১০-ই নভেম্বরের শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও হৃদয়ে বেদনার রক্ত ক্ষরণের আভাস পেলাম। এই রক্ত ক্ষরনের রঙ গনহত্যা, ধর্ষন, দখল, লুটপাট, উচ্ছেদ সহ সকল রাস্ট্রীয় অন্যায়-অবিচার-নিপীড়ন-শোষন-শাসনের জাটাকলে পীষ্ট অভাগী-দূর্ভাগা জুম্মজাতির বেদনার বর্ন। এই বেদনার বর্নকে বর্ণীল করে চলছে রাস্ট্রীয় প্রশাসনের নাকের দগায় বসে নরঘাতকের হিংসার উল্লাসনৃত্য। উল্লাসের উচ্চারিত ধ্বনি জুম্ম পাহাড়বাসীকে বলে দিচ্ছে এই রাস্ট্র তাদের চায় না, চায় তাদের পাহাড়, ভুমি, সম্পদ! সাধয়ারনভাবে দেখলে এই রক্তক্ষরন পাহাডের জুম্মদের জীবনের সাথে এমনভাবে মিশে গেছে যে তাকে আর আলাদাভাবে দেখাটা অনেকের মনপূত নাও হতে পারে! তারপরও জুম্ম হিসেবে নিজের মানবিক চেতনা ও দায়িত্ববোধকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারছি না বলে এই টুকরো টুকরো ইতিহাসকে স্মরন করতে বাধ্য হচ্ছি। প্রথমে খুব লজ্জার সাথে বলতে হচ্ছে যে, “পাহাড়ে এযাবত কালে কয়টি গনহত্যা শিকার হয়েছে আমাদের এই জুম্মজাতি/বা জুম্মদের বিরুদ্ধে উল্ল্যেখযোগ্য কয়েকটি গনহত্যার ইতিহাসের কথা” এরুপ প্রশ্ন জানতে চাইলে আজকে আমাদের মত তরুন প্রজন্ম না জানার লজ্জায় মাধা নিচু করে থাকে! এই না জানার লজ্জাকে দূর করতে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
এখানে আমি http://www.angelfire.com/ab/jumma/massacre.html থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমার লেখাটা সাজিয়ে উপসস্থাপনের চেষ্টা করছি। সেই সাথে ১৭ ই নভেম্বরে, ১৯৯৩ সালে সংগঠিত নানিয়াচর গনহত্যার ঘটনাকে ক্ষুদ্র পরিসরে তুলে ধরছি।
১)কাউখালি গনহত্যাঃ পার্বত্য ইতিহাসে বাংলাদেশ সেনাবাহীনি আর সেটেলার দ্বারা সর্ব প্রথম গনহত্যা হয়েছিলো রাংগামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার কলমপতিতে ২৫শে মার্চ ১৯৮০ সালে , সেখানে ৩০০ জুম্ম ভাই-বোনদের মিটিংএর মধ্যে ডেকে গুলি করা হয়েছিলো এবং ১০০০ এর বেশি পাহাড়ী মানুষ রিফিউজি হিসেবে ভারতের ত্রিপুরয়ায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় আজ ঐ স্থানগুলো বাঙালিদের দখল করেছে, বৌদ্ধ মন্দিরের জায়গায় আজ মসজিদ বানানো হয়েছে।
২)বানরাইবারী– বেলতলী ও বেলছড়ি গনহত্যাঃ ২৬শে জুন ১৯৮১ সালে ঘটে ২য় গনহত্যা। বানরাইবারী- বেলতলী ও বেলছড়িতে বাঙালি সেটেলারা প্রতক্ষ্য সেনা মদদে ৫০০ পাহাড়ি হত্যা ও গুম করে ছিলো প্রায় সাড়ে চার হাজার পাহাড়ি জুম্ম ভারতে পালিয়েছিলো। ঐ অঞ্চল আজ সেটেলার লোকালয় আর সেনা ক্যাম্প।
৩)তেলাফং–আসালং– গৌরাঙ্গ পাড়া– তবলছড়ি– বরনালা গনহত্যাঃ ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮১ সেনা এবং সেটেলার মিলিত বাহীনি তেলাফং-আসালং- গৌরাঙ্গ পাড়া- তবলছড়ি- বরনালা (ফেনীর কাছে) মোট ৩৫ টি পাহাড়ি গ্রাম আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছিলো।এটে ১০০০ জুম্ম নিহত হয়েছিলো, অগনিত পাহাড়ি ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলো আর বাংলাদেশ সরকার আজো ও ঘটনা অস্বীকার করে এবং পরবর্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ দেয়া হয়েছিলো মাত্র ১৮ ডলার করে। আজ সেই জায়গাগুলি বাঙ্গালী বসতিতে পরিনত হয়েছে।
