এসেছিলাম সেটা পড়ার পর স্বভাবসুলভ ভাবে এই সাইটটার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ঢু মারতে থাকি। তবে অবাক হয়ে যাই ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ক্যাটাগরিতে এখন পর্যন্ত কোন লেখা না দেখে। তাই অন্তত এই ক্যাটাগরিতে কিছু লেখা দেওয়ার জন্য সাথে সাথেই রেজিস্টার করলাম।
দেশের আর সকল জায়গার মত মুন্সিগঞ্জের বীর জনতাও পরমধন মাতৃভূমি মুক্তির আন্দোলনে সামিল হলো সেই যুদ্ধে। ২৫ মার্চ কাল রাতে পাক হায়েনারা রাজধানী ঢাকায় বর্বরোচিত, পৈশাচিক হামলা চালায়। তখন থেকেই রাজধানী ঢাকার সঙ্গে মুন্সীগঞ্জেও আন্দোলন শুরু হয়। জঙ্গী মিছিলে ফেটে পড়ে মুন্সীগঞ্জের ছাত্র জনতা। ২৭ মার্চ এম,পি,এ জামালউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-জনতা সিরাজদিখান থানা পুলিশ ক্যাম্পের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। ২৯ মার্চ হরগঙ্গা কলেজের তৎকালীন শহীদ মিনারে মুন্সিগঞ্জের মুক্তিপাগল ছাত্র-জনতার সম্মুখে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। একই দিন ছাত্র-জনতা মুন্সিগঞ্জের অস্ত্রগার থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। ছাত্র-জনতা-কৃষক-শ্রমিক সবাই যুদ্ধের প্রস্ত্ততি হিসেবে সাময়িক প্রশিক্ষণ শুরু করে। আপামর জনতা জেলার সর্বত্র নিয়মিত মহড়া ও টহল দিতে থাকে এবং নদীর পাড়ে স্থায়ী পাহারার ব্যবস্থা করে যাতে পাকসেনা বা তাদের দোসর-রা মুন্সিগঞ্জে প্রবেশ করতে না পারে। মুন্সিগঞ্জের সকল বড় সড়কের পাড়ে ঢাকা থেকে আগত পথচারীদের সেবায় সাহায্য কেন্দ্র খুলে তাদের পানি, শরবত, ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করে। মুক্তার পুর ফেরি ঘাটেই অস্থায়িভাবে তৈরি করা হয় চুলা। সেখানে সার্বক্ষণিক রুটি বানানো হতো, খই-মুড়ি-গুর-পানি নিয়ে মুন্সিগঞ্জবাসী ঢাকা থেকে প্রান ভয়ে ছুটে আসা মানুষদের জন্য। ছোট বড় যার যেমন নৌকা ছিল তা নিয়ে সবাই চলে এসেছিলো ঢাকা থেকে আগত পথচারীদের নদী পারাপারে সাহায্য করার জন্য।
১৯৭১ সালের ২৫ সে মার্চ ভয়াল কালোরাত্রির অধ্যায় শেষে ইয়াহিয়া-টিক্কার পাক হানাদার বাহিনী মুন্সিগঞ্জ শহর অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। রাজধানী ঢাকার অতি সন্নিকটে মুন্সিগঞ্জ নদীবেষ্টিত একটি ছোট্ট শহর হওয়ায় এর গুরুত্ব ছিল হানাদার বাহিনীর কাছে সর্বাপেক্ষা বেশি। তাই রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকাকে কিছুতেই বেদখল রাখতে চায়নি হানাদার বাহিনী। তাই মুন্সীগেঞ্জ প্রবেশের ক্ষেত্রে তারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করে। এ ছাড়াও আরো একটি বিশেষ কারণে মুন্সীগঞ্জের প্রতি পাক হানাদাররা ক্ষিপ্ত ছিল। পাক বাহিনীর কুখ্যাত দালাল পাকিস্তান নেজামে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা আল-মাদানী পালিয়ে যাওয়ার সময় আবদুল্লাহপুরে এক জনসভায় মুন্সীগঞ্জের জনসাধারণের হাতে গণপিটুনিতে নিহত হয়। তাই ঢাকার পশ্চাদভূমি মুন্সীগঞ্জের প্রতি তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল। যার পরিণতিতে পাক বাহিনী মুন্সীগঞ্জে প্রবেশের