আজ ৭ মার্চ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, উৎপাদন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির রাজনীতিক, দেশের ভবিষ্যৎ কান্ডারী দেশনায়ক তারেক রহমানের ১০ম কারাবন্দী দিবস।
২০০৭ সালের বিভীষিকাময় সেই কালো রাতেই কোনো ওয়ারেন্ট, মামলা, জিডি এমনকি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই বিতর্কিত সেনা সমর্থিত সরকারের জরুরি বিধিমালায় গ্রেফতার করা হয় সমকালীন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই রাজনীতিককে। গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে নানা কল্পকাহিনী প্রচার করা হলেও দীর্ঘ ৯ বছরে দেশ-বিদেশের রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেও কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তার উপর কি নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয় তার প্রমাণ মেলে আটকের সময় তারেক রহমান নিজে হেঁটে পুলিশের গাড়িতে উঠলে। ৫৫৪ দিন কারাবাসের পর ১২টি মামলায় জামিনে মুক্তির সময়ে তিনি আর বাসায় যেতে পারছিলেন না। জীবন বাঁচাতে পিজি হাসপাতাল থেকে তাকে এখনো উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকতে হচ্ছে।
১/১১ সরকারের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারও রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সারাদেশে শতাধিক মামলা দায়ের করেছে। তার কারাবন্দী দিবস উপলক্ষে আজ বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি পালন করছে। বস্তুত ১/১১-এর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের মূল টার্গেট হন তারেক রহমান। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ও বর্তমান সরকারের ৭ বছরে রাষ্ট্রীয় সর্বশক্তি দিয়ে টাস্কফোর্স, দুদকসহ সকল সংস্থাই দেশে-বিদেশে তন্ন তন্ন করে অনুসন্ধান করেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদা দাবি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তাকে দন্ড দিতে জরুরি অবস্থাকালীন দ্রুত বিচার আইনে দফায় দফায় সংশোধনীও আনা হয়। বর্তমান সরকারের আমলে তাকে একাধিক মামলায় সাজানো আসামি করে দন্ড দিতে বিচারকদের চাপ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সাজানো মামলায় দন্ড না দেয়ায় বিচারককেও হয়রানি করা হচ্ছে।
গ্রেফতারের পর পুলিশ রিমান্ড ও কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে নিষ্ঠুর নির্যাতনের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন এই রাজনীতিক। কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে নির্মম নির্যাতনের মধ্যে একটানা ৫৫৪ দিন বা ১৮ মাস কারাবাসের পর ১২টি মামলায় জামিন পেয়ে ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি পিজি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তি পান। ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহিংসায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নিষ্ঠুর নির্যাতনে জননেতা তারেক রহমানের মেরুদন্ড ভেঙে দেয়ার কারণে মুক্তির পর তিনি হাসপাতালের বিছানা থেকে উঠতে পারছিলেন না। এই অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় এ তরুণ নেতার জীবন এখনও বিপন্ন।
গ্রেফতারের পর থেকে তারেক রহমানের প্রতি সরকারের আচরণ ও মামলাগুলো পর্যালোচনা করলেই দেখা যায় কত নিষ্ঠুরভাবেই বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় একজন নেতাকে মিথ্যা কালিমা লেপন করে রাজনীতি থেকে বিদায় করতে চেয়েছিল। গ্রেফতারের পরদিন ৮ মার্চ কাফরুল থানার ওসি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এক জিডিতে উল্লেখ করেন তিনি নিজে ও দলীয় নেতাকর্মী, বন্ধুবান্ধব, ব্যবসায়িক পার্টনারদের দিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিদেশি টেন্ডার ক্রয়, বিমান মন্ত্রণালয়ের কমিশন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন। তার নিজ ও আত্মীয় স্বজনের নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিপুল অঙ্কের অর্থ জমার প্রাথমিক প্রমাণাদি আছে। জরুরি অবস্থাকালীন সরকারের সকল সংস্থার সহায়তায় তদন্ত শেষে দুদক ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদন দেয়। এতে ব্যাংকস্থিতি হিসেবে ঢাকা ব্যাংকের একাউন্টে ২৮১৬২ টাকা ও এবি ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৬ হাজার ২৯০ টাকার সন্ধান পায়। স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে ১৯৮২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সরকার থেকে পাওয়া ঢাকা ও বগুড়ায় কিছু জমি পায়। এর বাইরে আজ পর্যন্ত কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। অবশ্য ২০০৯ সালের ১৪ এপ্রিল কাফরুল থানায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা জিডির বিষয়ে ওসির ক্ষমা প্রার্থনা ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদনের প্রেক্ষিতে তারেক রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে জিডিটি নথিভুক্ত করা হয়। অব্যাহতি দেয়া হয় দৈনিক দিনকাল সংক্রান্ত মামলা থেকেও। গ্রেফতারের ১৬ ঘণ্টা পর গুলশান থানায় এক কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে ব্যবসায়ী আমিন উদ্দিন চৌধুরী মামলা দায়ের করে। এই মামলায় ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পর তারেক রহমানকে পুলিশের হেফাজতে না দিয়ে অজ্ঞাত স্থানে অজ্ঞাত লোকদের হেফাজতে নিয়ে চোখ বেঁধে বর্বরোচিত কায়দায় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে পরে তিনি আদালতকে অবহিত করেন। জরুরি অবস্থাকালীনই মামলার বাদী আমিন উদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলন এবং স্ট্যাম্পে হলফনামায় দাবি করেন এক বিভীষিকাময় মুহূর্তে যৌথ বাহিনী তাকে আটকিয়ে রেখে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়।
তারেক রহমান তার নিকট কোন সময়ে চাঁদা দাবি করেননি বা তিনি কোথাও এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ করেননি। এভাবে সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৭টি চাঁদা দাবি ও দুদক বাদী হয়ে চারটি মামলা করে। চাঁদা দাবির কোন মামলাতেই সামান্যতম প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রতিটি মামলাতেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বাদীদের কোন অভিযোগ নেই। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১/১১ সরকারের চেয়ে আরো প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে দেশে-বিদেশে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে তল্লাশি করে। দুদক, এনবিআর ছাড়াও সারাদেশের দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ এনে নতুন করে শতাধিক মামলা দায়ের করে। কিন্তু একটি অভিযোগও প্রমাণ করতে পারেনি। তারেক রহমানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, জননেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিটি মিথ্যা মামলাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়েই দায়ের করায় কথিত অভিযোগের একটিও প্রমাণ করতে পারেনি। কথিত অভিযোগের কোনটির সাথেই তারেক রহমান সংম্পৃক্ত ছিলেন না। সরকারের চেষ্টার পাশাপাশি দুদকের কিছু কর্মকর্তার পদোন্নতির জন্য তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক সাজানো অভিযাগপত্র দিচ্ছে। জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করায় অনেকের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। মূলত ১৯৯১ সালের নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির রাজনীতিতে প্রায় নেপথ্যে থেকে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তারেক রহমান। তারই দূরদর্শিতা, অক্লান্ত পরিশ্রম, প্রজ্ঞা ও ক্যারিশমার কারণে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় ২০০১ সালের নির্বাচনে। দীর্ঘদিন দলের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ কাজে নেপথ্যচারীর ভূমিকা পালন করলেও ২০০২ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পান। দলের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে নিয়োগ লাভের পরপরই তারেক রহমান দেশব্যাপী দলের মাঠপর্যায়ের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের সাথে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন। তারেক রহমান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে গভীর সেতুবন্ধন নির্মাণ করতে তৃণমূল সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। এসব সম্মেলনে কর্মীরা দলীয় রাজনীতি ও সংগঠন সম্পর্কে মন খুলে কথা বলেছেন। এর মধ্য দিয়ে একটি সুসংঘবদ্ধ বিএনপি গড়ে ওঠে। তৃণমূল পর্যায়ের এই সভা ও জনসংযোগ কার্যক্রমের ফলে দলের নেতাকর্মীদের তরুণ অংশটির মনোবল অসামান্য বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে তারেক রহমান শুধুমাত্র দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানমন্ত্রীর সন্তানের পরিচিত থেকে বেরিয়ে এসে দলের একজন দক্ষ সংগঠক ও সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে যেভাবে তৃণমূলে দলের শেকড় প্রোথিত করেন তাতে অশুভ রাজনৈতিক শক্তির পায়ের তলা থেকে মাটি সরতে থাকে। ফলে তাতে ষড়যন্ত্রকারীদের গায়ে জ্বালা উঠে। বিএনপি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের দলা পাকানো হয় এবং এই চেষ্টা আজও অব্যাহত আছে।