৪)গোলকপতিমা ছড়া– মাইচ্যেছড়া – তারাবনছড়ি গনহত্যাঃ ১৯৮৩ সালের জুন মাসের ২৬ তারিখ জুলাই মাসের ১১, ২৬ ও ২৭ তারিখ এবং আগষ্ট মাসের ৯, ১০ ,১১ তারিখ সেনা সেটেলার বাঙ্গালীরা গোলকপতিমাছড়া- মাইচ্যেছড়া – তারাবনছড়াতে পাহাড়ি-জুম্মদের গ্রামগুলোতে অগ্নি সংযোগ লুটতরাজ হত্যা ধর্ষণ , নারকীয়তা সৃষ্টি করেছিলো। এই গনহত্যায় ৮০০ জুম্ম নিহত হয়েছিল। নিহতদের সিংহ ভাগ বৃদ্ধ, নারী ও শিশু। গনহত্যার পর সরকার সেখানে বাঙ্গালী বসতি স্থাপন করে।
৫)ভুষণছড়া গনহত্যাঃ ৩১ মে ১৯৮৪ সেলে ভুষণছড়া গনহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। প্রথমে শান্তিবাহীনির সেনা ক্যাম্প আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবে বাঙালি সেনা সেটেলার হায়েনার দল ৩০৫ সেনা ব্রিগেড, ২৬ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও বি ডি আরের ১৭ নং ব্যাটালিয়ন মিলে নিরস্ত্র পাহাড়ি গ্রাম ( হাটবাড়িয়া, সুগুরী পাড়া, তেরেঙ্গা ঘাট, ভূষণছড়া, গোরস্তান, ভূষণবাঘ) জালিয়ে ছিলো। ৪০০ পাহাড়ি নিহত হয়েছিলো যার উল্লেখ যোগ্যা সংখ্যক ছিলো শিশু ও নারী। অনেক পাহাড়ি নারী সেনা দ্বারা গন ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়েছিলো। আর ৭০০০ পাহাড়ি রিফিউজি হয়েছিলো ভারতে।
৬)পানছড়ি গনহত্যাঃ ১ মে ১৯৮৬ সালে এই গনহত্যা সংঘটিত হয় পানছড়িতে। ২৯শে এপ্রিল শান্তিবাহীনি বি,ডি,আর ক্যাম্প আক্রমণ করেছিলো। তার ফলশ্রুতিতে সেনা আর সেটেলার বাঙ্গালীরা যৌথভাবে সেখানকার পাহাড়ি গ্রাম গুলোর মানুষজন কে ডেকে একটা মাঠে জড়ো করে নির্মমভাবে জবাই ও গুলি আর হত্যা। এতে ১০০ জুম্ম ভাইবোন মারা পড়েছিল।
৭)মাটিরাঙা গনহত্যাঃ পানছড়ির ঠিক একদিন পর ২রা মে ১৯৮৬ সালে মাটিরাঙা তে পাহাড়ি রিফিউজি যারা ভারতে পালাচ্ছিলো, সেই নিরস্ত্র দেশত্যাগী মানুষের উপর এলোপাথারি গুলি চালিয়েছিলো বর্বর নরপশু সেনারা এতে ৭০ জন পাহাড়ি বৃদ্ধ,, শিশু, নারী, নিহত হয়েছিলো।
৮)কুমিল্লাটিলা-তাইন্দং গনহত্যাঃ ১৮ মে ১৯৮৬তে, আগের গনহত্যাগুলির ক্ষত না শুকাতেই মাটিরাঙা থেকে প্রায় ২০০ জন ত্রিপুরা নারী পুরুষের দল যারা বাঁচার আশায় শিলছড়ি থেকে ভারতীয় সীমান্তের দিকে পার হচ্ছিলো কিন্তু তাইদং , কুমিল্লাটিলা গ্রামের মাঝামাঝি এক সরু পাহাড়ি পথ পাড়ি দেবার সময় বাংলাদেশ বি ডি আর এর ৩১ ব্যাটালিয়নের নর পশু জোয়ানরা তাদের উপর হামলা চালায় যার ফলে প্রায় ১৬০ জন নিহত হয় , এমনকি বর্বর পশু জোয়ান বাহীনির গুলির হাত থেকে বেচে যাওয়া আহত দের কে সেটেলার বাঙাল এনে বেয়নেট খুচিয়ে ও দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঐ ঘটনার বেচে যাওয়া অল্প কিছু সাক্ষী আজো আছে।
৯)হিরাচর, শ্রাবটতলী, খাগড়াছড়ি, পাবলাখালী গনহত্যাঃ ৮, ৯, ১০ আগস্ট ১৯৮৮ সালে হিরাচর, শ্রাবটতলী, খাগড়াছড়ি, পাবলাখালী তে আনুমানিক ১০০ পাহাড়ি জুম্ম কে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। অনেককে গুম করা হয়।গণধর্ষণ করা হয় পাহাড়ি নারীদেরকে।