শুরু থেকেই এই এলাকায় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংস এবং অগ্নিকান্ড ঘটাতে শুরু করে। এদিকে পাকসেনারা যাতে সহজে মুন্সীগঞ্জে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রবেশস্থলে (ধলেশ্বরী তীরবর্তী এলাকায়) বাংকার তৈরী করে পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিল মুক্তিবাহিনী। মুন্সীগঞ্জ এর সম্মুখভাগ নারায়ণগঞ্জে প্রবেশের সময়ও পাকবাহিনীর সঙ্গে তাদের যুদ্ধ হয়। পরবর্তী সময়ে মে মাসে প্রথম দিকে অতর্কিত পাকসেনারা মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানায় প্রবেশ করে। গজারিয়ায় থানায় ঢুকেই পাকসেনারা ব্যাপক হত্যা, ধ্বংস এবং অগ্নিসংযোগ শুরু করে।
পাকসেনারা ৮ মে রাতে জেলার গজারিয়া থানায় সর্বপ্রথম প্রবেশ করে। পরদিন ৯ মে কাক ডাকা ভোরে গজারিয়া থানার গোসাইচরে পাকসেনারা নির্বিচারে ৩৫০-৩৬০ জন নিরীহ বাঙালী জেলেকে কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই গানবোট নিয়ে ঘেরাও করে গুলি করে হত্যা করে। এ হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমেই পাকসেনারা মুন্সীগঞ্জে শহরে অনুপ্রবেশ করে। এটাই ছিলো মুন্সিগঞ্জের সবচাইতে বড় ও পৈশাচিক গণহত্যা। ১৯৭১ সালের ৯ মে একজন মেজরের নেতৃত্বে ২০০ জন হানাদার বাহিনীর সদস্য মুন্সিগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে হরগঙ্গা কলেজে ক্যাম্প স্থাপন করে। তারা মুন্সেফ কোর্ট বিল্ডিং (যেটি বর্তমানে পুরাতন কাচারি) এ কমান্ড কাউন্সিল অফিস স্থাপন করে। হানাদার বাহিনী প্রথম দিকটায় শহর এলাকায় টহল ও সংবাদ সংগ্রহ কাজে তাদের অভিযান সীমাবদ্ধ রাখে। পরে পাক হানাদার বাহিনী মুন্সিগঞ্জ জেলার সর্বত্র নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও ধর্ষণ কাজে লিপ্ত হয়ে হিংস্র দানবের ভূমিকায় অবর্তীণ হয়। ১৪ মে শহরসংলগ্ন কেওয়ার চৌধুরী বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনিল মূখার্জি, কেদার চৌধুরী, ডাঃ সুরেন্দ্র সাহা, দ্বিজেন্দ্র সাহা, বাদল ভট্টাচার্জ্য, শচীন্দ্র মুখার্জী, সুনীল মুখার্জীসহ ১৭জনকে গভীর রাতে ঘেরাও করে ধরে এনে লোহার পুল সংলগ্ন খালের পাড়ে সারিবদ্ধভাবে দাড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। বেশ কিছুদিন আটকে রেখে পরে নির্মমভাবে হত্যা করে সর্বজন শ্রদ্ধেয় আইনজীবী মন্মথ মুখার্জিকে। হানাদার বাহিনী চৌধুরী বাড়ি এলাকায় হিন্দু পল্লীতে প্রবেশ করে ৫০ জন মহিলাকে ধর্ষণ করে ও ১৭ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। ধলাগাঁও হিন্দু পাড়ায় ১০ জন হিন্দু মহিলাকে ধর্ষণ করে নর পিশাচের দল। হরগঙ্গা কলেজের নিকট ডাঃ কাদিরের বাড়ি, বকুলের বাড়ি, রওশন ভিলা পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। বাউশিয়াসহ গজারিয়া উপজেলার চর ও জেলেপল্লীতে পাকবাহিনী প্রবেশ করে ২০০ জন নিরীহ লোককে হত্যা, গণহারে নারী ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে ভয়ঙ্কর পরিস্তিতির সৃষ্টি করে। আব্দুল্লাহপুর, কুমারভোগ, পালগাঁও দেওভোগ, বাউশিয়া, হাসাড়াসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রতিদিন ১০/১৫ জনকে ধরে এনে মুন্সেফ কোর্টের বটগাছে ঝুলিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হত।
