হুজুররা বলতে থাকে দপ্তরে বসে সব রকমের মুখ রোচক কথাবার্তা আর মনোয়ার ও ওসমান হল তাদের গোপন শ্রোতা।
হাজী আরজ আলীর বাসায় গেলাম মাসিক চাদার লিগা। তো ফলমুলের মেলা লাগাইয়া দিল।ফলের টেবিল ঠেলতে আইল একটা মেয়ে ছেলে। হায়রে হাজী সাবের বাসার মাইয়া লোক পোশাকের ভিতরে কি পোশাক তা তো দেহা যায় হের ভীতরেও উচা নিচা পাহার পর্বত সব বুঝা যায়।
ওসমান বেশ সচ্ছল পরিবারের সন্তান হাজী সাহেবদের ঘরের কথা শুনে ওর গায়ে লাগে. সে মনোয়ারকে শুনিয়ে শুনিয়ে আস্তে আস্তে বলে হুজুরে ভাবতাছে হাজী সাব হের নিজের মাইয়া দিয়া হেগো ফলমুল নাস্তা দেয়ায়ছে আরে কামের ছেমড়ি দেইখাই এই অবস্থা আর হাজী সাহেবের সামনে বইয়া তো কইছেন হাজী সাব আপনেগো দানেই মসজিদ মাদ্রাসা এতিম খানার শত শত এতিম পোলাপান চলে। দুনিয়ায় সুদ হারাম হইলেও আখেরাতে খোদা সব আসল সুদ সহ ফেরত দিবো। আরে হুজুর মামুন তো এতিম আছিল ওরে তো এইবার ভর্তি নেন নাই কন মামুন খারাপ ছাত্র ওর লিগা মাদ্রাসার বদনাম হয় এতো যদি মান সম্মানের টানাটানি তো এতিম খানা কইয়া চাদা লন কে?
হাজী সাব গো সামনে কন এক কথা আর পিছে কন আরেক কথা। মনোয়ার ওসমানের কথার উত্তর দেয় না চুপচাপ হজম করে কারন ওসমান প্রায় মনোয়ারের জন্য ওদের চাচার বাসায় চাচাতো ভাইদের সাথে ভিসিডিতে গরম মশলা দেখার এন্তেজাম করে থাকে। আজকেও একটা চান্স হইতে পারে।
এর মাঝে কারী সাব দপ্তর থেকে বেড় হয়ে দেখে মনোয়ার আর ওসমান ওজু করছে। দুজনই কারী সাবের পেয়ারের লোক নইলে এতক্ষণে কারী সাব বলতো ঐ ওজু আস্তে আস্তে কর আস্তে আস্তে করলে ক্লাস একটা ফাকি দিতে পারবি। ৮ টা বাজে ওজু কইরা এক টা পর্যন্ত ধইরা রাখতে পারস না নাকি পাছা ঢিলা হ্যা টাইট দিয়া রাখবার পারস না?
কারী সাহেবের এই সব চটুল কথা বার্তা ওদের কাছে সাইদির ওয়াজের মতই মজা লাগে তবে ওসমান মাঝে মাঝে বিরক্ত হয় কিন্তু তা সবায় কে বলে না আর সবারে তো পাম্প দিয়া চলন যাইবো না, মনোয়ার বাগে থাকলেই হল বাকি গুলান দৌরের উপরে।
কারী সাহেব ক্লাসে। আজকের বিষয়টা বেশ জটিল। কারী সাহেবেরও সামলাতে কষ্ট হয়। হওয়ার কথাও। যতদূর মনে পড়ে কারী সাহেব নিজে ছাত্র থাকা অবস্থায়ও এই কিতাবের ক্লাস আসলেই সে বারন্দায় মাদ্রাসার পিছনের ঝোপঝাড়ে বা টয়লেটে যেয়ে ঝিম মেরে বসে থাকতো। একদিনের কথা মনে পড়ে
সে টয়লেটে যেয়ে ঝিম মেরে বসে আছে। যখন মনে হল যে ক্লাস শেষ তখন সে বেড় হয়ে সোজা ক্লাস রুমের দিকে হাটা ধরে। টয়লেটের পাশের সরু রাস্তায় দাড়িয়ে ছিল জসিম। জসিম কারী মজাম্মেলের সহপাঠী। জসিম সব কিছুই দেখলো। এই ক্লাস ফাকি দেয়ার তারও ইচ্ছে ছিল কিন্তু গত এক সপ্তাহ মাদ্রাসা ফাকি দিয়ে গতকাল মাত্র সে মাদ্রাসায় আসছে তাই তার সব কটা ক্লাস দাতে দাত চেপে করে যেতে হচ্ছে। মজাম্মেল ক্লাসে যেয়ে তার যায়গায় বসে যায়। জসীমও ওর নিজের যায়গায় বসে পড়ে।