১০)লংগদু গনহত্যাঃ ৪ঠা মে, ১৯৮৯ সালে লংগদু তে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ অজ্ঞাত নামা লোকের হাতে খুন হন। এর দায় চাপানো হয় শান্তিবাহীনির কাঁধে। এর জের ধরে সেনা সৃষ্ট ভি,ডি,পি ও সেটেলারদের দল সেনা পাহাড়ী গ্রামে হামলা করে। এতে নিহত হয় ৪০ জন আদীবাসি নারী পুরুষ শিশু। তাদের মৃতদেহ পর্যন্ত ফেরত দেয়া হয়নি। পুড়িয়ে দেয়া হয় বৌদ্ধ মন্দির। এমন কি তৎকালীন সাবেক চেয়ারম্যান অনিল বিকাশ চাকমার স্ত্রী , সন্তান ও নাতি কে পর্যন্ত নির্মম হত্যা যজ্ঞের শিকার হতে হয়। সেটেলার হায়েনা রা আজো অনিল বিকাশ বাবুর সমস্ত জমি দখল করে রেখেছে।
১১)মাল্যে গনহত্যাঃ ২রা ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ তে মাল্য গনহত্যা সংঘটিত হয়। ঐ দিন মারিস্য থে রাঙ্গামাতটি গামী যাত্রীবাহী লঞ্চে এক বোমা বিস্ফোরনে এক যাত্রী ও চালক নিহত হন। বাংগালী আধ্যচুত মাল্যেতে লঞ্চটে পৌছা মাত্র সেখানে ঔত পেতে থাকা সশস্র সেটেলারা জুম্মযাত্রীদের উপর হামলা করে। এটে ৩০ জন জুম্ম নিহত হন যার মধ্যে ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এটে অনেক যাত্রী রাংগামাটি হয়ে ঢাকা যাচ্ছিল। প্রতক্ষ্যদর্শীদের ভাষ্য থেকে জানা যায় যে এই ঘটনাটি আর্মিদের সাজানো পরিকল্পিত হত্যা কান্ড যা পরে সগনমাধ্যমে শান্তিবাহিনীর উপর চাপানো হয়।
১২)লোগাং গনহত্যাঃ ১০ই এপ্রিল,১৯৯২ সালে লোগাং-এ জুম্ম জাতির বিরুদ্ধে নির্মম হত্যা যজ্ঞ চলে। সেই দিন এক পাহাড়ী মহিলা তার গাবাদি পশু চড়াতে গ্রামের অদূরে গিয়েছিলো সেখানে দুই জন সেটেলার বাঙাল দ্বারা সে ধর্ষিত হয়। এতে এক পাহাড়ি যুবক বাধা দিলে সেটেলাররা তাকে সেখানেই হত্যা পরে এই ঘটনা শান্তিবাহীনির উপর চাপানো হয় এর জের ধরে সেনা-সেটেলার দল প্রায় ১৫০০ পাহাড়ি জনসংখ্যা অধ্যুষিত গ্রামে হামলা চালিয়ে হত্যা করে প্রায় ৪০০ পাহাড়িকে।এটে ৮০০ পাহাড়ি বাড়ি ঘরে লুটপাট অগ্নিসংযোগ করা হয়। পাশের গ্রামগুলো থেকে প্রায় ২০০০ হাজার পাহাড়িকে শরনার্থী হয়ে ভারতে পালাতে হয়।
১৩)নানিয়াচর গনহত্যাঃ ১৭ নভেম্বর ১৯৯৩ সালে নানিয়াচর বাজারে আদিবাসিদের শান্তিপুর্ন মিচ্ছিলে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে বাঙ্গালি সেটেলারর-সেনা্রা হত্যা করে নিরীহ পাহাড়ীদেরকে। এর নেতৃত্বে ছিলো সেটেলারদের সংগঠন পার্বত্য গনপরিষদ যা নেতৃত্বে ছিলো মোঃ আয়ুব হোসাইন নামক হায়েনা নেতা এবং তৎকালীন বুড়িঘাট ইউ,পি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ। এতে নিহত হয় ২৯ জন জুম্ম নাগরিক আহত হয় শতাধিক। এতে জুম্ম ছাত্ররা যখন প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে তখন সেনা ক্যাম্প হতে জুম্ম ছাত্রদের উপর উন্মুক্ত এলোপাথারি গুলি চালানো হয়।
এছাড়াও, ১৯৯৫ সালে মার্চে বান্দরবান সদর, ২০০১ সালের আগষ্টে রামগড়, ২০০৩ সালের আগষ্টে মহালছড়ি, ২০০৬ এর এপ্রিলে মাইসছড়িতে, ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাঘাইহাটে, ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাঘাইহাট-খাগড়ছড়িতে এবং সর্বশেষ গুইমারা-মাটিরাঙ্গা-জালিয়াপাড়ায় গাড়ি থেকে নামিয়ে হত্যা; এভাবে একের পর এক গনহত্যায় রঞ্জিত হয়েছে পাহাড়ী মানুষের পার্বত্য চট্টগ্রাম। সেই গনহত্যারগুলির নিষ্ঠুর বর্বরতা এখনো জুম্মজাতিকে পিছু তাড়া করে বেরায়।
