১৭ অক্টোবর হলে সিরিজ বোমা হামলার এক যুগ। ২০০৫ সালের সেই দিনে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে দেশের ৬৩টি জেলায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছিল। শুধু মাত্র মুন্সিগঞ্জ জেলা বাদে ৪৫০ স্থানে এ হামলা করেছিল জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)।
তবে দীর্ঘ এই সময়ে জঙ্গি সংগঠন জেএমবির অস্থিত বিলীন হলেও সৃষ্টি হয়েছে নব্য জেএমবি। ওই সংগঠনের সদস্যরা এখনো সক্রিয়ভাবে কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে নব্য জেএমবিও এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে বলে দবি করেছে আইন-শৃঙ্খালা বাহিনীর সদস্যরা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এক যুগ আগে এই দিনে বোমা হামলার জন্য হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, বিমানবন্দর, বাংলাদেশে থাকা মার্কিন দূতাবাস, জেলা জজ কোট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, প্রেসক্লাব, পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ সরকারী বিভিন্ন স্থাপনাকে টার্গেট করা হয়েছিল। টার্গেট অনুযায়ী হামলা করা হয়েছিল। সেই দিনের হামলার ঘটনা মনে পড়েলে এখনো আতঙ্কিত হয়ে উঠেন অনেকেই।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, জঙ্গিরা দেশে অশান্তি ও দেশ-বিদেশে তাদের অবস্থান জানান দেয়ার জন্য এমন হামলা করেছিল। এছাড়াও আল্লাহর বিধান ইসলামের আইন কায়েম ও প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা বাতিলের দাবিও জানিয়েছিল জেএমবির সদস্যরা। তৎকালীন সময়ে পাওয়া জেএমবির লিফলেটের মাধ্যমে এমন তথ্য জানা গিয়েছিল।
এদিকে, সিরিজ বোমা হামলার পর থেমে থাকেনি জেএমবির কার্যক্রম। এক পর্যায়ে সিরিজ বোমা হামলার পাঁচ বছর পর ২০১০ সালে জেএমবির সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকার। পরবর্তীতে গোপনে কার্যক্রম চালাতে থাকে জঙ্গিরা। হামলা চালায় রাজধানীর গুলশান হলি আর্টিজান, শোলাকিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে। তবে বর্তমানে তারা সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জেএমবি থেকে নব্য জেএমবি নামে চলছে তাদের কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, ধারাবাহিক অভিযানের ফলে নব্য জেএমবির শক্তি অনেকটা কমে গেছে। বড় ধরনের কোনো হামলার করার ক্ষমতা এখন তাদের নেই। তারা ছোট ছোট ভাগ হয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা করছে বলেও মনে করেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এই সমস্ত সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী চক্র প্রথমত সরকারকে বিব্রত করতে চায়। আর যারা প্রগতিশীল মানুষ আছে, তাদেরকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাদের কথিত জিহাদ করতে চায়। তবে এই মুহূর্তে বড় ধরনের হামলা করার কোনো সক্ষমতা নেই বলেও জানান মনিরুল।
এদিকে, সিরিজ বোমা হমলার এক যুগ চলে গেলেও এখনো শেষ হয়নি ওই বিচার। ১৫৯টি মামলায় প্রথমে আসামি করা হয়েছিল ২৪২জনকে। পরবর্তীতে আরো ১ হাজার ১০৬ জনকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছিল ৯৬০ জনকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মামলাগুলোর মধ্যে ১০টি মামলার চুড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। ১৪৯টি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। বাকি ১০টি মামলার তদন্ত এখনো চলছে। আর যেসব মামলার রায় হয়েছে তার মধ্যে ২৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ৩২০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে এবং ৩৪৯জন আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে।- বিবার্তা
Nationalist View – analysing Bangladeshi politics.
Copyright © 2020 Nationalist View – All rights reserved.