প্রধান অতিথি মমতা ব্যনার্জি এবং সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য আমন্ত্রিত ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও শর্মিলা ঠাকুরের বয়কটের মধ্য দিয়ে আরেকটি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করলেন শেখ হাসিনা!
সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির প্রতি শেখ হাসিনার বিশেষ লোভের কথা পৃথিবীর সকলেই জানেন।
ভারত সফরে গিয়ে তিনি আজ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি.লিট বা ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন, এমনটাই জানাচ্ছে বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো।
কিন্তু ভারতের দি টাইমস অব ইন্ডিয়া জানাচ্ছে ভয়াবহ লজ্জার খবর!
আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনে আরো দুইজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে একই দিনে শেখ হাসিনাসহ মোট তিনজনকে এই সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেবার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং সেই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির। অনুষ্ঠানে মমতা ব্যানার্জির বক্তব্য প্রদানের জন্য ২০ মিনিট সময়ও নির্দিষ্ট করা ছিল। সেই অনুযায়ী নিমন্ত্রপত্রও ছাপা হয়েছিল এবং মূখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা কর্মকর্তারা গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে অনুষ্ঠানস্থল রেকি করেও এসেছিলেন।
কিন্তু বুধবার হঠাৎ করেই মূখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, মমতা ব্যানার্জি উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। মূখ্যমন্ত্রীর এই আকষ্মিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ হিসেবে টাইমস অব ইন্ডিয়া তাদের প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে একটি ‘অফিসিয়াল’ এবং একটি ‘আনঅফিসিয়াল’ কারণ ছেপেছে। গতবাঁধা অফিসিয়াল কারণের বাইরে আনঅফিসিয়াল কারণটি হচ্ছে- এই সমাবর্তন নিয়ে আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আর্থিক দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে যাওয়া।
আর্থিক দুর্নীতির বিষয়টি টাইমস অব ইন্ডিয়া বিস্তারিত খোলাসা না করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার অফিসের বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা যায়- ঐ একই সমাবর্তনে ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি (ডি.এসসি) দেবার বিষয়ে আপত্তি তোলে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কয়েকজন ব্যক্তি বিরাট অংকের বৈদেশিক মূদ্রা উৎকোচ গ্রহণ করেন এবং ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে সমাবর্তনে অংশ না নেবার জন্য আকারে ইংগিতে অনুরোধ করেন। নিজের সম্মান রক্ষার্থে ড. মুহাম্মদ ইউনুস আজকের ঐ সমাবর্তনে যোগ না দেবার সিদ্ধান্ত নেন। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের এই ঘটনা জানাজানি হলে, সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি (ডি.লিট) গ্রহণের জন্য অপর আমন্ত্রিত বিশিষ্ট অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরও এই সমাবর্তন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষে তাঁর অপারগতার কথা জানিয়ে দেন।
এই ঘটনাগুলো জানতে পেরে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নিজেও সমাবর্তন অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
ফলে অনুষ্ঠার শুরুর মাত্র ৭২ ঘণ্টা আগে তড়িঘড়ি করে রাজ্য সরকারের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রধান অতিথি রেখে নতুন আমন্ত্রণপত্র ছাপানো হয়। অবশেষে আজকের যখন সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়, তখন দেখা যায়, অনুষ্ঠানস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষকই অনুপস্থিত। সভাস্থলের চেয়ারগুলোর অধিকাংশই দখল করেছিলেন শেখ হাসিনার প্রায় ৮০জন সফরসঙ্গী।
জনগণের কষ্টার্জিত টাকা ঘুষ দিয়ে আসানসোল থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি আনতে গিয়ে এমন ন্যাক্কারজনক বর্জনের মুখোমুখি হয়ে শেখ হাসিনা পুরো বাংলাদেশের মুখে চুনকালি মাখিয়ে দিয়ে এলেন।