যখন চতুর্দিক থেকে হত্যা-নির্যাতন, ধর্ষণ ও অগ্নি সংযোগের খবর আসতে থাকে তখন একদিকে যেমন শহর এলাকার নিরীহ জনগণ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দিগ্বিদিক পালাতে শুরু করে। অন্যদিকে মুক্তি পাগল কিছু ছাত্র-যুবক স্বাধীনতার পক্ষে মুক্তিযুদ্ধে যাবার প্রস্ত্ততি শুরু করে। গ্রাম-গঞ্জ থেকে শহরে গোপনে সংবাদ আসে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প খোলা হয়েছে। তৎকালীন বিএলএফ এর ঢাকা বিভাগের প্রধান জনাব মোঃ মহিউদ্দিন,আনিস, মোহাম্মদ হোসেন বাবুল, কলিমুল্লাহ, ওলিউল্লাহ, রফিক, তানেস, রহমান মিজি, জালাল সরদার, হারিস পাইক, সিরাজ পাইক, ফিরোজ, আনোয়ার, সায়েব আলী, শফি মিজিসহ আরও অনেক যুবক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ত্রিপুরার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। তখন অনেক তরুণ যুবকরাই যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য মনস্থির করল। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়াল কিভাবে তারা ত্রিপুরা যাবে সেই পথ সম্পর্কে অজ্ঞতা। আর তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসলো চরকেওয়ারের আকবর আলী নামের একজন প্রভাবশালী ব্যাক্তি। আকবর সাহেব নামে যাকে সবাই এক নামে চিনতো। আকবর সাহেব তার দূর সম্পর্কের ভাতিজা আহসান উল্লাহ কে সাথে নিয়ে ছয়-সাত জনের একটি দল গঠন করলেন যাদের একমাত্র কাজ ছিল মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ইচ্ছুক লোকদের পথ দেখানো। আকবর সাহেব ছাড়া এই দলের আর কারো বয়সই বিশ-বাইশ এর বেশি হবেনা। পরবর্তিতে এই দলটি ট্রেইনিং ফেরত মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। কয়েক বছর আগে আকবর সাহেব মারা গেলে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় তাঁর নিজগ্রাম টরকীতে। ভারতের দিকে রওনা দেয়া যুবকরা প্রথমে গজারিয়া হতে লঞ্চযোগে রামচন্দ্রপুর বাজার গাগুটিয়া হয়ে পায়ে হেঁটে ও ডিঙ্গি নৌকায় কোম্পানীগঞ্জ বাজারে পৌঁছে। পরবর্তীতে কুমিল্লা জেলার সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যে প্রবেশ করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবিরে মুক্তিযোদ্ধার খাতায় নাম এন্ট্রি করে। ত্রিপুরা রাজ্যের বাগমারা, অম্পিনগর, প্রভৃতি ক্যাম্পে কয়েকশত মুক্তিযোদ্ধাকে রাইফেল, এসএলআর, হ্যান্ড গ্রেনেড, মাইন, রকেট লান্সার ও ব্রিজভাঙ্গা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মেলাগর ইয়ুথ ক্যাম্প থেকে তাদের অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করা হয়।
