আওয়ামীলীগের অবৈধ সরকার গত ১২ বছর ধরে বাংলাদেশে তাদের রাজত্ব কায়েম করে আছে। এই দীর্ঘ স্বৈরাচারী শ্বাসনামলে জনগণ হারিয়েছে তাদের সকল ধরণের স্বাধীনতা। তাদের ভয়ে মানুষের প্রতিবাদ তো দূরের কথা তাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস করে না স্বাধারন জনগণ। কারন বিপক্ষের কোন কথা শোনার সৎ সাহস তাদের নেই। সকল বিপক্ষ মতকে তারা নজিরবিহীন অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দমিয়ে রেখেছে। এই ধারাবাহিকতায় বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে আজ বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীন চিন্তাধারাও আজ অন্তরীন। শেখ মুজিবের মতো তারই কন্যা শেখ হাসিনাও সহ্য করতে পারেনা তাদের কর্মকান্ডের কোন বিরোধ। কিন্তু এতে ১৯৭২-১৯৭৫ এর মতো বর্তমানের বাস্তবতাও একই পথে ধাবমান। যখন সমস্ত বিরোধী শক্তিকে অন্যায়ভাবে দমীয়ে রেখে ক্ষমতার নেশায় অন্ধ আওয়ামী দুঃশ্বাসনের কারিগরেরা ঠিক তখন দেখা দেয় চোরে চোরে মতবিরোধ ও সেই মতবিরোধ থেকে অন্তর্দ্বন্দ।
গত কিছুদিন ধরে সেই চিত্রই দেখা যাচ্ছে আওয়ামীলীগের গুন্ডাবাহিনীর মধ্যে। নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দে জড়িয়ে তারা এখন দিশেহারা। কেন্দ্রীয় থেকে আঞ্চলিক সকল স্তরের আওয়ামীলীগের কর্মীরা আজ বিভক্ত বিভিন্ন গ্রুপে। সম্প্রতি বিবাদে জড়িয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করেছে মুজিবের অপরাধের আস্থাভাজন ভাগিনা শেখ মনির ছেলে ঢাকার দক্ষিন সিটির তথাকথিত মেয়র ফজলে নূর তাপস ও পিতৃপরিচয়ে মেয়র হওয়া সদ্য সাবেক ঢাকা দক্ষিন মেয়র সাঈদ খোকন। একজন এসে নতুন করে নিজের দূর্নীতির নীলনকশা করতে গিয়ে ভুল ধরে পূর্বসুরীর বিভিন্ন সিদ্ধান্তের। জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য ফাঁস করে সিটি কর্পোরেশনের মার্কেটে খোকনের অবৈধভাবে দোকান বরাদ্দ নিয়ে। দোকানপ্রতি ৫০ লক্ষ টাকা পকেটভর্তি করে বরাদ্দ দেন সাঈদ খোকন। তাপস এসে বলছেন সেসব দোকান অবৈধ। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ ব্যবসায়ীরা, যাদের কাছে রয়েছে সাঈদ খোকনের স্বাক্ষরিত টাকা গ্রহণের রশিদ। টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করতে না পেরে তাপসের সাথে দ্বন্দে জড়ায় খোকন। বিষয় গড়ায় মামলা পর্যন্ত। পরস্পর বিরোধী ঝগড়াঝাঁটি হাঁসির খোরাক যোগায় সাধারণের। অন্ধভাবে বক্তব্য প্রদানের ফাঁকে বেরিয়ে আসে তাদের দূর্নীতির বিভিন্ন তথ্য। পরবর্তিতে তাদের দলপ্রধানের মধ্যস্থতায় মামলা প্রত্যাহার করে তাপস।
অন্যদিকে নোয়াখালীর বসুরহাটের পৌরসভা নির্বাচনকে নিয়ে আওয়ামী স্বৈরাচার বাহিনীর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ওবায়দুল কাদেরের আপন ছোটভাই আব্দুল কাদের মির্জা নিজের ভাই, স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তার কথায় স্পষ্ট হয় প্রকাশ্য দিবালোকে পুরিয়ে মারা থেকে শুরু করে টেন্ডারবাজি, ঘুষ বানিজ্যসহ চলামান আওয়ামী দুশ্বাসনের নানান চিত্র। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা মানুষের ভাতের অধিকার দিয়েছেন, ভোটের অধিকার দিতে পারেননি। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামীলীগের এমপিরা পালানোর পথ খুঁজে পাবেনা। নেতাদের কাছে শেখ হাসিনা নির্বাচনে ফল চাওয়ায় তারা নেত্রীকে গাছসহ দিয়ে দিয়েছে। এর মাধ্যমে গত নির্বাচনে সীমাহীন দূর্নীতির বিষয় স্পষ্ট হয়। নোয়াখালি-ফেনীর স্থানীয় রাজনীতিতে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অরাজকতার কথাও বলেন কাদের। নোয়াখালীর এমপি একরামুল থেকে আওয়ামীলীগ নেতারা কিভাবে গুম-খুনের রাজনীতি কায়েম করেছে সেসব তুলে ধরেন। তিনি বলেন তার ভাই কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও এমপি একরামুলদের মানুষ ভয় পায় বলে মুখ খোলেনা, কারন তারা গুলি করে মানুষ মেরে ফেলে।
নিজেদের দলের নেতার এমন সব প্রমাণস্বাপেক্ষ কথায় উদ্বিগ্ন হয়ে পরে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী নেতারা। নিক্সন চৌধুরী, একরামুল থেকে সবাই তাকে শেষমেশ পাগল আখ্যা দেন। কারন তার কোন কথার কোন জবাব কারো কাছে নেই। এমনকি তাকে হত্যার জন্য নির্বাচনের আগে বসুরহাটে অস্ত্রসহ লোক পাঠায় বিপক্ষ। নির্বাচনে জিতেও কাদের দিয়ে যাচ্ছেন একেরপর এক বিস্ফোরক বক্তব্য।
পরিস্থিতি এখন এমন যে, আওয়ামীলীগ নিজেই নিজের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। অত্যাচার করে বিপক্ষের সকল দল-মতের মানুষকে দমাতে গেলে নিজের দলের মধ্যেই বিপক্ষ তৈরী হয়। আওয়ামী লীগ এখন আছে সেই সমস্যায়। বিএনপি থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব দল ও সুশীল সমাজের মুখ বন্ধ করে রাখলেও এখন বিরোধ তার নিজের ঘরেই শুরু হয়েছে। ঘরের শত্রুই এখন বিভীষণ।