এখানে আমি এই নভেম্বরে আজ থেকে প্রায় দুই দশক(১৮ বছর) আগে আরেক দূঃস্বপ্নের নভেম্বরের ইতিহাসকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
নানিয়াচর গনহত্যাঃ
জুম্মজনগনের বিষাদময় ইতিহাসে নানিয়াচর গনহত্যার ঘটনা এই বিংশশ্বতাব্দীর অন্যতম নৃশংস সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক হত্যাকান্ডগুলোর এক নতুন সংযোজন বলা চলে। ১৭ই নভেম্বর ১৯৯৩ সালে সংঘটিত এই বর্বর গনহত্যায় ২৯ জন জুম্ম ছাত্র-জনতা-নারী-শিশু-বৃদ্ধ, আহত হয় শতাধিক। এই জঘন্য বর্বর গনহত্যায় সেনাবাহিনীর বন্দুক গর্জে উঠেছিল নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার মিচ্ছিলে, সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত ইশারায় সেদিন ধারালো দা, বর্শা, বল্লম নিয়ে নানিয়াচর বাজারে আগত নিরিহ পাহাড়ীদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল বগাছরি, বুড়িঘাট থেকে আগত সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারীরা। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছায় করে দিয়েছিল পাহাড়ীদের ২৭ টি বাড়ি।
ঘটনাটিকে ভালো ভাবে বুঝার জন্য আমদেরকে নানিয়াচরের ভৌগলিক অবস্থানকে আমলে নিতে হবে। রাঙ্গামাটি থেকে ২০ মাইল উত্তরে হ্রদ বেষ্টিত নানিয়াচরের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে নৌযান। লঞ্চঘাটের একমাত্র যাত্রীছাউনিতে দীর্ঘদিন ধরে ৪০ ই,বি আর, সেনা চেক পোস্ট বসিয়ে জুম্ম যাত্রীদের নিয়মিত হয়রানি, ধরপাকর, নির্যাতন চালানো হচ্ছিলো। এখানে কর্তব্যরত সেনারা জুম্মনারীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে আসচ্ছিলো দীর্ঘ দিন ধরে। ২৭ শে অক্টোবর এখানে খাগড়াছড়িগামী পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দকে আটকে রেখে হয়রানি ও নির্যাতন চালানো হয়, পরবর্তিতে নেতৃবৃন্দ হেটে খাগড়াছড়ি যেতে বাধ্য হয়। তাই জুম্ম ছাত্রসমাজ নেতৃত্বর হয়রানি ও আটকের প্রতিবাদ এবং গনতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারের দাবীতে চেচ্ছার হয় এবং বিভিন্ন স্থানে শান্তিপুর্নভাবে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। বিভিন্ন স্থানে ছাত্র বিক্ষোভে ধর পাকড় চলে। কিন্তু অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের গনতান্ত্রিক ও সংবিধানিক অধিকারের দাবী থেকে বিচ্চুত করা যায় নি বরং ছাত্র আন্দোলন মিচ্ছিল-সমাবেশ থেকে প্রানের দাবীগুলো আসতে থাকে। ২রা নভেম্বর পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ যাত্রীছাউনি থেকে সেনাপোস্ট প্রত্যাহারের সময় বেঁধে দেয় ১৭ ই নভেম্বর পর্যন্ত। এক একে ছাত্র সমাবেশ থেকে দাবী উঠতে থাকে লংগুদু গনহত্যা(৮৯), মাল্যে গনহত্যা(৯১), লোগাং গনহত্যা(৯২) সহ সকল গনহত্যার বিচারের দাবী। চলতে থাকে ছাত্রসমাজের ৫ দফা দাবী আদায়ের জন্য ঢাকা সহ নানান জায়গায় সমাবেশ। ছাত্র আন্দোলনে এভাবেই পাহাড়ী জুম্মদের কাছে একে একে ধরা পড়তে থাকে শাসকের শোষন-নিপীড়ন। