সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে এখনও ভ্যাকসিন আসে নি। এর কারণ ভারত থেকে ভ্যাকসিন আসার পর তা দেয়া শুরু হবে। তবে জানা গেছে, ভারতে যেই ভ্যাকসিন ২.৪০ ডলারে দেয়া হচ্ছে, সেই ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ৪ ডলারে দেয়া হবে। এই ধরনের জোচ্চুরি কেবল এই আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষেই সম্ভব। এই মহামারী করোনাভাইরাসের মধ্যেও সরকার নিজেদের আখের গোছানো আর চুরি নিয়ে ব্যস্ত।
এই সরকার যেহেতু বিনা ভোটের সরকার আর অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার ফলে জনগণের প্রতি তাদের ন্যূনতম কোন দায়বদ্ধতা নেই। তাদের অদূরদর্শিতা ও লুটপাট নীতির কারণেই ভ্যাকসিন নিয়ে আজ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য অতি দ্রুত বিকল্প উৎস খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এই সহজ বিষয়টি সরকার বুঝেও না বোঝার ভান করছে। ঠিক যেন অনেকটা জেগে জেগে ঘুমিয়ে থাকার মতো একটা ব্যাপার।
‘ফাইজার ও মর্ডানার ভ্যাকসিন সম্পর্কে সবাই ওয়াকিবহাল যে, এটা সংরক্ষণে একটা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি এবং আরেকটা মাইনাস ২০ ডিগ্রি তাপমাত্রা লাগে। এসব আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য নয় এবং আমাদের দেশে এসব আনাও সম্ভব হবে না। এছাড়া অন্যান্য দেশ যেমন- রাশিয়া স্পুটনিক টাস্ক, চীন সিনো ফার্মা অনুমোদন দিয়ে তারা ইতোমধ্যে টিকা দিচ্ছে। অতএব তিন বা চারটি টিকাই অ্যাভেইলেবল হবে তা নয়।’
‘বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কয়েকটি ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে। তবে তাদের কাছে ৫০টি টিকার আবেদন করা আছে। তারা ওইসব বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা শেষ হলে অনুমোদন দিচ্ছে। বিকল্প বলতে আমরা যেসব টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত আমাদের দেশের তাপমাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য টিকা এবং এখনো পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে দেয়া হচ্ছে সেগুলোর সঙ্গে নেগোসিয়েশন করা হলে আরও কম দামে আমাদের দেশ টিকা পেতে পারতো।
ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সংগ্রহ নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের ও বেক্সিমকো প্রধান নির্বাহীর বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের সঙ্গে ভারতের জি টু জি চুক্তি হয়েছে বলে সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। আবার বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকারের সঙ্গে নয়, চুক্তি হয়েছে বেক্সিমকোর সঙ্গে বা বাণিজ্যিক চুক্তি। এরপর তড়িঘড়ি করে টিকা কেনার জন্য প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। আর সেখানেও রাখা হয়েছে বিশাল দুর্নীতির খাত।
‘ভ্যাকসিন ক্রয় করতে গিয়ে সরাসরি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি না করে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে (বেক্সিমকো) চুক্তি করায় আর্থিকভাবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মাধ্যমে ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজের দাম প্রায় দ্বিগুণ পড়বে। যদি কয়েক কোটি ভ্যাকসিন আমদানিও হয় তা সাধারণ মানুষ আদৌ পাবে কি-না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।’
করোনা ভ্যাকসিন বিতরণের জন্যও সরকারের প্রস্তাবিত জেলা, উপজেলা কমিটির মাধ্যমে টিকা সরবরাহ করা হলে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের কাছে এই ভ্যাকসিন যথাযথভাবে পৌঁছাবে না। ভ্যাকসিন বিনা মূল্যে পাওয়া জনগণের অধিকার।
করোনা সংক্রামণের প্রথম থেকেই স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে। করোনা পরীক্ষা, শনাক্তকরণ, মৃতের সংখ্যা এসব বিষয়ে জনমনে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন রয়েছে, সঠিক তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। যথাযথ শনাক্তকরণ ও পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারের এক ধরনের উদাসীনতা প্রথম থেকে লক্ষণীয়। সেই ধারাবাহিকতায় একটি স্বার্থান্বেষী মহলকে বর্তমান সরকার ভ্যাকসিন ক্রয় ও বিতরণে দায়িত্ব নিয়ে জনগণের শত শত কোটি টাকা লোপাট করার সুযোগ করে দিচ্ছে।
ভ্যাকসিন সরকার সরাসরি না কিনে মধ্যস্বত্বভোগী নিয়োগ দিয়েছে দুর্নীতির জন্যে। সরকারি সুবিধাভোগী, পদবী ধারী মধ্যস্বত্বভোগী নিয়োগ নিয়ে নীতিগতভাবেই শুধু নয়, আইনগতভাবেও অপরাধমূলক একটা কাজ করেছে। সরকারের লাভজনক পদে নিয়োগকৃত কোনো ব্যক্তি, যিনি আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা তার ভ্যাকসিন ক্রয়ে সম্পৃক্ততা বেআইনি ও অপরাধমূলক।
মানুষের জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন আমদানি প্রক্রিয়ায় অস্পষ্টতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির ফলে জনগণের এই টিকাপ্রাপ্তি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ভ্যাকসিন করে আসবে- এটা নিয়ে গোটা জাতি এখন চরমভাবে উদ্বিগ্ন। এখন পর্যন্ত সরকার কোনো সুনির্দিষ্ট সময়ও নির্ধারণ করতে পারেনি।
ভ্যাকসিন হচ্ছে জীবন রক্ষার করার একটি বিষয়। এটা একটা জনগনের অধিকার। সেই ভ্যাকসিন নিয়েও তারা দুর্নীতি করছে যেটা আমরা পত্র-পত্রিকায়ে দেখছি। এই সরকার যে পুরোপুরিভাবে দায়িত্ব জ্ঞানহীন সরকার এবং জনগনের প্রতি যে তাদের কোনো রকম দায়-দায়িত্ব নেই, সেটাই এখানে প্রমাণিত হচ্ছে। টিকা আমদানির দায়িত্ব বির্তকিত বেক্সিমকো গ্রুপকে প্রদানের সিদ্ধান্ত একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।