নতুন ক্লাসের হুজুর আসতেই জসিম হুজুরকে জানান দেয়, হুজুর মজাম্মেল না পায়খানা করে ওজু না করেই কিতাব ধরতাছে।
সেই দিন বেশ উত্তম মাধ্যম কারী মজাম্মেলের পিঠে পড়েছিল। সেই কথা মনে পড়লে আজও তার হাত পা মগজে কেমন যেন চিনচিন করে উঠে।
এই জসিম কিনা করছে, হুজুরের লিগা আনা এক কুড়ি পেয়ারা থিকা নামাজের সময়ে নামাজ বাদ দিয়া এক বৈঠকে তিন চারটা মেরে দিল। মাত্র একটা মজাম্মেলের জন্য রাখলো। মুজাম্মেল কয় হুজুর কি গুইনা রাখছে যে পেয়ারা এক কুড়ি আছে, তুই নিজে এতোগুলান খাইয়া আমারে এক হাদস।
এই সব চিন্তা আর কিতাবের বোঝা থেকে মুক্ত করতেই যেন কোন এক ছাত্র বলে উঠে হুজুর মাওলানা ফজল তো সরকারের হাতে ধরা খাইলো। মাওলানা ফজল নাকি আল্লামা কুতকুতানি আর নোকতাপাড়ার পীর সাহেবের লগে মিটিং করছিল?
কারী সাহেবের এই বিষয়টাও ভালো লাগেনা কিন্তু কিতাবের কঠিন সব মাসালা থেকে পলায়নের অন্য কোন পথ না পেয়ে সে বলে, বলতে থাকে।
ফজল সাহেব তো নোকতাপাড়ার পীর সাহেবের কাছে গিয়েছিল। পীর সাহেব বলছে আমরা এই সবে নাই।
আমাদের লক্ষ হল জামাত শিবিরের পর আমাদের রাহে নাজাত পার্টি সব চেয়ে গুছালো রাজনৈতিক দল হবে। আর আল্লামা কুতকুতানি বলছে ফজল তোমরা তোমাদের কাজ করতে থাকো। আমরা আছি।
এর মানে কি দাড়াইলো? মানে হইলো মাওলানা ফজল যদি সরকারকে একটা মাইঙ্কার চিপায় ফেলতে পারে তখন আল্লামা কুতকুতানি সরকার আর মাওলানা ফজলদের মাঝে মদ্ধ্যস্ততা করবে। এতে জনগণ আর সরকারের কাছে তার ও তার নিজের দলের গ্রহণ যোগ্যতা বাড়বে। এই ফাঁকে বাংলাদেশকে আল্লামা কুতকুতানি সরকারকে দিয়ে পাকিস্তানের মত ইসলামী প্রজাতন্ত্রে রুপ দেয়ার চেষ্টা নিবে।
সরকার যদি ইসলামী প্রজাতন্ত্র আর বেলাসফামি আইন না করে তো মাওলানা ফজলরা বাংলাদেশটারে আফগানিস্তান বানায়ে ছাড়বে।
ফজরের আজান দিতেও আরও ১৫ মিনিট। মনোয়ারের হাতে মাথায় ট্রাঙ্ক আর বিছানা। এই বোঝা নিয়ে হাটতে হাটতে তাকে যেতে হবে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। পাপ করে কে আর তার বোঝা টানে কে।
মনোয়ার আর কারী মুজাম্মেলের মাঝে প্রায় ১০ হাতের ফারাক হবে। কারী সাহেবের হালকা চালের হাটা দেখে মনোয়ারের কাথা বালিশ বিছানা চাপা মাথায় আগুন ধরে যায়। সে দ্রুত হেটে কারী সাহেবের সামনে যেয়ে জিজ্ঞাসা করে ফেলে
কন তো হুজুর কি হইছিলো?
