নিজস্ব প্রতিবেদক: গণতন্ত্রের মা, অন্যায় কারাবন্দি, নিরপরাধ, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তিনবারের নির্বাচিত সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করা হয়েছে বুধবার, ডিসেম্বর ৪, ২০১৯, দুপুরে ।
বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ বলে জানিয়েছে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নেতারা।
দুপুরে নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা জানিয়ে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ডাক্তার সরকার মাহবুব আহমেদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এতো অসুস্থ যে তিনি কারো সাহায্য ছাড়া চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া এমনকি শরীরের তীব্র ব্যথার কারণে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেন না। যেকোনো সময় তিনি স্থায়ী পঙ্গুত্ববরণ করতে পারেন। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগজনিত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে তার কিছু হলে তার দায়ভার সম্পূর্ণরূপে সরকারের বলেও দাবি করেন তারা।
তিনি আরও বলেন, সুচিকিৎসা পেলে এই অবস্থা হতো না। আমরা আশা করি, মাননীয় আদালত তাকে তার প্রাপ্য জামিন দিয়ে মুক্ত পরিবেশে তার পছন্দমত হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেবে। অন্যথায় চিকিৎসক সমাজ নিরবে বসে থাকবে না।
আপামর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন গড়ে তুলবে।
ডা. শামীম লিখিত বক্তব্যে বলেন, আগামীকাল ৫ই ডিসেম্বর আদালত বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের কাছে বেগম খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্ট তলব করেছে। ৭৫ বছর বয়স্ক এই মহিয়সী নারী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বরণের পর বিএনপির হাল ধরেন। দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আপোষহীনভাবে নেতৃত্ব দিয়ে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিষিক্ত হন এবং বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলেও ১/১১ পরবর্তী সময় তা ব্যাহত হয়।
তিনি বলেন, ১/১১ সরকার কর্তৃক দায়েরকৃত একটি ভিত্তিহীন মামলায় আদালতের রায়ে বর্তমানে তিনি কারাবন্দী আছেন। একইসময়ে একই রকম মামলা যা ক্ষমতসীন দলের নেতাকর্মীদের নামেও ছিলো তা প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং অন্যরাও অধিকাংশ জামিনে আছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে বেগম খালেদা জিয়া তার স্বাভাবিক আইনগত অধিকার থেকেও বঞ্চিত।
চিকিৎসক এই নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে Highly Active Deforming, Rheamatoid arthritis, Uncontrolled Diabetes Mellitus, Hypertension, Adhesive capsulitis, Recurrent hyponatraemia and Aneamia রোগে ভুগছেন। এ অবস্থায় তিনি জেলখানায় সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় এবং স্বাভাবিক পরিবেশ না থাকায় এসব রোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিয়েছে। যেমন- Rheumatoid arthritis, Diabeties রোগের কারণে তার Bilateral froyen shoulder, flexion deformities of both elbows, Wrist, Metacarpophalangeal (MCP) joint and Proxima interphalangeal (PIP) joint, Cervical spondylosis, Lumber spndylosis with Radiculopathy, Bilateral Carpal Tunnel Syndrome, SjogrenÕs Syndrome.
এসব জটিলতার কারণে তার হাত এবং পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টগুলোসহ শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট ফুলে গেছে এবং তাতে তীব্র ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে যার কারণে জয়েন্টগুলি Stiff (শক্ত) এবং deformed (বাঁকা) হতে চলেছে, যা কিনা অচিরেই স্থায়ী রূপ ধারণ করতে পারে এবং যার কারণে বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা, ওঠাবসা এমনকি নিজ হাতে খাবার পর্যন্তও খেতে পারছেন না।
ডা. শামীম বলেন, গত পরশুদিন (সোমবার) ডাক্তাররা বেগম খালেদা জিয়ার ওজন মাপতে বারবার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তীব্র ব্যাথায় তিনি বিছানা থেকে নামতে পারেননি। তাছাড়া তিনি ব্যাথার কারণে ঘুমাতেও পারছেন না ভালোভাবে। ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো- ওনার ডান পায়ে একটি গুটি ওঠেছে যাকে মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় Rheumatic nodule বলে যা highly tender বা স্পর্শ করা মাত্রই তীব্র ব্যাথা অনুভুত হয়। যেটি পরবর্তীকালে vasculitis কিংবা gangrene এ পরিণত হতে পারে ।
তিনি বলেন, ১৯৯৯ সাল থেকে বেগম জিয়া Methotrexate নামক একটি ঔষধ Rheumatoid Arthritis এর জন্য খাচ্ছেন যা কিনা লিভার, কিডনীসহ রক্তের সকল সেলসমুহ কমিয়ে দিয়ে pancytopenia নামক ভয়ঙ্কর এক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া ম্যাডামের ডায়াবেটিস কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, কারণ একটা ছোট বদ্ধ ঘরে এতদিন হাটাচলার সুযোগ পাননি। Sjogren syndrome কারণে চোখ শুকিয়ে যায় তাই দিনে কিছুক্ষণ পরপর artificial tear দিতে হয়।
ড্যাবের এই নেতা বলেন, ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে নিজ পায়ে হেটে জেলখানায় প্রবেশ করেন, নিজে হেঁটে দোতলায় তার নির্ধারিত রুমে যান, এমনকি জেলখানা থেকে এর আগেরবার যখন বিএসএমএমইউতে আসেন তখন গাড়ি থেকে নেমে নিজে লিফ্ট পর্যন্ত হেঁটে যান। সময়ের পরিক্রমায় তিনি কিভাবে আজকের অবস্থায় উপনীত হলেন- আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে সঠিক চিকিৎসার অভাবে তিনি ধীরে ধীরে এই অবস্থায় উপনীত হয়েছেন। তিনি সুচিকিৎসা পেলে এই অবস্থা হতো না।
ডা. শামীম আরও বলেন, আমরা জানি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর সংজ্ঞা অনুযায়ী স্বাস্থ্য মানে হলো- কোনো ব্যক্তির Physical, Mental, Spiritual wellbeing. কিন্তু এ তিনটি উপাদানের কোনো একটিও বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে প্রতিপালিত হচ্ছে না বিধায় তিনি ভীষণ অসুস্থ এবং যথাযথ চিকিৎসা না পেলে যেকোনো সময় তার শারীরিক স্থায়ী পঙ্গুত্ব এবং ডায়াবেটিস ও হৃদরোগজণিত বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম টিপু, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, ড্যাবের সিনিয়র সহ সভাপতি ডা. মো. আবদুস সেলিম, ড্যাব ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ডা. মাসুম বিল্লাহ, ডা. গালিব প্রমুখ।