সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দফতরে ”চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ” এই পুরস্কারটি গ্রহণ করে তা দেশের জনগণকে উৎসর্গ করেছেন। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক অধিদপ্তর এই পুরস্কারটি দিয়ে থাকে।
প্রথমবার এই পুরষ্কারটি পেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা :কিন্তু বাংলাদেশ পেলো তৃতীয়বার।
তবে এই পুরস্কার নিয়ে এতো মাতামাতি কেন ? বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে এই পুরস্কারের জন্য হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় প্রায় দুশো কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। জাতিসংঘ বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক সরকারের দূর্বলতার সুযোগে তাদের চাপ দিয়ে বড় মাপের অর্থ আয় করে থাকে।
হাসিনার পুরস্কারটি সেই পর্যায়ের একটি বলে জানান প্রবাসী রাজনৈতিক বিশ্লেষক মীনা ফারাহ। তিনি বলেন, জাতিসংঘ তাদের ব্যায়ের ৬০ ভাগ অর্জন করেন বিশ্বের নানা অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকে।
বিশিষ্ট প্রবাসী লেখক মীনা ফারাহ আরও বলেন, হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকলে রাষ্ট্র আরো ফকির হবে। কারণ তার ছেলে এবং এমপি মন্ত্রীরা পুরোদেশ লুটপাট করে শেষ করে দিচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে দরিদ্র রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যায় করছে বিভিন্ন লবির পেছনে। তিনি বলেন দ্রুত এই ফ্যাসিষ্টকে না তাড়াতে পারলে বাংলাদেশ একদিন শ্বশান হয়ে যাবে।
জাতিসংঘের পরিবেশ উন্নয়ন সংগঠন ‘ইউএনইপি-United Nations Environment Programme-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে এই পুরস্কার ও বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করার তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়। Click the Link: http://www.unep.org/newscentre/Default.aspx… Link: http://web.unep.org/champions Link: http://www.unep.org/About/ (চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ) পুরস্কারটি আগে দেয়া হতো ‘গ্লোবাল ৫০০ রোল অব মডেল’ হিসেবে। ২০০৫ সালে পরিবেশ রক্ষায় কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ এই পুরস্কারটি গ্রহণ করেছিলেন; বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা’র) সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান । কই তাকে নিয়ে এত মাতামাতি ছিলো না ?
এরপর ২০০৮ সালে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ’ পুরস্কার (নতুন নাম) প্রথমবারের মতো পেয়েছিলেন বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আতিক।
এরই ধারাবাহিকতায়- ২০১৫ সালে যারা ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ’ পুরস্কার গ্রহণ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের মধ্য অন্যতম।
তার সাথে আরো যারা এবছর পুরস্কারটি গ্রহণ করেন; তারা হচ্ছেন:
এক. বিশ্বের স্বনাধন্য প্রসাধনী ও কসমেটিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভারের ( Uniliver) প্রধান নির্বাহী- পৌলপলম্যান।
দুই. একটি প্রসাধনী /কসমেটিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান; নাটুরা ব্রেজিল
তিন. একটি এনজিও (ননপ্রফিট অর্গানাইজেশন) : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি সোসাইটি।
চার. সাউথ আফ্রিকার বালুলে অভয়ারন্যের চোরাশিকার প্রতিরোধ ইউনিট : ব্ল্যাক মাম্বা এপিউ (এন্টি পোচিং ইউনিট)।
পাঁচ. বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী : শেখ হাসিনা।
প্রসঙ্গত: পরিবেশবাদী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান ও ডা. আতিক তাদের পুরস্কার কাউকে উৎসর্গ করেছেন কী না তা আমাদের জানা নেই। তবে তাদের দুজনকে মাতামাতিতে ঢাকা শহর অচল করে দেয়া হয়নি,আয়োজন করা হয়নি বিশাল বাজেটের নাগরিক সংবর্ধনাও। এবছরে কয়েকটি প্রসাধনী প্রতিষ্ঠান ও এনজিও’র সাথে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর এই এওয়ার্ড পাওয়াটা সত্যিই কতটা সম্মানের; সে প্রশ্ন কিংবা বিতর্কে যাচ্ছি না; কেবল ভাবছি। এ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় ঝড়; ও আমাদের গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে।
তবে, আর যাই হোক বাংলাদেশে জনসাধারণের নিরাপত্তা না থাকলেও; আমাদের রাষ্ট্রের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশ্বের মধ্যে ৩০তম ।
যার ফলশ্রুতিতে, প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্ক সফরে প্রায় ২৮জন বিশেষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা তাঁর সাথে এসেছেন। যা বিশ্বে প্রথম স্থান স্বীকৃতি স্বরূপ পুরস্কৃত হওয়া উচিত। অভিনন্দন দেয়া যেতো আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে যদি তার পুরস্কারটি পৃথিবীর আর কোনো প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী পেতেন।’চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ’ পুরস্কার প্রদান করা হয় যাদের তাদের মধ্যে শেখ হাসিনাকে খুব বেমানান মনে হচ্ছিলো কারণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও এনজিও বা ব্যাবসায়ী কোম্পানীর সাথে কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী কী করে পুরস্কান পান ?
