অবৈধ, তাঁবেদার সরকার এর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা কে বলপূর্বক, কৌশলে দেশ ত্যাগ করিয়ে বিচার বিভাগ কে কুক্ষিগত করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাইছেন। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর অবৈধ সংসদে ষোড়শ সংশোধনী কে হালাল করলেও মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট এর আপত্তির কারণে হাসিনার নীল নকশা অবশেষে বাস্তবায়ন হতে পারে নি।
এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ হলে আইনের নানা ধাপ পেরিয়ে ২০১৬ সালের ৩ জুলাই বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বাতিল করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এরপর সুপ্রিমকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ বিবরণী প্রকাশিত হয় ৩১ জুলাই।
৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারকে ‘অকার্যকর’ এবং ‘বর্তমান সংসদকে ‘অপরিপক্ক’ বলে উল্লেখ করা হয়। এই রায়ের ফলে একদিকে শেখ হাসিনার ‘সরকার এবং সংসদ’ আইনগত বৈধতা হারায় অপরদিকে বিচারক অপসারণ প্রক্রিয়ার নিষ্পত্তির জন্য ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের সময় করা সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান পুনরায় সংবিধানে পুনর্বহাল হয়।
বিচারপতিদের অপসারণে শেখ হাসিনা যা করতে চেয়েছিলেন…..
বিচারপতিদের অপসারণে শেখ হাসিনার সংশোধনীতে ছিল : ‘প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্যসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠ সদস্যের প্রস্তাবক্রমে রাষ্ট্রপতির আদেশে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণ করা যাবে। …..সাংসদদের প্রস্তাব-সম্পর্কিত এবং বিচারকের অসদাচরণ ও অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।….কোনো বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ করে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করতে পারবেন।
দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন থাকলে শেখ হাসিনা থাকেনা, আওয়ামী লীগ থাকেনা। বর্তমান অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে যে কোনো সময় আদালত অবস্থান নিতে পারে এমন আশংকা সবসময় শেখ হাসিনাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তাই বিচারপতিদের বশে রাখতে শেখ হাসিনা ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণ করা ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনেন যাতে তার অপকর্মের বিরুদ্ধে বিচারপতিরা কোনো অবস্থান নিতে না পারেন। দেশের বিজ্ঞ আইনজীবীদেরও প্রায় সবাই ষোড়শ সংশোধনীকে বেআইনি ও অসৎউদ্দেশ্য প্রনোদিত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তাই এস কে সিনহাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়ার পর এখন ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে নিজেদের মতো রায় বের করতে ব্যাংক ডাকাত সরকারের এটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম ২৪ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে ৯০৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদন জমা দিয়েছেন।
মাহবুবে আলম রিভিউ আবেদন সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের আমলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নামে যে বিধান মার্শাল ল’ ফরমান দ্বারা সংবিধানে সন্নিবেশিত করা হয়েছিল, সেটিকে বাতিল করে ১৯৭২ সালের মূল যে অনুচ্ছেদ তাতে আমরা ফিরে যেতে চাই’।
এখন প্রশ্ন হলো, বিচারপতি অপসারণের সর্বগ্রহণযোগ্য বিধানটি শুধুমাত্র জিয়াউর রহমানের আমলে করার কারণে যদি বাতিল করতে হয় তাহলে বর্তমান আওয়ামী লীগেরও রাজনীতি করার বৈধতা থাকেনা। কারণ বাংলাদেশে শেখ মুজিব সাংবিধানিকভাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করে দিয়ে গঠন করেছিলেন একদলীয় বাকশাল। আর স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান তার ক্ষমতাবলে আওয়ামী লীগকে নিজ নামে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এখন আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে স্বনামে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে যে বিধান জারি করেছিলেন জিয়াউর রহমান সেই বিধানও ভবিষ্যতে কোনো আদালত যদি বাতিল ঘোষণা করে তাহলে আওয়ালীগও নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
সুতরাং, স্বৈরাচার বাকশাল এর জনক শেখ মুজিব এর কলঙ্ক সংবিধান এর চতুর্থ সংশোধনী এবং ঠিক একই ভাবে যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার কলঙ্ক সংবিধান এর ষোড়শ সংশোধনী। মুজিব যেভাবে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে গণ তন্ত্র কে গলা টিপে হত্যা করেছিল, ঠিক একই ভাবে হাসিনা ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রধান বিচারপতি সিনহা’র সাহসী ভুমিকার কারণে হাসিনা সফলকাম হতে পারেনি। উলটো মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট হাসিনার সরকারকে ‘অকার্যকর’ এবং সংসদকে ‘অপরিপক্ক’ বলে রায় দিয়েছেন। যার ফলে আশা করা যায়, এই ঐতিহাসিক রায় ভবিষ্যৎ এ এই অবৈধ, স্বৈরাচার, তাঁবেদার আওয়ামী সরকারকে বিচার এর সম্মুখীন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।