সম্প্রতি সকল খবরের কাগজের খবরে মাধ্যমে আপনারা সকলেই জানেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ। আর মাত্র ৫ দিন পর আগামী ২৫ জুন আজিজ আহমেদ জেনারেল পদে পদোন্নতি নিয়ে সেনাপ্রধানের দায়িত্বে নিয়োজিত হবেন। বর্তমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের স্থান স্থলাভিষিক্ত হবেন আজিজ আহমেদ। আজিজ আহমেদ ছিলেন বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক। তার আগে আর্মি ট্রেইনিং অ্যান্ড ডকট্রিন্যাল কমান্ডের জিওসির পদে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আজিজ আহমেদকে আগামী ২৫ জুন থেকে তিন বছরের জন্য সেনাপ্রধান পদে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন।
আজিজ আহমেদ ২০১৬ সাল পর্যন্ত চার বছর বিজিবির মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। তার সময়েই বিজিবি কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে সীমান্ত ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বিজিবি প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার আগে আজিজ আহমেদ কুমিল্লায় সেনাবাহিনীর ৩৩তম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক ছিলেন। বিএমএর অষ্টম দীর্ঘমেয়াদি কোর্স শেষে ১৯৮৩ সালের ১০ জুন সেনাবাহিনীতে আর্টিলারি কোরে কমিশন পান আজিজ আহমেদ।
কর্মজীবনে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে জিএসও-৩ (অপারেশন্স), পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর, সেনাসদর প্রশিক্ষণ পরিদপ্তরের গ্রেড-২ এবং সেনাসদর, বেতন ও ভাতা পরিদপ্তরের গ্রেড-১ স্টাফ অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন স্কুল অব আর্টিলারি এবং স্কুল অব মিলিটারি ইন্টিলিজেন্সের প্রশিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ সালে জন্ম নেওয়া আজিজ আহমেদের পৈত্রিক বাড়ি চাঁদপুরে। তার বাবা ওয়াদুদ আহমেদ বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা। মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর আজিজ এইচএসসি পাস করেছিলেন নটরডেম কলেজ থেকে।
২০০৯ সালে ব্রিগেডিয়ার এবং ২০১২ সালে সেপ্টেম্বরে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ আহমেদকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে বিজিবি’র মহাপরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়। ০৫ ডিসেম্বর ২০১২ হইতে ১৬ নভেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত বিজিবির মহাপরিচালক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৬ সালে লেঃ জেনারেল পদে উন্নীত হয়ে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি হন। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি তাকে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
উপরে দেওয়া তথ্যগুলোর মধ্যে সবগুলোই সকল শীর্ষ খবরের কাগজে দেখতে পাবেন। কিন্তু নিচের দেওয়া তথ্যগুলো শীর্ষ দৈনিক গুলোতে পাবেন না, কারন এই তথ্য গুলো এখন প্রকাশ করা নিষিদ্ধ, এটি একটি অঘোষিত সত্য। সত্য পরিচয় প্রকাশ করার কারনে দুই দিন আগে বিডিনিউজ২৪ কে বন্ধ করে দিয়েছিল স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকার।
যাইহোক, আসুন জেনে নেই লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ এর প্রকৃত পরিচয়ঃ
আজিজ আহমেদের পিতা বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ওয়াদুদ আহমেদে এবং আজিজ আহমেদ এর মাতা রেনুজা বেগম। পাঁচ ভাইর মাঝে আজিজ আহমদ দ্বিতীয়। পাঁচ ভাইরা হলেন জথাক্রমেঃ হারিস আহমেদ, আজিজ আহমেদ, সাইদ আহমেদ টিপু, আনিস আহমেদ মোস্তফা, তোফায়েল আহমেদ জোসেফ।
বড় ভাই হারিস আহমেদ, ইন্টারপোলের লাল তালিকায় থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের একজন। ১৯৯৬ সালের ৭ মে খুন হন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা হত্যা মামলার আসামী ঐ ঘটনায় নিহতের স্ত্রীর করা মামলায় ২০০৪ সালের ২৫ এপ্রিল হারিস আহমেদ কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন নিম্ন আদালত। হারিস আহমেদ ১৯৯৬ সাল থেকেই পলাতক আছেন। তিনি বর্তমানে ভারতে আছেন বলে শোনা যায়। স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে হারিস আহমেদ নিজেকে মোহাম্মদপুর এলাকায় জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। এরশাদ সরকারের পতনের পর তিনি নিজের পরিচয় দিতে শুরু করেন মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের নেতা হিসাবে। ঢাকার ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনার পদে নির্বাচনও করেছিলেন তিনি।