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে গনতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ মসৃন ছিলো না কখনই। প্রশাসন-সেনা যড়যন্ত্রে জাল বিস্তারের জন্য আবারো ব্যবহার করে কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীকে। তারা কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীকে নিয়ে গোড়ে তুলে সাম্প্রদায়িক অক্ষশক্তি- পার্বত্য গণপরিষদ, পার্বত্য বাঙ্গালী পরিষদ, বাঙ্গালী সমন্ময় পরিষদ সহ মৌলবাদী গোষ্ঠী। তাদেরকে সাহায়তা দিয়ে সেনা-প্রশাসন পাল্টা প্রতিরোধের নামে আঁকে গনহত্যার নীলনকশা।
বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ১০ ই নভেম্বর পালিত হল। মানুষের মধ্যে আন্দোলন নিয়ে দাবী পুরনের স্বপ্ন উকি দিচ্ছিলো(!) তখনও তারা জানত না তাদের জন্য সামনে কোন ফাঁদ পাতা আছে। দেখতে দেখতে ১৭ই নভেম্বর ঘনিয়ে এল, দাবী আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামের ধর্য্যের সাথে ছাত্র জনতা চালিয়ে যাচ্ছিল।
দিনটি ছিল বুধবার, নানিয়াচর(নান্যেচর)এর সাপ্তাহিক বাজার দিন। তাই স্বভাবিকভাবে দুর-দূরান্ত থেকে বাজারে এসেছিল শত,শত জুম্ম শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। ১৭ই নভেম্বর যেহেতু ছাত্রদের বেধে দেয়া শেষ সময়, তাই ছাত্ররা সেই দিন বেলা ১২ টায় মিচ্ছিলের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ছাত্রদের সাথে যোগ হয় জনতাও। ঠিক বেলা ১২ টায় পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে মিছিলটি স্থানীয় লাইবেরী প্রঙ্গন থেকে শুরু হয় যাদের প্রধান দাবীগুলো ছিল- যাত্রী ছাঊনি থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার, পি,সি,পি’র(পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ)র ৫ দফা দাবী মানা সহ গন্দধিকৃত জেলা পরিষদ বাতিলের দাবী। কয়েক হাজার জুম্ম ছাত্র-জনতার মিচ্ছিলে তখন সারা নানিয়াচর উজ্জীবিত।মিচ্ছিল থেকে গনতন্ত্র ও সাংবিধানিক অধিকারের দাবী উচ্চকন্ঠে জানানো হচ্ছিল। মিচ্ছিলটি শান্তিপুর্ণভাবে শহরের রাস্তা প্রদক্ষিন শেষে কৃষি ব্যাংক এর সামনে সমাবেশ করে।
অন্যদিকে বাংগালী অনুপ্রবেশকারীদের সংগঠন পার্বত্য গনপরিষদও শহরে জঙ্গী মিচ্ছিল বের করে। তারা মিচ্ছিল থেকে সাম্প্রদায়িক স্লোগান তুলতে থাকে। এক পর্যায়ে গনপরিষদের মিচ্ছিল থেকে হামলা করে এক বৃদ্ধ জুম্মকে আহত করা হয়।এতে করে জুম্মদের মাঝে ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। এক পর্যায়ে অনুপ্রবেশকারী বাঙ্গালীদের মিচ্ছিল থেকে দা, বল্লম ইত্যাদি দিয়ে হামলা হলে জুম্ম ছাত্র সমাজ জনতাকে নিয়ে প্রবল প্রতিরোধ করে। এটে অনুপ্রবেশকারী বাঙ্গালীরা পিচ্ছু হটলে কর্তব্যরত আর,পি ল্যান্স নায়ক জুম্ম জনতার ব্রাশ ফায়ার করেন। এটে মূহুর্তের মধ্য ৮জন জুম্ম ছাত্র শহীদ হন। গুলিতে আহত হন অনেকে।