চকবাজারের চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডকে হত্যাকাণ্ড উলে¬খ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল বলেছেন, ওই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩০ কোটি টাকা এসেছিল। ওই টাকা নিহতদের পরিবার বা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে এখনও বণ্টন করা হয়নি। ওই টাকা কোথায় গেল? একজন নাগরিক হিসেবে তার হদিস চাই। অগ্নিকাণ্ডে এক বছর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সুলতানা কামাল বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন দায়িত্ব যাদের ওপর ছিল তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেনি। তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করেছেন। তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ড. রিজওয়ানা হাসান। চুড়িহাট্টার ঘটনা নিয়ে বক্তব্য দেন নিজেরা করি এর সমন্বয়ক খুশী কবির, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং এসোসিয়েশন ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি) এর প্রধান নির্বাহী শামসুল হুদা।
নিহতের স্বজনরা বলেন, সরকারসহ বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে অগ্নিকাণ্ডের পর কয়েকদিন তাদের নানা ধরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এরপর সবাই বিষয়টি ভুলে গেছেন। গত এক বছরে তাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। তারা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
লিখিত বক্তব্যে ড. রিজওয়ানা হাসান বলেন, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টার ওয়াহিদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটে। আহত হয় অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি। অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে ওই ভবনে রাসায়নিক গুদামকে দায়ি করা করা হয়েছে তিনটি সংস্থা প্রতিবেদনে। তিনি বলেন, সরকারি মহলের দায়িত্বহীনতা এবং অবহেলার কারণেই চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটছে। চুড়িহাট্টার অগ্নিকান্ডের পর মামলা হলেও এখনও ওয়াহিদ ম্যানশনের মালিকদের গ্রেফতার করা যায়নি। বাড়িটি কিছুদিন সিলগালা থাকলেও এখন সেখানে সংস্কারের কাজ চলছে। চকবাজার অগ্নিকান্ডের পর পুরান ঢাকা থেকে সব রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে ফেলতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেও এখনও ওই এলাকায় রাসায়নিক গুদাম রয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি থাকলেও নিহতদের পরিবারের কেউই লাশ দাফনের প্রয়োজনীয় টাকা ছাড়া সরকারের কাছ থেকে আর কোনো আর্থিক সহায়তা বা ক্ষতিপূরণ পাননি। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, চকবাজারের অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৪০টি বেসরকারি ব্যাংক গত বছরের ৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৩০ কোটি টাকা দেয়। ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দাবি করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো গত বছরের ১৫ মে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে আবেদন করে। কিন্তু দফতরগুলো থেকে এখনও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পক্ষে সরকারের কাছে আট দফা দাবি করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে আছে, চকবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে অবিলম্বে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, সুনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পুরান ঢাকার এবং অন্যান্য সকল আবাসিক এলাকা থেকে সকল রাসায়নিক সামগ্রী অপসারণ করা, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা, পুরান ঢাকার রাসায়নিক সামগ্রী ও গুদামের জন্য ভাড়া দেওয়া আবাসিক ভবন মালিকের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা, গুদাম নির্মাণে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও পরিবেশ সুরক্ষা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রভৃতি।
টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নিমতলির ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি ১৭ দফা সুপারিশ করলে সেগুলো এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। যারা আইন বাস্তবায়ন করে তারাই আইন ভাঙেন। খুশী কবির তার বক্তব্যে বলেন, চুড়িহাট্টা অগ্নিকান্ডের সঙ্গে যারা জড়িত এখনও পর্যন্ত তাদের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আইন না মানা এবং দায়িত্বহীনতার সংস্কৃতির কারণেই বারবার এ ধরণের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে। সরকার সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এ ধরণের ঘটনা ঘটতো না। যার যেটা দায়িত্ব সেটা সঠিকভাবে পালনের নিশ্চয়তা বিধানের দাবি জানান খুশী কবির।
শামসুল হুদা বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে যে ৩০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে তা সরকারের টাকা নয়। এটার হক চুড়িহাট্টার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো। ওটাকা যেন ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সঠিকভাবে বন্টন হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু তাই নয়, ওই ঘটনায় সরকারেরও দায় আছে। বিভিন্ন ব্যাংকের ৩০ কোটি টাকার সঙ্গে আরও অন্তত ৩০ কোটি টাকা সরকারের দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যারা বক্তব্য দেন তারা হলেন- শাহেদ উল্লাহ, আব্দুল মান্নান, ফাতেমা আক্তার, ময়না বেগম, নাসির উদ্দিন, রাশেদ খান প্রমুখ।