নিজস্ব প্রতিবেদক: শহীদজিয়াউর রহমানের ৩৯তম শাহাদাত বার্ষিকী আগামী ৩০শে মে ,ইতিহাসের এই মহানায়ক যিনি ১৮কোটি মানুষের কাছেই প্রিয় তাঁর স্মরণে আমি নগন্য কর্মীর কিছু অব্যক্ত কথা,
আজ থেকে কয়েক বছর পূর্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য যখন লন্ডন এসেছিলেন তখন (১/১১ এর পর ম্যাডাম তিন বার লন্ডন আসেন ,২য় বার এর সময়ের) ঘরোয়া সভায় ম্যাডামের সঙ্গে আমরা প্রায় ২৫/৩০ জনের একটি গ্রূপ দেখা করি সেদিনের সেই সাক্ষাৎকারটি তে সিলেক্টেড কয়েকজন মানুষ কথা বলেছিলেন সেটা আগে থেকেই নির্ধারণ করা ছিল ,যাই হউক সেদিন ম্যাডাম খুব প্রাণবন্ত ও ফুরফুরে মেজাজে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছিলেন, একটি কথার প্রেক্ষিতে ম্যাডাম বলেছিলেন যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের লিখা ডায়রি এবং দেশ নিয়ে তাঁর ভাবনা ও রাজনৈতিক চিন্তা চেতনার অনেক কিছুই সেই সব লিখার মধ্যে উঠে এসেছে যা অনেকটাই অপ্রকাশিত কারণ শহীদ জিয়ার সে সব ডায়রি ব্যক্তিগত ,সময়ের প্রয়োজনে এখন সেটা বই আকারে প্রকাশের একটা পরিকল্পনা ম্যাডামের রয়েছে ,কারণ শহীদ জিয়াউর রহমানের নিজের লিখা “একটি জাতির জন্ম ” যখন প্রথম প্রকাশিত হয় তখন তিনি রাজনীতির ধারে কাছেও ছিলেন না ,স্বাধীনতার পর পর দৈনিক বাংলায় সেই লিখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়,
আমারও খুব ইচ্ছা হয় যেন ম্যাডাম বা দেশনায়ক তারেক রহমান শহীদ জিয়াউর রহমানের সেই অপ্রকাশিত ব্যক্তিগত ডায়েরি বা লিখা গুলি প্রকাশ করেন বা প্রকাশ করার জন্য কাউকে নির্দেশ দেন,কারণ অনেক গোলমেলে বিষয় আছে সেগুলি একটি রাজনৈতিক দলের চার দশক পর গোলমেলে থাকার কথা না, যেমন অনেকেই বলেন শহীদ জিয়া জামাত কে রাজনীতি করার অনুমতি দিয়েছেন ১৯৭৯ সালের পার্লামেন্টে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি জামাত নামে কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব ছিলোনা ,সেটা ছিল ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ, একই ভাবে ১৯৭৯ সালের পার্লামেন্টে শেখ সাহেবের সর্বশেষ সংগঠন বাকশাল ও ছিলোনা ছিল পুনর্জন্ম লাভকারী আওয়ামীলীগ ,১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের মাধ্যমে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামীলীগে রূপান্তরিত দলটি ও তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছিলো,সেদিন যদি শহীদ জিয়াউর রহমান বহু দলীয় গণতন্ত্র চালু না করতেন ,যদি রাজনৈতিক দল বিধি জারি না করতেন তাহলে আজকের আওয়ামীলীগ এই নাম নিয়ে ক্ষমতায় আসার কোনো সুযোগ ছিলোনা।এই কথাগুলি পরিষ্কার করে আমাদের কে বলতে হবে , বলতে হবে চারটি সংবাদপত্র রেখে বাকি সবগুলি সংবাদ পত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল শুধু মাত্র মানুষের কণ্ঠ কে দাবায়া রাখতে, যে নেতা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করলেন স্বায়ত্বশাসনের জন্য ৬ দফা পেশ করলেন যার ধারাবাহিকতায় যখন ছাত্র জনতার উত্তাল আবেগের কাছে এক ধরণের নতি স্বীকার করেই সাত ই মার্চের ভাষণে একদিকে বললেন এবারের সংগ্রাম স্বধীনতার সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম কিন্তু মধ্যবিত্তের পাতি বর্জুয়াদের নেতা বিভিন্ন মাধ্যমে পাকিস্তানিদের সমর প্রস্তুতির খবর জানার পর সংলাপ করে কাল ক্ষেপন করে পাকিস্তানিদের সঙ্গে চলে গেলেন অনেকটাই স্বেচ্ছা নির্বাসনে ,এই কারণেই পঁচিশে মার্চ এর ক্র্যাক ডাউনের পর শেখ সাহেবের পুরো পরিবারকে সেনারা নিরাপত্তা দিলো ভাতা দিলো, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানী সেনাদের প্রশংসাও করেন যে সেই সময় তারা খুব ভদ্র আচরণ করেছে বিশেষ করে সজীব ওয়াজেদ জয় সিএমএইচে জন্ম গ্রহণ ও করেন পাকিস্তানী সেনাদের তত্বাবধানে ,কিন্তু জীবনকে বাজি রেখে যারা সেদিন দিক