জাতীয় নির্বাচনের পরে পৌর নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থকরা গায়ের জোরে ভোটকেন্দ্র দখল করে নেয়। ৬০টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণের মাঝেই ঢাকায় সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করা হয়। যেসব জায়গায় নির্বাচন হয়েছে সেসব জায়গার ভোটকেন্দ্রগুলোতে ধানের শীষের সমর্থক এমনকি প্রার্থীদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পৌরসভার নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা সকালে থেকেই বিএনপির এজেন্টদের সেন্টারে যেতে দেয়নি। অনেক জায়গায় বের করে দিয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ ধবংস করে দিয়েছে। এই নির্বাচন কেবলই আইওয়াশের নির্বাচন ছাড়া আর কিছুই নয়।
পাবনায় বিএনপি মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম নয়নকে মারধর করে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি পাবনায় সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা তাকে জোর করে বের করে দিয়েছে। সিরাজগঞ্জ পৌর নির্বাচনে বিএনপির নির্বাচিত কাউন্সিলর হত্যার শিকার হয়েছেন।
সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা গায়ের জোরে ভোট কেন্দ্র দখল করেছে। জাতীয় নির্বাচনের মতো পৌরসভা নির্বাচনেও তারা একই ধরনের কাজ করছে। ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিষয়টি কেবলই লোক দেখানো। এমনিতেই মানুষ ভোট দিতে পারে না, এখন আবার মেশিনে ভোট।
বর্তমানে যে নির্বাচনগুলো হচ্ছে সেগুলো আইওয়াশের নির্বাচন। নির্বাচনের নামে তামাশা করা হচ্ছে। নির্বাচনের ফলাফল শেখ হাসিনার বাসায় আগেই ঠিক করা থাকে, যা নির্বাচনের দিন প্রচার করা হয়। একেবারে মাটি চাপা দিয়ে গণতন্ত্রকে কবর দেয়া হয়েছে। সুষ্ঠু ভোট ও জনগণ ভোট দিয়ে তার প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন সেই পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশ থেকে নিরুদ্দেশ করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা এবং তার নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন হয় ঠিকই, তফশিল হয় ঠিকই, কিন্তু কে জিতবেন তা নির্ধারণ হয় প্রধানমন্ত্রীর বাসা থেকে। অর্থাৎ শেখ হাসিনার বাসা থেকে। সেখান থেকে যে তালিকা হয় সেই তালিকা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা তার মনের মতো লোক নিয়োগ করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। এ কমিশন শেখ হাসিনার রাবার স্ট্যাম্পের মতো। অর্থাৎ অবৈধ ফলাফল সেটাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য সিলমোহর হিসাবে কাজ করছে। নূরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ভোটের তফশিল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশন কতিপয় কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য? দিনের ভোট রাতে নেওয়ার জন্য? নির্বাচন কমিশনের কেউ কেউ এর আগে সরকারি জালিয়াতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তবে এখন তাদেরও মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা মুমূর্ষু অবস্থায় পরিণত হয়েছে।
দেশব্যাপী চলমান পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশি তাণ্ডবের নমুনা জনগন দেখেছে। অধিকাংশ পৌরসভায় সরকারি দল ও প্রশাসন যৌথভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ভোট কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের পক্ষের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের কোথাও দাড়াতে দেওয়া হয়নি। উদ্বেগজনক তথ্য হলো, কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর পৌরসভার সব কেন্দ্র দুপুর ১২টার মধ্যে দখল করে নিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এই হলো বর্তমান সরকারের আইওয়াশের নির্বাচন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা।
প্রতিবারই ব্যাপক সহিংসতা, রক্তপাত ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন করেছে ক্ষমতাসীনরা। সর্বত্র চর দখলের মতো কেন্দ্র দখল করে, ভোট কারসাজির ডিজিটাল মেশিন ইভিএম দিয়ে প্রকাশ্যে কারচুপি করা হয়েছে। দেশের জনগণ জানে, আওয়ামী লীগের আমলে জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে জনগণের ভোটে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয় না। নির্ধারণ হয় গণভবনে।
অবস্থা এখন এমন হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন স্রেফ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পোস্ট বক্স ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের কাজ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে পাঠানো তালিকা প্রকাশ করা। এ খেলার মাস্টার মাইন্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর খেলোয়াড় হিসেবে আছে পুলিশ প্রশাসন। নির্লজ্জ রেফারি নির্বাচন কমিশন এখানে সরকারের হাতের পুতুল।
“পৌর নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে প্রচুর ভোটার উপস্থিতি ছিল, ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্ত তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে”- নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীরের এই ধরনের বক্তব্য নিছক মিথ্যাচার এবং হাস্যকর। বরাবরের মতোই পৌর নির্বাচনে কমিশনের ভূমিকাও ছিলো অত্যন্ত নির্লজ্জ।