বর্ষা মৌসুমের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধরা বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে ত্রিপুরা হতে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মুন্সিগঞ্জ ২ নং সেক্টর ঢাকা-কুমিল্লা জোনের অধীনে ছিল। ত্রিপুরা রাজ্যে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় জনগনের সহায়তায় মুন্সিগঞ্জের চিতলিয়া, ঝাপটা, হাসাড়া, বায়োকান্দি, ফুলতলা, গজারকান্দি(বর্তমান চরকেওয়ার) পানাম, মনিয়াড়ি, বাঘিয়ার বাজার ও পুলঘাটা প্রভৃতি স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে। প্রতিটি এলাকায় স্থানীয় কিছু যুবক ও ছাত্রকে ক্যাম্প থেকে ১৫-২০ দিনের গেরিলা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এভাবে সমগ্র জেলায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রাথমিক অবস্থায় ৫০০ জনে উপনীত হয়। ত্রিপুরা হতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা অত্যন্ত বিচক্ষণ ও চৌকুষ ছিল। ফলশ্রুতিতে অপারেশন শুরুর পূর্বে তারা সমগ্র জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান নিয়ে হানাদার বাহিনীর অবস্থান ও শক্তি সম্পর্কে অতি গোপনে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে।
মুক্তিযোদ্ধারা সর্বপ্রথম ১১ আগষ্ট শ্রীনগর থানায় পাকসেনাদের উপর আক্রমণ করে এবং তুমুল যুদ্ধের পর থানা দখল করে নেয়। ১৩ আগস্ট আবদুল্লাহপুর বাজারে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার-শান্তিকমিটির সদস্যদের উপর এক সফল অপারেশন পরিচালনা করে। জেলার অন্যতম স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তান জমিয়তে নিজাম ও ওলেমা পার্টির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোস্তফা আল মাদানী কে পিস কমিটির সভা ও কর্ম পরিকল্পনার সময় গুলি করে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা ১৪ আগস্ট লৌহজং থানা আক্রমণ করে দখল করে নেয়। ১ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযান পরিচালনা করে মুন্সিগঞ্জ শহরের শান্তি কমিটির কার্যালয়ে। ঐ অভিযানে রেজিয়া বেগম নামে কোর্টগাঁও এর একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা সহযোগিতা প্রদান করে। শান্তি কমিটির এই গুরুত্বপূর্ণ সভার দিন নির্দেশনায় ছিল মুন্সিগঞ্জের পক্ষে পাকবাহিনীকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতাকারী এ্যাডভোকেট ইদ্রিস আলী। অপারেশনে ইদ্রিস আলী বেচে গেলেও শহীদ হন দেওভোগের দুদু মিয়া।
সেপ্টেম্বর মাসে বাড়ৈখালীর শিকরামপুরহাটে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর শতাধিক সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমনে পাকসেনারা কুল কিনারা না পেয়ে নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে। পাকসৈন্য বোঝাই ৩টি গানবোট নবাবগঞ্জ থেকে শিকরামপুর পৌছলে মুক্তিযোদ্ধারা এ হামলা চালায়। পাকসৈন্যদের ৩টি গানবোটই নদীতে তলিয়ে যায়। এ যুদ্ধে সকল পাকসৈন্য নিহত হয়। এ যুদ্ধে বিজয়ের ফলে মুন্সীগঞ্জের মুক্তি পাগল জনতা মুক্তির নেশায় মত্ত হয়ে উঠে। এ যুদ্ধে সফল নেতৃত্ব দেন সার্জেন্ট ওমর। ভরা বর্ষা মৌসুমে নদী ও খাল বেষ্টিত মুন্সিগঞ্জের সকল জলপথ গেরিলা যুদ্ধের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হয়ে উঠে। মুক্তিযোদ্ধারা বুঝতে পারে যে, এখনই অপারেশন শুরুর উপযুক্ত সময়। ত্রিপুরা থেকে ফ্লাইট সার্জন গোলাম মর্তুজার নিকট অপারেশন শুরুর গোপন সংবাদ চলে আসে। আব্দুল্লাপুর বাজারে পাক-হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। মুন্সিগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম অপারেশন এই আব্দুল্লাপুর বাজার থেকে শুরু হয়। ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে ফ্লাইট সার্জন গোলাম মর্তুজা এক বৃষ্টির রাতে আব্দুল্লাহপুর বাজারে পাক-হানাদার বাহিনীর উপর আকস্মাৎ ঝাঁপিয়ে পড়েন। উভয় পক্ষে ২ ঘন্টা গুলি বিনিময়ের পর প্রথম দিকের অপারেশন ব্যর্থ হয়। এরপর ফ্লাইট সার্জন গোলাম মর্তুজা ৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সময়ে অবশিষ্ট ৭ জনকে আব্দুল্লাপুর বাজারে রেখে যান। ৩ দিন পর মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় আব্দুল্লাপুর ক্যাম্পে গেরিলা আক্রমণ করে। হানাদার বাহিনী পরাস্ত হয়ে ক্যাম্প ছেড়ে পলায়ন করে। এই যুদ্ধে ২জন পাক হানাদার বাহিনী ও ১১ জন রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ত্রিপুরা চলে যায়। অন্যদিকে শ্রীনগরে সার্জেন্ট গোলাম মর্তুজাসহ অন্য ছয় জন মুক্তিযোদ্ধার ভাগ্যে কি ঘটেছিল সে সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য আজও পাওয়া যায়নি। অসমর্থিত সূত্রে জানা যায় যে, পদ্মা তীরের গ্রামবাসী ঐ সময় ৬/৭ সাত জন মানুষের হাত-পা বাঁধা লাশ নদীতে ভেসে যেতে দেখে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনাদের একটি জোড় লড়াই হয় গোয়ালী মান্দ্রায়। জেলার অভ্যন্তরে পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী নদীর সর্বত্র পাকসেনাদের গানবোট ঘিরে ছিল। এ সময় গোয়ালী মান্দ্রায় প্রকাশ্যে ৬ জন রাজাকারকে হত্যা করে। এ ঘটনা পাকসৈন্যদের ব্যাপক নাড়া দেয়। মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৩০০ পাক সৈন্য গোয়ালী মান্দ্রার উদ্দেশ্য রওনা দেয়। খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আগে থেকেই আক্রমনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। পাকসৈন্যরা নিদির্ষ্ট স্থানে পৌছামাত্র মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে তাদের উপর আক্রমণ চালায়। টানা ৩৮ ঘন্টা উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে শত্রুপক্ষের দুটি গানবোটই নদীতে তলিয়ে যায়। এতে একজন পাক সুবেদারসহ ৭৫ জন সৈন্যর পানিতে ডুবে মৃত্যু ঘটে। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বহু অস্ত্র ও গোলাবার্বদ চলে আসে। ২৪ সেপ্টেম্বর ঢালী মোয়াজ্জেম হোসেন, শহীদুল আলম সাঈদ, ইকবাল হোসেন সেন্টুসহ বেশকিছু মুক্তিযোদ্ধা গোয়ালীমান্দ্রায় সফল অপারেশন চালিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাকসেনা খতম করে। একই সময়ে গালিমপুরের মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনার সঙে যুদ্ধে বেশ কিছু পাকসেনাদের খতম করে। ২৫ সেপ্টেম্বর সিরাজদিখানের সৈয়দপুরে লঞ্চঘাটে পাকবাহীনির সংগে ফ্লাইট সার্জেন্ট ওমর গ্রুপের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে পাক বাহিনীর ৯ জন নিহত হয়। সেপ্টেম্বরেই মুক্তিযোদ্ধারা অভিযান চালিয়ে হত্যা করে সিরাজদিখানের দালাল হেড মাস্টার হাবিবুর ও হবি মেম্বারকে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মিরাকাদিমে রাজাকার ক্যাম্পে অপারেশন পরিচালনা করেন ক্যাপ্টেন মাহফুজুর রহমান। এতে বেশকিছু রাজাকার হতাহত হয়।