নির্দেশনাহীন জাতি কে পথ দেখালো ,যারা দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য রণাঙ্গণে যুদ্ধ করলো দেশকে স্বাধীন করলো তাদের সেই বিপ্লবের মহানায়ক যিনি সময় সঠিক কাজটি করেছিলেন তিনি আর কেউ নন শহীদ জিয়ার রহমান ,স্বাধীনতার সেই ঘোষণাটি কে মৃতপ্রায় জাতিকে নব উদোম জাগিয়ে দিয়েছিলো ,সমগ্র মুক্তিযুদ্ধে র দুইটি দিক রয়েছে রাজনৈতিক রাজনৌতিক নেতৃত্বের অসহায় আত্মসমর্পনের বিপরীতে বাঙালী তরুণ সেনা অফিসার ও মুক্তিকামী ছাত্র কৃষক মজুরের বৈপ্লবিক সেই স্পৃহা ও আত্মত্যাগের বিনিময়েই আজকের স্বাধীন দেশ
শহীদ জিয়া কে যারা বলেন স্বাধীনতা বিরোধীদের তিনি প্রতিষ্টিত করে গেছেন সেটার মধ্যে এক ধরণের বিভ্রান্তি আছে ,শেখ সাহেব পাকিস্তান এর অবকাঠামোর মধ্যে ৬দফার দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করে ৭০ এর নির্বাচনে জয়লাভ করে পাকিস্তানের ক্ষমতায় বসার যে মেন্ডেট পেলেন সেই ম্যান্ডেট এ কি করে স্বাধীন বাংলাদেশে সরকার গঠন করলেন যেটা শুধুমাত্র আওয়ামীলীগের কেবিনেট ছিল. যদিও তখন মওলানা ভাসানী ,সহ অন্যান্য বাম দল গুলি জাতীয় সরকার গঠনের দাবী জানিয়েছিলো কিন্তু সেই দাবি উপেক্ষিত হয়,এবং শেখ সাহেব শাহ আজিজ কে জেল থেকে বের করে এনে ওআইসি সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের প্রধান করে পাঠান ,তিনি হয়তো উপলব্ধি করে ছিলেন যে বাংলদেশের সেই সব মানুষ যারা এক সময় পাকিস্তান আন্দোলন তাঁর সঙ্গেই করেছিলেন এদের হয়তো ধারণা ছিলোনা যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যাবে যার জন্য পাকিস্তানিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন বা অনেকে যান বাঁচানোর জন্য ও সেই সময় পাকিস্তনিদের পক্ষে কাজ করেছেন,সেই উপলব্ধি থেকে শেখ সাহেব সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন,
শহীদ জিয়াউর রহমান বুঝেছিলেন জাতি কে পক্ষে বিপক্ষে ভাগ করে দেশ কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না তাই তিনিও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ কে পরিচালিত করে গিয়েছেন এবং তিনি যেটা করে গেছেন সেটা হলো জাতির কপাল থেকে ভিক্ষুকের তকমা খোলে ফেলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ,মোটা ভাত মোটা কাপড়ের সংস্থান করে দিয়েছিলেন ,বাংলাদশের অর্থনীতি, মিল কল কারখানা ,গার্মেন্টস সেক্টরের সেই বুনিয়াদ এই মহান মানুষটি টি তৈরি করে গিয়েছেন, সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর সহযোগিতায় দেশ বিরোধী শক্তি যখন আক্রমণ করতে ব্যস্ত ,বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে র পাহাড়ি রা ভারতীয় উস্কানিতে শান্তি বাহিনী গঠন করে অস্থিতিশীল করে তুলছিলো দেশ কে তিনি সেটা কঠোর হস্তে দমন করেছিলেন, রোহিঙ্গা দের সেই সময় পুশ ইন করেছিল মিয়ানমার কিত্নু শহীদ জিয়ার সামরিক তৎপরতায় মিয়ানমার লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায় ,
বাংলাদেশের অস্তিত্ব যারা তখন ও মানতে পারেনি তাদের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী একবার একটি সভা সরওয়ার্দী উদ্যানে করতে চেয়েছিলো তাদের অন্তর্নিহিত উদেশ্য ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে একটা সম্পর্ক রেখে দেশ পরিচালনা করা, প্রেসিডেন্ট জিয়া এটা জানার পর সেই সভাটি ভণ্ডুল করে দেন এবং এদেরকে এমনভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল যে ের আর শহীদ জিয়ার জীবদ্বশায় কোনোদিন সেই চেষ্টা করেনি, বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিপক্ষে তিনি যেরকম পাকিস্তানী ভাবধারার সেবাদাসদের বিরুদ্ধেও তার দৃষ্টি ভঙ্গি একই ছিল শহীদ জিয়া এক দুঃসাহসিক বিপ্লবী ছিলেন তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন তাঁর বিপ্লবী কর্মযজ্ঞে কমিউনিস্ট পার্টি ও শামিল হয়েছিলো ,বিশেষ করে খাল খনন কর্মসূচিতে তারা কমিউনিস্ট পার্টি তাদের ব্যানার নিয়ে সেই সময় অংশ নিয়েছে ,এই খাল খননের সুদূর প্রসারী সুফল আমরা পেয়েছি , দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে ,মাছের উৎপাদন বেড়েছিল, খরা মৌসুমে সেচ সুবিধার জন্য পানির তীব্র হাহাকার থেকে জাতি স্থায়ী মুক্তি পেয়েছিলো।
