ছাত্র ইউনিয়ন পণ ধরেছে সে আর খেলবে না। এভাবে দিনে দুপুরে বেইজ্জতি। অনেক মেনেছে। আর না! এর একটা বিহীত এবার করেই ছাড়বে। পৃথিবী কাঁপানো বিপ্লবী, লেলিন পরবর্তী যুগের পোড়খাওয়া প্রমানিত কমিউনিস্ট কমরেড সেলিমকে একটা বিহীত করতে হবে। নইলে খেলবো না।
দেখা গেলো কিছুই হচ্ছে না। কমরেড সেলিম নাকের লোম ছিড়ে দিনাতিপাত করছেন। তাকে রিচ করা যাচ্ছে না। না বাসায়, না পার্টি অফিসে না মোবাইল ফোনে। শুধু মাঝে মাঝে ‘আপা’ ফোন দিলে ধরছেন। ছাত্র ইউনিয়ন কল দিলেই আর পাওয়া যাচ্ছে না।
এভাবে দিনের পর দিন রাতের পর রাত কুয়াশা ভরা হতাশায় কেটে যেতে লাগলো ছাত্র ইউনিয়নের সময়।
সহসা কমরেড কল দিলেন। বললেন অফিসে আসো।
অফিসে ছাত্র ইউনিয়ন পৌছলে বলা হলো, আহা বোঝোই তো, নিজেদের মধ্যে মাঝে মাঝে ওমন দুএকটু হয়। ওটা ধরে বসে থাকলে হবে না। তাছাড়া আপা আমাকে বলেছেন, ব্যাপারটা তিনি দেখবেন। আপার উপরে বিশ্বাস করে কখনো ঠকেছি বলো?
ছাত্র ইউনিয়ন সম্মতির মাথা নাড়ে।
কমরেড বক্তৃতার ঢং এ উচ্চস্বরে বলে চললেন, এই যে আজকে দেশে সাম্প্রদায়িকতায় ভরে যাচ্ছে, মৌলবাদের দেশে পরিণত আমাদের স্বদেশ (সাথে সাথে টেবিকে সশব্দে চাপর!!)। এই দেশকে আমাদেরই তো গঠন করতে হবে তাই না? এই যে দেখো ইমতিয়াজ আর প্রীতির বিষয়টা। বিয়ের বাইরে ইমতিয়াজ একটু পাহাড় খুজতে গিয়েছিলো। নইলে পাহাড়ে বসে একটু খামচা খামচিই করতে চেয়েছিলো। এটা কি কোন দোষ? এখন আমরা সামান্য ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে যদি ব্যাস্ত থাকি তাহলে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িকরা এই পাহাড়ি ইস্যুটাকে নিয়ে সমস্যা তৈরী করবে। এটা আমরা হতে দিতে পারি না।
সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলিবাদ শব্দদুটি উচ্চারিত হবার সাথে সাথে ছাত্র ইউনিয়নের গায়ে দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ, জাতির জনক, বিপ্লব, লেলিন থেকে শুরু করে লালন পর্যন্ত সমস্ত ইতিহাসের বিদ্যুৎ বয়ে গেলো। শরীরটা চার্জড আপ হয়ে গেলো। বিদ্যুতের ধাক্কার মেমরি সেল থেকে কয়েকদিন আগের চটকানা, লাত্থি, ঘুষি, কানমলা সব ভুলে গেলো। সাথে সাথে আবেগে টিকতে না পেরে বলে উঠলো ‘জয় বাঙলা’!
সেলিম আনন্দের হাসি হাসলেন।
ছাত্র ইউনিয়ন অফিসে থেকে বেড়িয়ে গেল। বুকে এখন ভরা সাহস! আগামী অন্তত এক বছর এ চার্জের চোটে চটকানা লাথি মুখ বুঝে সহ্য করা যাবে।
ছাত্র ইউনিয়ন বের হয়ে গেলে পরে পাশের রুম থেকে অট্টহাসি দিয়ে একটি কন্ঠ বলে উঠলো। সেলিম, ইউ আর আ জিনিয়াস!
সেলিম বললো, ইট ওয়ার্কস এভরি টাইম!
এরপরে দুজনেই হাসতে লাগলো পাশাপাশি দুই রুম থেকে।