বর্ষা মৌসুমে মুক্তিযোদ্ধারা ধলাগাঁও, সাধুর-আখড়া, টঙ্গীবাড়ী, প্রভৃতি স্থানে আরও কয়েকটি ছোট অপারেশন করে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা সন্ধ্যার পরপরই ধলাগাঁও বাজারে প্রবেশ করে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা সম্পূর্ণ গেরিলা কায়দায় ক্যাম্পে দুই ঘন্টা অপারেশণ করে। ৩ জন পাক-হানাদার এই হামলায় নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা অপারেশন শেষে অক্ষত অবস্থায় চলে যেতে সক্ষম হয়। সাধুর আখড়া নামক স্থানের পার্শ্ববর্তী ধানক্ষেত ও রাস্তার পার্শ্বে মুক্তিযোদ্ধারা ওঁৎ পেতে বসে থাকে। টহল শেষে ফেরৎ যাবার সময় ৩ জন পাক সেনাকে মুক্তিযোদ্ধারা ধরে ফেলে এবং পরবর্তীতে এদের খতম করে মেঘনা নদীতে ফেলে দেয়। সাধুর আখড়াতে প্রায় সময়ই এরূপ অপারেশন হতো। ফলশ্রুতিতে পাকসেনারা সেখানে সহসা টহল দিতে সাহস পেতনা। মুক্তিযোদ্ধার ২০/২৫ জনের একটি দল কোষা নৌকায় করে টঙ্গীবাড়ীর রাস্তার উপর পৌঁছে হঠাৎ করে রাজাকারদের চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা ৩ জন রাজাকারকে ধরে ও তাদের অস্ত্রশস্ত্র কেড়ে নেয়, অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
শরৎকালে একসন্ধ্যা বেলায় মুক্তিযোদ্ধারা নয়াগাঁও, শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ে গ্রুপ লিডার আঃ রহমানের নেতৃত্বে পাকসেনাদের উপর আক্রমন করে। মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা কায়দায় ১০০ জন পাকসেনার সাথে ৩ ঘন্টাব্যাপী যুদ্ধে লিপ্ত হয়। রাত ৯ টার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ৫টি গানবোটে করে হানাদার বাহিনীর একটা বিরাট দল নয়াগাঁও অভিমুখে দ্রুত ছুটে আসতে থাকে। অবস্থা সঙ্কটজনক হতে পারে বিবেচনা করে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং পূর্বদিকে সরে এসে গজারিয়ার বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় নেয়। এই যুদ্ধে ২৫ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।
১ নভেম্বর গজারিয়ার ভাটিবালাকি গ্রামে অপারেশন চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা জেলার অন্যতম স্বাধীনতা বিরোধী মুসলিম লীগ নেতা আফসার উদ্দিন ও তার ভাতিজাকে হত্যা করে। ৪ নভেম্বর মুক্তিসেনারা সফল আক্রমণ করে টঙ্গীবাড়ী থানা দখল করে নেয়। ৮ই নভেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজদিখান থানা আক্রমণ করে, সে অভিযান সফল হয়নি তবে ১৯ নভেম্বর সফল আক্রমণে পাক বাহিনী সিরাজদিখানে আত্মসমর্পন করে। অক্টোবরের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধারা মুন্সিগঞ্জ শহরে একরাতের বেলায় পাকসেনাদের ক্যাম্পে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা ৫ থেকে ৬ টি দলে ভিভক্ত হয়ে সদর থানায় হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে আঘাত হানে। গভীর রাত পর্যন্ত আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় ফিরে যেতে সক্ষম হয়। ২৭ রমজান শবেকদরের রাতে (১৬ নভেম্বর) ১১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ঐক্যবদ্ধভাবে একটি বিশেষ অপারেশন পরিচালনা করেন। কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে পরিকল্পনামত আক্রমণ চালিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই মুন্সিগঞ্জ থানাসহ সম্পূর্ণ শহর দখল করে নেয়। মুক্তিবাহিনীর এই বিজয় সংবাদ বিবিসিতে প্রেরণ করেছিলেন বিবিসির তৎকালীন ঢাকাস্থ সংবাদদাতা মুন্সিগঞ্জের অন্যতম বুদ্ধিজীবী মনীষী নিজাম উদ্দিন আহমেদ। পরে বাংলাদেশের অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের সাথে তাঁকেও হত্যা করে কুখ্যাত আলবদর বাহিনী। নভেম্বরের শেষদিকে পাক-হানাদার বাহিনী দেশব্যাপী ব্যাপক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে থাকে। মুন্সীগঞ্জের মুক্তিসেনাদের সাথে পাকসেনাদের আর একটি তুমুল যুদ্ধ হয় শহরের অদুরে রতনপুর গ্রামে। এ যুদ্ধে গোটা মুন্সীগঞ্জ এর বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি আঁচ করতে পেরে প্রথমে পাক সৈন্যদের তাদের উপর আক্রমণ করে ধলেশ্বরী নদীতে অবস্থানরত পাকিবাহিনীর গানবোট থেকে গোটা রামের গাঁও পঞ্চসার, মুক্তারপুর এলাকায় পাক নৌবাহিনীর সৈন্যরা মর্টার সেল ছুড়তে থাকে। সমগ্র এলাকা যুদ্ধনগরীতে পরিণত হয়। অবশেষে এ যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর বিমান বহর এসে পড়লে পাক বাহিনী পিছু হটে । এ যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর দোসর ৩ জন রাজাকারসহ ৪ জন পাক সেনা নিহত হয়। মিত্রবাহিনীর হামলায় পাক সেনাদের গানবোট বিধ্বস্ত হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, আকাশবাণী কোলকাতা, বিবিসি, আগরতলা কেন্দ্র থেকে হানাদার বাহিনীর পিছু হটার খবর পরিবেশন করা হয়। মুন্সিগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা দেশের অন্যান্য স্থানের মত হানাদার বাহিনীর উপর সর্বত্র বিক্ষিপ্ত আক্রমণ করতে থাকে। দেশ স্বাধীন হবার ৮ অথবা ১০ দিন পূর্বেই মুক্তিযোদ্ধারা নয়াগাঁও, আব্দুল্লাপুর, রামপাল, কাটাখালি, শীতলক্ষ্যা তীর হয়ে চতুর্দিক থেকে মুন্সিগঞ্জ শহরকে ঘিরে ফেলে। গ্রুপ লিডার কলিমুল্লাহ, তনেস, মিজি, হরিস পাইক, ও ফিরোজের নেতৃত্বে ৬ থেকে ৭ টি দল বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে শহরে প্রবেশ করে থানা ক্যাম্প, লন টেনিস ক্যাম্প, ফায়ার ব্রিগেড ক্যাম্প ও হরগঙ্গা কলেজ ক্যাম্পে থেমে থেমে আক্রমণ করে। অন্যদিকে শীতলক্ষা ওপার থেকেও শহরের পূর্ব-পশ্চিম দিক থেকে হানাদার বাহিনীর উপর ব্যাপক হারে মর্টার সেল নিক্ষেপ করা হয়। পাক হানাদার বাহিনী বিভিন্ন ক্যাম্প ত্যাগ করে দলে দলে ধলেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থান নেয় ঢাকা পালানোর উদ্দেশ্যে। ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখে ধলেশ্বরী নদীর তীর ঘেঁষে এপার ওপার অবস্থানে উভয় পক্ষের মধ্যে সারারাত যুদ্ধ হয়। পাকহানাদার বাহিনী সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত হয়ে ভোর বেলায় ধলেশ্বরী বুড়িগঙ্গা পার হয়ে ঢাকার দিকে পলায়ন করতে থাকে। মুন্সিগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা এদের পিছু ধাওয়া করে ঢাকা শহরের লক্ষ্মীবাজারে অবস্থান নেয়।