শহীদ জিয়াউর নারী ও শিশু দের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করেছিলেন,শিশু একাডেমি ,শিশু পার্ক তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি,আজকে র টিভি চ্যানেল গুলির ট্যালেন্ট হান্টিং তিনি বিটিভির সেই সাদাকালো যুগে শুরু করেছিলেন যার মাধ্যমে হাজারো ও শিল্পী অভিনেতা অভিনেত্রী বেরিয়ে এসেছে সেই সময় এই নতুন কুঁড়ি অনুষ্টান টি ই আজকের বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে, বাংলাদেশে রঙিন টিভি অনুষ্টান ও তার সময়ই চালু হয়েছিল,
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে তিনি ব্যাপক উন্নয়ন করেছিলেন সেই সময় ফুটবলের আন্তর্জাতিক রেঙ্কিং এ বাংলাদেশের অবস্থান আজকের মতো এতো নিচে ছিলোনা ,এশিয়ান ক্লাব ফুটবল,সহ আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজিত হতো, ফ্লাড লাইটের আলোয় স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখা অকল্পনীয় ছিল সেটা কে তিনি বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন ,ক্রিকেটের আজকের যে পর্যায় সেটা শুরু হয়েছিল তাঁরই শাসনামলে, খেলাধুলা করা শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকা এসবের জন্য বিটিভিতেও সেই সময় নানা অনুষ্টান চালু হয়েছিলো, একটি জনপ্রিয় টিভি অনুষ্টান “আপনার স্বাস্থ্য ” সেই সময় উপস্থাপনা করতেন বিএনপির প্রতিষ্টাতা সেক্রেটারি জেনারেল জনাব বি, চৌধুরী,
এক কথায় আধুনিক বাংলাদেশের সত্যিকারের রূপকার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এমন কোনো একটি সেক্টর নাই যেখানে তাঁর উন্নয়নের ছুঁয়া লাগেনি, এই মহান মানুষটি সম্পর্কে বাংলাদেশের জনপ্রিয় উপন্যাসিক মরহুম হুমায়ুন আহমেদ তাঁর সর্বশেষ উপন্যাস দেয়াল এ উল্লেখ করেছেন যে তিনি লোকদেখানো সৎ না প্রকৃত ই এক সৎ মানুষ ছিলেন ,তিনি আগাগোড়াই একজন জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক নির্লোভী সৎ নেতা ছিলেন যিনি কিনা মাত্র কয়েকটি বছরে দেশকে একটি আশা জাগানিয়া স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ দেখিয়ে গিয়েছেন , মাত্র পঁয়তাল্লিশ বছর বয়েসে এক অসামান্য জনপ্রিয়তা নিয়ে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ,আজকে আমাদের দলের বা তার অনুসারীদের জন্য তিনি যে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী ধারা সৃষ্টি করে গেছেন সেই ধারার রাজনৈতিক কর্মীদের সেটাকে হৃদয় দিয়ে বুঝতে হবে যে জিরো টলারেন্স হলো দেশের স্বার্থের প্রশ্নে কোনো ছাড় নেই, সেটা হিন্দুস্তান ই হউক আর পাকিস্তানই হউক,আমরা বাংলাদেশী আমাদের অন্তরে বাংলাদেশ।
(পুনশ্চ: সেদিন এক রাজনৈতিক ভাইয়ের একটি মন্তব্য ছিল এরকম শহীদ জিয়া ভিন্নমতের মানুষদের কে দলে এনেছেন তাই ভিন্নমতের মানুষ আসতে পারবেন ,হা রাজনৈতিক চিন্তাধারা কোনো বদ্ধ জলাশয় নয় ভিন্নমতের মানুষ যদি আমাদের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনায় উদ্বোদ্ধ হয়ে আসে এখনো আসতে পারবে ,কিন্তু তার অন্তরে যদি সেই ভিন্নমতের প্রাধান্য থাকে এবং কিছু অর্জন করে এমপি মন্ত্রী পদ পদবি নিয়ে দৌড় দেয় তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবেনা, এরকম মানুষ আসলে আজকালকার যুগে অনেকেই আছে কিন্তু প্রকৃত রাজনৈতিক কর্মীদের পায়ের কাছে যাবার যোগ্যতাও এই সব মানুষদের নাই,)
“শহীদ জিয়া ইতিহাসের এক মহানায়ক”
লেখক ও রাজনীতিক – শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন