উন্নয়নের মহাসড়কে তীব্র গতিতে ছুটে চলা বাংলাদেশে প্রতিবছর হাজার হাজার নারী আর কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এই তো চলতি মাসেরই প্রথম আট দিনে সারা বাংলাদেশে ৪১টি শিশু ধর্ষণ ও ৩টি শিশু ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে। ধর্ষণের মাধ্যমে একটি ফুলের মতো নরম শরীরকে শুধু রক্তাক্ত করা হয় না, বরং রক্তাক্ত, ক্ষত-বিক্ষত করা হয় তার স্বপ্ন, আশা, ভালোবাসা আর ভরসা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীটি কোন জায়গাটায় ধর্ষণের শিকার হয়েছিলো মনে আছে তো? কুর্মিটোলার কাছেই, বিমানবন্দর সড়কের পাশে। ধর্ষক মজনু নিজেই স্বীকার করেছে একই জায়গায় সে ধর্ষন করেছে আরো সাত-আটজন নারী। এমন আরো কত মজনু সেই ভুতুড়ে এলাকার পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে কত নারীকে ধর্ষণ করেছে সেই সম্পর্কে আমাদের ধারণাও নেই। সব ঘটনা তো আর পাদপ্রদীপের আলোয় আসে না।
আমি দুইটা পেপার কাটিং দিচ্ছি। একটা দৈনিক যুগান্তর, ১৩ই জানুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা। আরেকটা দৈনিক প্রথম আলো, ১৭ই জানুয়ারি ২০১৭ সংখ্যা। এই যে জায়গাটার আজকে ভুতুড়ে অবস্থা, সেইটা কেন, কতদিন ধরে, তার একটা ব্যাখা দেব।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই রাস্তার দুই পাশে সৌন্দর্য্যবর্ধনের কাজ দেয়া হয় আওয়ামী লীগেরই চ্যালা ব্যবসায়ী আবেদ মনসুরকে। কথা ছিল ২০১৭ সালের মার্চ মাসে কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। তারপর তারা বলল- কাজ শেষ হবে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে। কিন্তু সেই কাজ তারা এখনো শেষ করে নি। এবং পুরো এলাকাটাকে অপরাধীদের আখড়ায় পরিণত করে রাখছে গত অর্ধযুগ ধরে।
এখন নানা বাতচিত চলছে। এই যে শহরের একটা বিস্তীর্ণ এলাকাকে অনিরাপদ করে রেখেছে, সেখানে অপরাধ হচ্ছে, নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে, জনদরদী মেয়ররা কেন কিছু বলে না?
প্রশ্ন হচ্ছে, বলবে কেন এবং কীভাবে? কেন’র উত্তর হচ্ছে, এই সময়কালে যারা মেয়র ছিল তাঁদের একজন আত্মস্বীকৃত ‘ফাউল’ প্লেয়ার। অন্যজন মেয়র হইছে ‘খিচুড়ি-চা’ খাওয়ার ভোট দিয়ে। এরা তো আপনার প্রতিনিধিই না, আপনার প্রতিনিধি হলে সে না হয় গিয়ে আবেদ মনসুরকে ধরতো। যে কাজ ২০১৭ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল কেন সেই কাজ ২০২০ সালেও শেষ হয় নি। ভাবতে অবাক লাগে যে ভোট ডাকাত দিনদুপুরে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করিয়ে, ভোট ডাকাতির মাধ্যমে উত্তরের মেয়র হয়েছিল লোকে তাতেই বলে রিয়েল হিরো! সুপার ম্যান!
খোঁজ নিয়ে দেখুন। এই আবেদ মনসুর ২০১৮ সালের নির্বাচনের জন্য নমিনেশন চাইছিলো আওয়ামী লীগের। তো আওয়ামী লীগের চ্যালাকে কীভাবে জবাবদিহি করবে আওয়ামী লীগের নমিনেশন পাওয়া মেয়র। আপনারা যারা মনে করেন, আওয়ামী লীগের মেয়র সরকারের সাথে মিলে কাজ করবে, তাদের উচিৎ কচুগাছে গিয়ে গলায় দড়ি দেয়া। কারণ সেই রামছাগলেরা এইটুকু বোঝে না যে চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। দুই চোরা মাসতুতো ভাই চুরি ছাড়া কিছু করতে জানে না। যারা বুঝে না তাদের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।
এবার নজর দিয়ে অন্যদিকে। দেশের প্রচলিত আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে ধর্ষনের বিচার শেষ করার কথা থাকলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে মামলা শেষ হতে সময় লাগছে দশ বছর। বার বার প্রমাণ করতে গিয়ে ভিকটিম দ্বিতীয়বার ধর্ষণের শিকার হয়। বাংলাদেশে ধর্ষণ মামলায় শেষ পর্যন্ত সাজা হয় মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশের। আওয়ামী লীগ আমলে ন্যায়বিচার সোনারপাথরবাটির মতো। আর এই বিচারহীনতার কারণেই বাড়ছে ধর্ষন।