কারী সাহেব চুপ করে থাকে। কারী সাহেব ভাবতে থাকে মনোয়ারকে যদি কিছু একটা না বলি তো মনোয়ার হয় তো রাস্তায় তার ট্রাঙ্ক বিছানা ফেলে চলে যেতে পারে। কথায় আছে হাতি যখন কাদায় ফেঁসে যায় তখন নাকি চামচিকাও কিক প্র্যাকটিস করে।
কারী সাহেব পিছনে না তাকিয়েই বলতে শুরু করে। মনোয়ার কথার আওয়াজ শুনে কান খাড়া করে।
হাশরের ভাই আছর। আছর মাওলানা ফজলের লোক। গত ছুটিতে ও কালাম মুনির এই তিন জন বাসায় জানাইছে ওরা তাবলীগে যাবে। আর মাদ্রাসায় বলে গেছে বাসায় যাবে ছুটিতে। কিন্তু ওরা গেছে হাটহাজারি।
ঐখানে মাওলানা ফজল ট্রেনিঙের ব্যবস্থা করছিল। আমি ছুটি শেষে মাদ্রাসায় আইসা গোপন সুত্রে খোঁজ পাই। আমি আছরকে জিজ্ঞাসা করি আর বলি যদি আর কোন দিন শুনি তুমি মাওলানা ফজল বা আল্লামা কুতকুতানির সাথে আছো তাইলে আমি ব্যবস্থা নিমু। তুমি নোকতাপাড়ার পীর সাহেবের পিছনে থাকো। আমিও তার সাথে আছি। সব আছরের ষড়যন্ত্র সব আছরের চাল। আমি ওরে দেইখা নিমু।
কারী সাহেব চুপ হয়ে গেলে মনোয়ার ভাবতে থাকে। কারী সাহেব যদিও এইসব কথা সবাইরে কয় না কইতে পছন্দ করেনা কিন্তু মনোয়াররেই তো আপন লোক মনে করে কয়েকবার কইছে আল্লামা কুতকুতানির বিকল্প নাই আর মাওলানা ফজলের সাথে নাকি সে এক দুইবার তাবলীগেও গেছে আর এখন মনোয়ারের কাছেই উল্টা কতা কয়। যাক মাদ্রাসায় গেলেই শুনা যাইবো। হাশর মনোয়ারেরও পেয়ারের লোক।
হাশর নিজেই কইবো কি হইছিল।
হাশররে দেখলেই মনে হয় যেন ও ওর বাবার মত না ও ওর মায়ের মত দেখতে। ওর যদি একটু চুল বড় হইতো তো বলা যাইত ও আছর হাশরের ছোট বোন নসর।
কারী সাব তার থাকার ছোট রুমটায় ঢুকেই দেখে আছর তার খাবারের বাটি থেকে মাছের ঝোল ওর নিজের বাটিতে চালান করছে। কারী সাহেবকে দেখেই আছর চমকে যায়। আর চমকে যেতেই কিছু ঝোল কারী সাহেবের বিছানায় পড়ে যায়। কারী সাহেব দেখে আছরের বাটিতে শুধু শিং মাছের ঝোল না, তার জন্য আনা তিনটা টুকরা মাছের ছোট টুকরাটা ওর বাটিতে। আছর না হয়ে অন্য কেউ হলে কারী সাহেব খবর করে দিতেন। হুজুরের বাটি থেকে চুরি!!
সেই থেকে হাশরকে কারী সাহেবের ফাউ ফরমায়েশ খাটতে হয়। এই হুজুরের জামা কাপড় ধুয়ে দেয়া। এই হুজুরের জন্য দোকান থেকে সাবান তৈল কিনে আনা ইত্যাদি।
রাতের বেলা কারী সাহেব তার কামরা থেকে বেড় হলেন হালকা হওয়ার জন্য। বেড় হয়েই দেখেন হাশর বারান্দায় দাড়িয়ে বাতাস খাচ্ছে। কারী সাহেব হালকা হওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে বললেন ঐ হাশর এই দিকে আহো। হাশরকে নিয়ে কারী সাহেব তার ঘরে ঢুকে। ঢুকে বিছানায় শুয়ে বলে হাশর রে হাত পা গুলান হালকা দাবাইয়া দে। হাশর হুজুরের হাত দাবানো শুরু করে। হুজুর বলে এবার একটু বিছানায় ভালো মত বইয়া আমার পা গুলান মোচরাইয়া দে। আছর ভালো মত হুজুরের বিছানায় বসে পা মোচড়ে দিতে থাকে। হটাত হুজুর হাশরকে জড়িয়ে ধরে পুরো বেকায়দায়। হাশর তখন নিজের অজান্তেই চিৎকার করতে থাকে
বাঁচাও! বাঁচাও! বাঁচাও! বাঁচাও!