বন্ধুরা, আপনারা যারা নিয়মিত আমার লেখা পড়েন, আমার সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা করেন কিংবা আমাকে নিয়ে যারা সমালোচনা করে থাকেন, সবাইকেই বলে রাখি, আমরা খুব কঠিন একটা সময় পার করছি। আলোচনা, সমালোচনা তো হবেই, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের দেশে এই সময়ে সত্য বলার মানুষের বড়ো অভাব। একটু ভুল বলেছি, আসলে সত্য বলা মানুষের অভাব না, সত্য প্রকাশের মাধ্যমের অভাব। আমরা যারা সারাক্ষণ সত্যের আদর্শ বুকে ধারণ করে লিখালিখি করে থাকি, আমরাই অনুভব করতে পারি কতোটা অত্যাচারের শিকার হতে হয় সত্য বলার কারনে। আর যখন সরকার বা রাষ্ট্রই সত্য বলার অনুমতি দেয় না তখন বিষয়টা ভয়াবহ আকারে পৌঁছে যায়।
আমরা সারাদিন সাংবাদিকদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে থাকি। তাদের প্রকাশিত সংবাদ থেকে চুল পরিমাণ ভুল বের হয়ে গেলেও আমরা তাকে খুব সহজে হলুদ সাংবাদিকতা করেছেন বলে আখ্যা দিয়ে দিই। কিন্তু ভুলে যাই, তাঁরাই কিন্তু আমাদের জন্য জীবন বাজি রেখে সংবাদ সংগ্রহ করে থাকেন। সবাই যে আবার ধোয়া তুলসীপাতা সেকথা বলছি না। তবে ২-১ জনের জন্য তো পুরো সাংবাদিক সমাজকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে পারিনা। তাঁরা আমাদের জন্য ঝড় বাদল, হরতাল, সন্ত্রাসী হামলা সব কিছু উপেক্ষা করেই আমাদের জন্য সত্য ও সর্বশেষ আপডেটেড সংবাদ সংগ্রহের কাজে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকেন। এবং আমরা, সাধারণ মানুষরা সংবাদপত্র কিংবা অনলাইন সংবাদ সাইট গুলোতে সব সময় চোখ বুলিয়ে থাকি সর্বশেষ সংবাদ জানার জন্য। তাঁদের সংবাদ রিপোর্টগুলো থেকে আমরা জানতে পারি সারা দেশের নানান খবরাখবর।
আমরা এও জানি যে, সাংবাদিকরা, তাঁদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাবে সামাজিক হুমকি ধমকির সম্মুখীন হলেও তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা কিন্তু আজ পর্যন্ত দেওয়া সম্বব হয়নি। কিন্তু এতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার পরও কিন্তু সাংবাদিকদের আয় কিন্তু খুবই কম, তবে এক্ষেত্রে যারা বিভিন্ন সংবাদপত্র কিংবা টিভি চ্যানেল এর বড়ো পদে দায়িত্বরত আছেন তাঁদের কথা আলাদা।
যাইহোক, আমরা যারা সাধারণ মানুষ, সাংবাদিকদের কাছে আমাদের একটি প্রত্যাশাই থাকে, এবং সেই প্রত্যাশা পূরণ হলে আমরা প্রশংসাও জানাই। সেই প্রত্যাশা হোল সত্য প্রকাশের। দেশের যে কোন পরিস্থিতিতেই আমরা চাই যাতে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে, কারো কোন বাঁধা কিংবা চাপের মুখোমুখি না হয়ে সত্য প্রকাশ করার সাহস থাকবে এবং সেই সাথে রাষ্ট্র এবং সরকার সেই মিডিয়াকে সত্য প্রকাশের সুযোগ করে দিবেন।
কিন্তু বর্তমান সময়ের সরকার সেই সত্য প্রকাশের সুযোগতো দেয়ই নি বরং যারা সত্য প্রকাশ করে তাদেরকে সরকারমহল থেকে প্রশাসন ও গোয়েন্দাবাহিনী দ্বারা বিভিন্নভাবে চাপ ও হুমকির মধ্যে রাখছে যাতে করে সেই সকল সত্য গুলো যা সরকারের ব্যক্তিগত এজেন্ডার বিপক্ষে যায়, সে সত্যগুলো কোনভাবেই প্রকাশ না পায়। কেউ কেউ প্রকাশের সাহস দেখালে তাঁদেরকে গুম-খুন-হত্যা থেকে শুরু করে হতে হয়েছে নানান ধরনের হয়রানির শিকার।
তাছাড়া কোন পত্রিকা যদি সত্যতা যাচাই বাছাই করে কোন একটি সংবাদ প্রকাশ করেন, এবং সেই সংবাদ যদি কোনভাবে এই সরকার বা তাদের কার্যক্রম এক কথায় তাদের কুকীর্তির বিপক্ষে যায়, তাহলেই বন্ধ করে দেওয়া হয় সেই পত্রিকার প্রকাশনা কিংবা সংবাদ সংস্থার ওয়েবসাইট।
চলতি মাসে তিন সপ্তাহের মধ্যে দুই দুইটা শীর্ষ পত্রিকার ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে প্রথমটি হল বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার এবং শীর্ষ স্থানীয় অনলাইন সংবাদ বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইট। এবং দুটিই হয়েছে সরকারের নির্দেশে তাদের কুকীর্তি ফাঁস করে দেওয়ার কারনে। তবে বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইট কেন ব্লক করা হয়েছে তা এখনো পর্যন্ত জানতে পারিনি, সম্পূর্ণ তথ্য জেনে তারপর এ বিষয়ে শীঘ্রই লিখবো।
তবে এভাবে আর কত দিন চলতে থাকবে? সংবাদ সংস্থাগুলোকে যদি সত্য প্রকাশের স্বাধীনতা না দেয় সরকার, তাহলেই বুঝে নিতে হয় তাদের এজেন্ডা ভিন্ন। নিজেদের দোষ ঢাকতেই এই ধরনের পদক্ষেপ। আমরা এর আগেও দেখেছি, অনেক সাংবাদিকদের গুম করা হয়েছে। অনেক সাংবাদিকদের লাশ হঠাত করেই পাওয়া গেছে, কিংবা দেশ ছাড়তেও বাধ্য হয়েছেন অনেক সাংবাদিক। তাদের একটাই দোষ ছিল, সত্য প্রকাশ করা! এভাবেই আওয়ামীলীগ এর এই অবৈধ সরকার স্বাধীন সত্য সংবাদ প্রকাশে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে, টুঁটি চেপে ধরছে সাংবাদিক ও সংবাদ সংস্থাগুলোর।
আমাদের সকলের উচিত এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ করা। আমাদের উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামীলীগ এর অবৈধ সরকারকে রুখে দেওয়া। নির্বাচন সামনে আসছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের দাবি করা ও নির্বাচনে সুস্থ মাথায় বিচার বিবেচনা করে তারপরই ভোট দেওয়া। কারন আওয়ামীলীগের হাতে আমাদের স্বপ্নের এই বাংলাদেশ কোনভাবেই নিরাপদ না। তারা বরাবরই আমাদের সাধারণ জনগণদের নিয়ে খেলে যাচ্ছে। পাছে না কারো কাছে বিক্রি করে দেয়?