এটে জুম্মদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ে। বিচ্ছিন্ন হওয়া জুম্মদের উপর ঝাপিয়ে পরে সশস্ত্র সেনা ও বাঙ্গালী অনুপ্রবেশকারীরা। সেনারা বন্দুকের আঘাতে মূমুষ্য করার পর কাপুরুষেরা অনেককে পশুর মত জবাই করেছে। অনেকে কাপ্তাই লেকের পানিতে ঝাঁপিয়েও প্রান বাচাঁতে পারে নি। জ়েট বোট ও নৌকার উপর থেকে দা, বল্লম দিয়ে মেরে, কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে অনেককে। যারা পাহাড়ী বাড়িতে লুকিয়ে ছিল তাদেরকে টেনে হিচড়ে বের করে হত্যা করা হয়েছে অথবা পুড়িয়ে মারা হয়েছে।ইউনিয়ন পরিষদের পাশের জুম্ম গ্রামগুলি লুটপাট করে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই সময় রাঙ্গামাটি থেকে আসা লঞ্চ পৌছালে সেখানেও হামলা করে অনেককে হতাহত করা হয়। এটে বোধি প্রিয় নামক এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়।এভাবে প্রায় দু ঘন্টা ধরে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় জুম্মদের উপর।
এই বর্বর গনহত্যায় নেতৃত্বে দিয়েছিলো সেটেলার দের সংগঠন পার্বত্য গনপরিষদ যার নেতৃত্বে ছিলো মোঃ আয়ুব হোসাইন, প্রক্তন চেয়ারম্যান বুড়িঘাট, তৎকালীন বুড়িঘাট ইউ,পি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ, মেজর সালাউদ্দিন সহ অনেক উগ্র মৌলবাদী।
এই গনহত্যার হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলেও সরকারে পক্ষ থেকে নিহতের ২০ জন বলে জানানো হয়েছিল। সেই সময়ের পত্রিকা মারফত এই সংখাকে ২৭ বা তারও বেশী বলে দাবী করা হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী জুম্মরা এই সংখ্যা শতাধিক বলে জানিয়েছেন। যেহেতু ঘটনার পর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি ছিল, তাই প্রক্রিত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ বার বার উকি মারে। গনহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষন এই সব মানবাধিকার লংঘনের অভি্যোগ বার বার প্রশ্ন বিদ্ধ করেছে পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনী, বেসামরিক প্রশাসক ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর ভুমিকা। জুম্মজাতি দেখেছে যে সেনা কর্মকরতা পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢুকার আগেও সেনাবাহিনী ছিল সেই পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢুকে হয়ে যায় উগ্র জাতীয়তাদী ! একই কথা খাটে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি প্রশাসক ও আইনের রক্ষকের ক্ষেত্রে।
এইভাবে নির্বিচারে অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা জোরপুর্বক বসতি স্থাপন একদিকে শান্ত পাহাড়কে নরকের দিকে ঠেলে দিয়েছে অন্যদিকে শান্তিপ্রিয় পাহাড়বাসীর জীবনকে করেছে বিপন্ন। এভাবে জুম্মজাতির প্রতি চাপিয়ে দেয়া জাতি হত্যার নীলনকশার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দল-মত নির্বিশেষে সকল জুম্ম ভাইবোনদেরকে একপতাকা তলে এসে প্রতিরোধের চেতনাকে জাগ্রত করার আহবান জানাচ্ছি।
Nationalist View – analysing Bangladeshi politics.
Copyright © 2020 Nationalist View – All rights reserved.