১১ ডিসেম্বর ১৯৭১, সকাল বেলায় মুন্সিগঞ্জ শহর শত্রুমুক্ত হয়। হাজার হাজার জনতা তখন গ্রামগঞ্জ থেকে শহরে আসা শুরু করে। অন্যদিকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শহরের সর্বশ্রেনীর জনতা শত্রুমুক্ত হবার সংবাদে রাস্তায় বের হয়ে আসে। শহরবাসী বিভিন্ন শত্রু ক্যাম্পে ও নদীর চরে আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পায়। এছাড়া লন টেনিস মাঠের ক্যাম্পে একজন পাকসেনার লাশ, একটা কাটা পা ও লোহার টুপি পড়ে থাকতে দেখে। ফায়ার ব্রিগেড অফিসের দোতলা থেকে একজন রাজাকার লাফ দিয়ে পালানোর সময় জনতা তাকে ধরে ফেলে এবং হাত-পা বেঁধে ধলেশ্বরী নদীতে নিক্ষেপ করে। সর্বশেষ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ শত্রু মুক্ত হয়। দেশ স্বাধীন হয়েছে এই সংবাদ শহরের পাড়ায়-পাড়ায়, গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। স্বাধীন দেশের হাজার হাজার জনতা আবেগ, উৎকন্ঠা ও আনন্দের মধ্যে দিয়ে মুন্সিগঞ্জ শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাগত জানায়, ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে আলিঙ্গন করতে থাকে।
অবশেষে আমরা শত্রুমুক্ত হলাম। এ অর্জন জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন, এ অর্জনের ইতিহাস অবিনশ্বর, এ ইতিহাসের রূপকেরা জাতির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান। আজ এমন বিশেষ দিনে জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হাজার সালাম।
বিঃদ্রঃ এটা ইতিহাসের খুদ্রাতিরিক্ত খুদ্র ভগ্নাংশ, এখানে হয়তো অনেক কিছুই আছে যা আপনি জানতেন না, আবার অনেক কিছুই নেই যা আপনি জানেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একটা ব্যাপক ব্যাপার। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সাড়ে সাত কোটি আলাদা আলাদা ঘটনা ছিল। সেই সব মিলিয়েই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। আপনারাও আপনাদের জানা কথাগুলো শেয়ার করে সমৃদ্ধ করুন আমাদের ইতিহাসকে।
কৃতজ্ঞতাঃ
১. বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর সাহেব(কয়েক বছর আগে উনি শাহাদাত বরন করেছেন) এবং আমার বাবাকে। উনারা দু’জন মুন্সিগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে আমাকে অনেক গল্প শুনিয়েছেন। যার অনেক কিছুই এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
২. মুন্সিগঞ্জ সরকারী গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ানকে। প্রয়োজনীয় তথ্য না পাওয়াতে উনি আমাকে নারায়ণগঞ্জ সরকারী গ্রন্থাগারে খোঁজ নিতে উপদেশ দিয়েছিলেন।
৩. নারায়ণগঞ্জ সরকারী গ্রন্থাগারের সহকারি লাইব্রেরিয়ান ম্যাডামকে। আমি উনাদের লাইব্রেরীর মেম্বার না হওয়া সত্ত্বেও শুধু মাত্র বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে আমার মত অপরিচিত একটা ছেলেকে দুইটি বই দুই সপ্তাহের জন্য ধার দিয়েছিলেন।