জাতীয় কবি নজরুল একটা ফ্যাসিনেটিং চরিত্র। অত্যন্ত মেধাবী এই লোক তার সাহিত্যের কারণে বিশ্বে অমর হয়ে থাকবেন।
নজরুলের উত্থান হয়েছিল বাঙালি মুসলমানের ব্যবহৃত আরবি ফার্সি মিশ্রিত বাংলা ভাষা ছেড়ে শুদ্ধ বাংলায় সাহিত্য রচনার মাধ্যমে। কথিত আছে প্রমথ চৌধুরী নজরুলকে পড়ে বলেছিলেন তার লেখা থেকে পেঁয়াজ রসুনের গন্ধ (মুসলমানের মসলা খাওয়ার অভ্যাসের প্রতি কটাক্ষ করে নিরামিষাশীর বলা কথা) পাওয়া যায় না।
নজরুল সাফল্যের জন্যে নিজের বিশ্বাসকে বিসর্জন দেন নি। প্রমথ চৌধুরীর এই উক্তির কারণেই হোক আর যে কারণেই হোক, তিনি মুসলমানের ভাষা, উর্দু-ফার্সিতেও সাহিত্য রচনা করেন।
তিনি একই সাথে হামদ লিখেন- শ্যামা সঙ্গীত লিখেন।
তিনি একই সাথে রমজানের ঐ রোজার শেষে লিখেব, আবার খোদার আরশ ফুড়ে ফেলতে চাওয়া বিদ্রোহী কবিতা লিখেন।
তিনি মা আমেনার ঘরে নূরের চাঁদ মোহাম্মদের শানে লিখেন, আবার মোহাম্মদকে উদ্দেশ্য করে-
“And do you think that unto such as you,
A maggot-minded, starved, fanatic crew,” লেখা ওমর খৈয়ামের অনুবাদও করেন।
তাহলে নজরুল আসলে কী ছিলেন?
তিনি ছিলেন একজন প্রথাবিরোধী। তিনি কারো মন জোগাতে লিখেন নি। তিনি সকল এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে ছিলেন। এ কারণেই হিন্দু-মুসলমান সবাই তাকে অপছন্দ করতো।
তিনি ছিলেন একজন প্রগতিশীল বাঙালি। তিনি কোনো ধর্মের পক্ষে বা বিপক্ষে ছিলেন না। ধর্ম ব্যক্তিগত আচার হিসাবে তিনি পালন করতেন। আর ধর্মকে পুঁজি করে পেট চালানো মোল্লা পুরোহিতদের বিরুদ্ধে ছিলেন তিনি।
তিনি ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি। তার স্ত্রী হিন্দু, ছেলের নাম তিনি রেখেছেন দুই ধর্মীয় ব্যক্তির নামে।
তিনি ছিলেন সে ব্যক্তি যাকে মডেল ধরে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ হতে পারতো। কিন্তু দুঃখ! তাকে আমরা “রমজানের ওই রোজা” আর “খোদা তোমার মেহেরবানি” এই দুইয়ে বন্দী করে ফেলেছি!