এই প্রশ্ন এখন বিশ্ববাসীর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই পুরস্কার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুত মোনায়েম আহমেদের কাছে। তিনি বলেন এই পুরস্কারটা খুব দরকার ছিলো। কারণ বাংলাদেশ এই মুহুর্তে খুব চাপে আছে। এই পুরস্কারের কারনে জাতিসংঘের সাথে প্রধানমন্ত্রীর কিছুটা বরফ গললো। তার কাছে প্রশ্ন করা হয় এই পুরস্কার তো সাধরনতঃ কোনো রাষ্ট্রপ্রধান পান না শেখ হাসিনা পেলেন কি করে ?
তিনি বলেন, পুরস্কার বিষয়ে আর কিছু বলতে পারবোনা। কারণ এই বিষয়ে কাজ করেছে প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী এক সিনিয়র সাংবাদিক জানান, পুরস্কারটির জন্য বাংলোদেশ সরকার জাতিসংঘকে প্রায় দুশ কোটি টাকা উপর দিয়েছে বলে জাতিসংঘের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ঐ সাংবাদিক জানান, এই টাকা ক্ষমতাকে দীর্ঘ করতে হাসিনা সরকার বানকি মুনকে বিশেষ উপহার দিয়েছেন। তিনি বলেন হাসিনার ব্যাপারে জাতিসংঘ যথেষ্ট নেগেটিভ। তাই চেষ্টা করা হয়েছে শীতল সম্পর্ক ভালো করার।হাসিনার জন্য আর কোনো পুরস্কার বরাদ্ধ না থাকায় জাতিসংঘ টাকা হালাল করতে সিষ্টেম ভেঙ্গে বিভিন্ন বিপনন ও এনজিও ব্যাক্তিদের সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এই পুরস্কার তুলে দিয়েছেন।
একটি সরকারী সুত্রে জানা যায়, এই পুরস্কারের জন্য জয় বাংলাদেশের প্রায় ১৫ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। যে ব্যবসায়ীরা এই টাকা দিয়েছেন তাদের উপহার হিসেবে জয় সড়ক,সেতু, বিদ্যুতসহ বড় বড় কিছু কাজের টেন্ডার দিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। পুরস্কার কেনা প্রসঙ্গে বসুন্ধরা এবং যমুনা গ্রুপ প্রায় ৮০ কোটি টাকা দিয়েছে বলে জানা যায়। ঢাকায় সংবধর্ণা অনুষ্ঠানে খরচ দিয়েছে দুই মেয়র। তারা ঢাকা সিটির ঠিকাদারদের কাছ থেকে এই টাকা সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে। হাসিনা ক্ষমতায় আজীবন থাকার শেষ চেষ্টা কী তাহলে জাতিসংঘের পুরস্কার ?
হাসিনার সফর সঙ্গি দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈদ নিজাম এই প্রসঙ্গে বলেন, এটা সরকারের চাপ উদ্ধারের কৌশল হতে পারে। ৫ জানূযারীর নির্বাচনের পর সরকার পুরো বিশ্বের চাপে আছে, হতে পারে এটা বাঁচার কৌশল।
তিনি বলেন, হাসিনা পুরস্কার দিয়ে বিশ্বকে কী ম্যাসেজ দিলো তার চেয়ে বড় কথা বাংলাদেশের জনগন এই পুরস্কার কিভাবে গ্রহন করবে।
বৈশাখি টিভির সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, শেখ হাসিনা ১৯ সাল প্রর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াইয়ে এগিয়ে গেলেন। তবে এই পুরস্কার ওবামার মন গলাতে পারবে কিনা জানিনা। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে হাসিনার সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদীর সাক্ষাতে খুব বেশি কিছু পাননি হাসিনা। মোদী হাসিনাকে যতটুকু সময় দিয়েছে তার মধ্যে দুবার একটি কথাই উল্লেখ করেছেন, নির্বাচন কবে হচ্ছে?
বিজেপির একটি সুত্র জানায়,মোদী হাসিনাকে বলেছেন, ভারত চায় বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ভালো করতে। ভারতের ব্যবসায়ীদের চাপ আছে সম্পর্ক ভালো করার বিষয়ে। কারণ ৯০ এর পর ভারত বাংলাদেশের সাথে যে সম্পর্ক উন্নয়ন করেছে তা ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর শেষ হয়ে গেছে। দ্রুত একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দিয়ে ভারত সেই সম্পর্ক আবার উন্নয়ন করতে চায়।
বাংলাদেশের এক সিনিয়র সাংবাদিক জানান,শেখ হাসিনা নোবেল পুরস্কার পেলেও মানুষ তাকে গণহত্যা ও গণতন্ত্রহত্যাকারী হিসেবে চিনবে। তিনি বলেন, সরকার যতো টাকাই ব্যয় করুন না কেনো ,তাকে অল্প সময়ের মধ্যেই মধ্যবর্তী নিবার্চন দিতে হবেই।