দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। পেয়াজের ঝাঝের পর এবার তেলের ঝাঝ বেড়েছে।বেড়ে গেছে সয়াবিন তেলের দাম আরেক দফা। পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) কোম্পানিভেদে এখন ৬৫৫ থেকে ৬৬৫ টাকা। গত সপ্তাহে বড় তিনটি কোম্পানি এই দর বেঁধে দিয়েছে। নতুন দর কার্যকর হওয়ায় প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা। এ নিয়ে গত পাঁচ মাসে সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৩০ টাকা বাড়ল।
বাজারে এখন সয়াবিন তেলের এক লিটারের বোতলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৩৪ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর আগে সর্বোচ্চ দাম ছিল ২০১২ সালের মাঝামাঝি। ওই বছর বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক বছর আগের তুলনায় বাজারে এখন সয়াবিনসহ ভোজ্যতেলের দাম ১৯ থেকে ২৩ শতাংশ বেশি। এভাবেই দিন দিন জিনিসপতত্রের দাম বাড়ছে আর সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও চরমে।
ভোজ্যতেলের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে মানুষ। চারজনের ছোট পরিবারে গড়পড়তা মাসে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল দরকার হয়। ফলে শুধু রান্নার তেলের পেছনেই এখন মাসে দেড়শ টাকা বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে। শুধু ভোজ্যতেল নয় বাজারে এখন চালের দামও বেশ চড়া। সাথে বেড়েছে চিনির দামও।
যখনই কোন নিত্য প্রয়োজণীয় পন্যের দাম বৃদ্ধি পায় তখনই একে অপরকে কাদা ছোরাছুরিও বেড়ে যায়। এখন আবার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার জন্য আন্তর্জাতিক বাজারকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, দেশের সয়াবিনের উৎস ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়েতে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিনের দাম ১ হাজার ১৫০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এর আগে ২০১২ সালে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩০০ ডলারে উঠেছিল।
এই মূল্য নিয়ন্ত্রণে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।ভোজ্যতেল আমদানিতে করহার সমন্বয় করতে হবে। গত ৭ জুলাই বিশ্ববাজারে এক টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৭৪৩ ডলার, যা চলতি মাসে ১ হাজার ১৭৮ ডলার ছাড়িয়েছে। এ দরে সয়াবিন তেল দেশের বাজারে প্রবেশ করলে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য দাড়াবে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
আমাদের দেশে দাম ও বাড়ছে আর সাথে করও বাড়ছে। ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে এখন ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও ৪ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রয়েছে। এ ছাড়া উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ১৫ শতাংশ করে ভ্যাট দিতে হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ভোজ্যতেলের ভ্যাট এক স্তরের বদলে তিন স্তরে আরোপ শুরু হয়।
বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে থাকায় আমদানি পর্যায়ে একটি নির্দিষ্ট শুল্কায়ন মূল্য ধরে তার ওপর ভ্যাট আরোপ করা যেতে পারে। আবার উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে।
দেশে বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। মেঘনা, সিটি, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, বসুন্ধরা, টি কে, এস আলম গ্রুপসহ সাত–আটটি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত তেল আমদানির পর তা পরিশোধন করে বাজারজাত করে। কোম্পানিগুলো বিভিন্ন সময় ভোজ্যতেলের ওপর এক স্তরে ভ্যাট আরোপের দাবি জানিয়ে আসছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এর আগে গত বছর ভোজ্যতেল ও চিনির ওপর কর কমাতে কয়েক দফা অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল। তবে কর কমানো হয়নি। সরকারের নিতি নির্ধারক পর্যায়ে নেই কোন সমন্বয়।
নিত্যপণ্যের ওপর কর থাকা উচিত নয়। এখন যেভাবে কর আরোপ হয়, তাতে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে করের পরিমাণও বাড়ে। ভোজ্যতেলের ওপর ভ্যাট উঠিয়ে দিতে পারলে ভালো। নইলে এক স্তরে কর আরোপ করা উচিত। করোনায় দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে। এই সময়ে তেলের মতো নিত্যপণ্যের চড়া দাম মানুষের কষ্ট বাড়াবে। শুধু করছাড় দিলেই হবে না, সেটা যাতে সাধারণ মানুষ পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, করছাড় দিলেও বাজারে দাম কমে না।