২০১৩ সাল। শাহবাগের রাস্তা বন্ধ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে আন্দোলন চলছে। শাহবাগে লাখো জনতার ঢল। জাফর ইকবাল খোলা ট্রাকের দিকে এগিয়ে গেলেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে আবেগ মাখা কণ্ঠে বললেন-
” আমার ধারণা ছিলো- এই প্রজন্ম রাস্তায় নামতে পারে না, তারা শুধু বাসায় বসে ফেসবুকে লাইক দেয়। তোমরা আমাকে ভুল প্রমাণ করেছো। তোমাদের জন্যে গর্বে আমার বুক একহাত পরিমাণ ফুলে গেছে। এখন থেকে তোমরা যখনই দরকার হবে, রাস্তায় নেমে পড়বে “
২০১৮ সাল। শাহবাগের রাস্তা বন্ধ করে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছে। শাহবাগে লাখো জনতার ঢল। জাফর ইকবাল সশরীরে এসে শরীক হলেন না। তিনি একখানা কলাম ফাঁদলেন- ” পুরো ঢাকা শহরকে ছেলেমেয়েরা অচল করে দিয়েছে। একেকটা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজেদের এলাকার রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে ফেলেছে। ঢাকা শহরের অবস্থা আমরা জানি, শহরের এক কোণায় কিছুক্ষণ ট্রাফিক বন্ধ থাকলেই কিছুক্ষণের মাঝে পুরো শহরে তার প্রভাব পড়ে।
কাজেই শহরের বড় বড় ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েরা সবাই যদি নিজেদের এলাকাকে অচল করে রাখে, তার ফল কী ভয়াবহ হবে, সেটা চিন্তা করা যায় না।
এই পদ্ধতিটি নতুন নয়, এর আগেও একবার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা একই পদ্ধতিতে তাদের দাবি আদায় করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের সাত খুন মাফ, তারা যখন খুশি পুরো শহর, প্রয়োজন হলে পুরো দেশের মানুষকে জিম্মি করে ফেলতে পারে, তাদের কারও কাছে জবাবদিহি করতে হবে না। তাদের এই কর্মকাণ্ডে যে শিশুটি স্কুলে যেতে পারেনি, যে রোগীটি হাসপাতালে যেতে পারেনি, গার্মেন্টেসের যে মেয়েটি কাজে যেতে পারেনি, যে রিকশাওয়ালা তার পরিবারের খাবার উপার্জন করতে পারেনি, তাদের কারও জন্য দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের এই ছাত্রছাত্রীদের কোনও মায়া নেই।
তাদের দাবিটি মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার বা সৈরশাসকের পতনের মতো জাতীয় কোনও দাবি নয়, নিজেদের একটা চাকরি পাওয়ার সুযোগটা বাড়িয়ে দেওয়ার দাবি। গ্রাম থেকে একটা মেয়ে যদি শহরে এসে গার্মেন্টসে একটা চাকরির চেষ্টা করতো, কিংবা কোনও একজন তার জমি বিক্রি করে মালয়েশিয়ায় চাকরি পাবার চেষ্টা করতো, তাহলে তাদের পাশে দেশের সব বড় বড় অধ্যাপক এসে দাঁড়াতেন না, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের পাশে তারা এসে দাঁড়িয়েছেন।
সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা কিন্তু তাদের পাশে যারা দাড়িয়েছে তাদের সম্মানটুকু রক্ষা করেনি। তারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে, যারা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল তাদেরও অপরাধী করে দিয়েছে।
” যদি আমি জানতাম, তারা এরকমটি করবে তাহলে তাদের দাবির বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে একশ হাত দূরে থাকতাম।”
কী বুঝলেন ??
রাস্তা বন্ধ করা আসলে তার মাথাব্যাথার কোনো কারণই না। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যে একাত্ম নন- নিজের এই অবস্থানকে তিনি জাস্টিফাই করতে চেয়েছেন ‘ রাস্তা বন্ধ করা ‘কে ইস্যু করে।
.
কারণ একইভাবে রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন ‘১৩ সালেও হয়েছিলো, ওই একই শাহবাগে।
রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে কোনো রোগী ‘১৮ তে মরতে বসলে, একইভাবে ‘১৩ তেও কেউ না কেউ মরতে বসেছিলো;
রাস্তা বন্ধ থাকায় মানুষ ‘১৮ তে দুর্ভোগ পোহালে ‘১৩ তেও পোহাইসে !!
.
কিন্তু ‘১৩ সালের আন্দোলনে তার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিলো কিন্তু ‘১৮ তে নাই। কারণ তিনি এলিট শ্রেণীর মানুষ। মিষ্টি মিষ্টি আন্দোলনের সঙ্গে এদের পাওয়া যায়।
শ্রেণী সংগ্রামের আন্দোলন থেকে ইনারা গা বাঁচিয়ে চলেন সবসময় যেটা তিনি নিজেই বলেছেন-
.
‘ যদি আমি জানতাম, তারা এরকমটি করবে তাহলে তাদের দাবির বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে একশ হাত দূরে থাকতাম। .’
.
আফসোস একটাই……..
একজন বুদ্ধিবেশ্যাকে
চোখের সামনে বিকিয়ে যেতে দেখলাম !!