রাষ্ট্রের নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে সরকার দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব নিয়ন্ত্রন করছে। এর উপর নজরদারি বাড়াচ্ছে সরকার। আপত্তিকর, ক্ষতিকর, বেআইনি পোস্ট ফিল্টার ও ব্লক করতে ডিভাইস বসানো হয়েছে। আর এ জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানির প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স প্রোজেক্ট’-এর আওতায় এসব যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। এই প্রকল্পে ২৭০০ জিপিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করা হয় যা
পুরো বাংলাদেশ যে ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে, তার প্রায় চারগুন।
কিওয়ার্ড পদ্ধতিতে এই প্রজুক্তি ফিল্টারিং ও ব্লকিংয়ের কাজ করে। চিহ্নিত কনটেন্টগুলোর হুমকি বিবেচনায় নিয়ে তা ব্লক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা একই পদ্ধতিতে আগে থেকেই সামাজিক মাধ্যমের কনটেন্ট ফিল্টার করছে। তবে নতুন প্রকল্পে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাইরেও অন্যান্য অনলাইন কন্টেন্ট ফিল্টার করা হবে।
অনলাইনে গুজব প্রতিরোধে একটি মনিটরিং সেন্টার করা হয়েছে যা ২৪ ঘন্টা কাজ করবে।
ফেসবুক ডেভেলপার গ্রুপের সাবেক ব্যবস্থাপক আরিফ নিজামীর থেকে জানা গেছে, এটা মূলত ট্র্যাকিংয়ের কাজ করবে। যেসব কনটেন্ট এনক্রিপ্টেড থাকবে তা-ও হয়তো ট্র্যাকের চেষ্টা করবে। শব্দ ধরে ট্র্যাক করবে। আবার নির্দিষ্ট কোনো আইপি বা আইডিকেও ট্র্যাক করতে পারবে। এতে ব্যক্তির স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে নির্দিষ্ট ধরনের শব্দ থাকবে যেগুলো অপরাধমূলক। সাধারণ মানুষ এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করেন না।
তবে তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষক এবং সাইবার অ্যাট হোমের চিফ অপারেটিং অফিসার সাবির আহমেদ সুমন বলেন, যখনই আপনি কোনো বিষয় ফিল্টার করবেন, সেটা যে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, তাতে কোনো সন্দেহ নাই।
বাংলাদেশে এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৯ কোটি ৫ লাখ। আর ফেসবুক আইডি ৩ কোটি ১০ লাখ। সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে সম্প্রতি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন পাশ করা হয়েছে। তাতে বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা গুলোর মধ্যে রয়েছে, সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে সরকার বা রাষ্ট্রের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপেলোড, কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী কোনো রকম তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে বা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি পরিপন্থি কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা যাবে না। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে এরূপ কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো সার্ভিস/পেশাকে হেয়প্রতিপন্ন করে এমন কোনো পোস্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। লিঙ্গ বৈষম্য বা এ সংক্রান্ত বিতর্কমূলক কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা যাবে না। ভিত্তিহীন, অসত্য ও অশ্লীল তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে।
ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার ঘটনায় সাংবাদিক প্রবীর শিকদারকে গ্রেফতারের পর তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দেয়া হয়। এরপর গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তি আইন নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। অধিকার কর্মীরা বলছেন, তথ্য প্রযুক্তি আইনটি নিবর্তনমূলক এবং এর ৫৭ ধারাটির অপব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি উঠেছে। আইনের নামে যারা এটি প্রয়োগ করবেন তারা অযথা হয়রানি করবেন, আইনের স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন করবেন তাতো হতে পারে না। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত এই ব্যাপারে সতর্ক হওয়া।
সরকার এই আইন করেছে বলে তারা তো এর সাফাই গাইবেই তবে কথা হচ্ছে অনেক ভাল আইনও অপ-প্রয়োগ বা অপব্যবহারের কারণে হয়রানিমূলক হতে পারে। স্বেচ্ছাচারভাবে কোন আইন ব্যবহার করলে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।