দ্বিতীয় ভাই আজিজ আহমদ, তৃতীয় ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু ১৯৯৯ সালের ১৩ই মার্চ এয়ারপোর্ট রোডে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন।
চতুর্থতম ভাই আনিস আহমেদ মোস্তফা মামলায় সাজা প্রাপ্ত যাবজ্জীবন কারদন্ড প্রাপ্ত এবং ঢাকার মোহাম্মদপুরের বর্তমান মিজান কমিশনারের ছোট ভাই কামাল হত্যা মামলার আসামী। নিম্ন আদালতের বিচারের ফাঁসির দন্ডাদেশ হয়েছে। সেও পালাতক ভারতে।
ছোট ভাই, তোফায়েল আহমেদ জোসেফ। ১৯ বছর আগে জোসেফ যখন গ্রেপ্তার হন, তার নামে ঢাকার বিভিন্ন থানায় তখন চাঁদাবাজি, খুন, অবৈধ অস্ত্র বহনের অভিযোগে অন্তত ১১টি মামলা। ১৯৯৬ সালের ৭ মে খুন হন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান। ওই ঘটনার পরপরই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন জোসেফ। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রীর করা মামলায় ২০০৪ সালের ২৫ এপ্রিল যোসেফ কে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন এ রায়ের বিরুদ্ধে কারাগারে থাকা আসামীরা জেল আপিল করে। ২০০৭ সালে ওই আপিল ও ডেথরেফারেন্সের শুনানি শেষে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট।
এরপর আপিল বিভাগে আসে মামলটি এবং আপিলে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে ৪ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ২০১৫ সালের ৯ ই ডিসেম্বর জোসেফের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দেন। এছাড়া অস্ত্র মামলায় তাঁর ১২ বছরের কারাদণ্ড হয়।
২০ বছর যাবৎ কারাগারে থাকলেও ভাই বিজিবি প্রধান হলে কারাগারে বন্দি জোসেফ চিকিৎসার নাম করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কারাকক্ষে ছিলেন আয়েশি জীবন। ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে এই ‘ভিআইপি রোগী’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কারা কক্ষে ছিলেন আরাম-আয়েশে। যাঁকে খুশি কারাকক্ষে ডেকে নিয়েছেন, দল বেঁধে আড্ডা দিয়েছেন।
যাবজ্জীবন সাজার আসামি নব্বইয়ের দশকের আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফ সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পেয়েছেন। জোসেফের মা রেনুজা বেগম ৭ জুন ২০১৭ তাঁর সন্তানের সাজা মওকুফের জন্য আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতি নিকট উপস্থাপন করা হয়। রাষ্ট্রপতি খুশি হয়ে তাকে শুধু ক্ষমাই করে নাই সাথে বিদেশ গিয়ে চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছে এবং গোপনে চলে গেছেন বিদেশে।
৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর ভাই লে. জেনারেল আজিজ আহমদ। আজিজ আহমদ ছাড়া বাকী ৩ ভাই হত্যা মামলার দন্ডপ্রাপ্ত আসামী।
কিন্তু আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য হলোঃ আজিজ আহমেদ ২০০৫ সালে ৩০ আর্টিলারি রেজিমেন্টে থাকাকালে ২১ হাজার রাউন্ড গুলি খোয়া যাওয়ার কারনে শাস্তি প্রাপ্ত হন। কোর্ট অব ইঙ্কুয়ারি তার চাকুরী ডিসমিস করার জন্য সুপারিশ করে। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে সে রয়ে যায় সেনাবাহিনীতে।
৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর ভাই লে. জেনারেল আজিজ আহমদ। আজিজ আহমদ ছাড়া বাকী ৩ ভাই হত্যা মামলার দন্ডপ্রাপ্ত আসামী। তিনি বিজিবির মহাপরিচালক হিসাবে থাকার সময় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন সরকার বিরোধী আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার বিশ্বস্থতার পরিচয় দেন। এছাড়া সীমান্ত রক্ষ্মিবাহিনীকে ইন্ডিয়ার অনুগত হিসাবে তৈরি করতে তাঁর রয়েছে বিশেষ ভুমিকা। এখানেও তিনি ইন্ডিয়ার বিশ্বস্থতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। তাই আগামীর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান।
এখন সবার মতো আমার মনেও প্রশ্ন, শীর্ষ ৩ সন্ত্রাসীর ভাই, ও ২০০৫ সালে সেনাবাহিনীর অস্ত্র চুরির অপরাধে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তা কিভাবে সেনাপ্রধান এর মত এতো দায়িত্বশীল পদ পান? তিনি সেনাপ্রধানের পদে থাকাকালীন সময়েই আমাদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখন তাহলে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন এসেই যায়। এই নির্বাচন সুষ্ঠু নির্বাচন কিভাবে হবে? সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে তো আওয়ামীলীগেরই শক্ত অবস্থান। এভাবে একটি দেশকে নষ্টের পথে যেতে দেওয়া যায় না। আমাদের এখনই উচিত আন্দোলন গড়ে তোলা। নাহলে সামনে ঘোর বিপদ অপেক্ষা করছে দেশবাসীর জন্য।