বাংলাদেশে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট বিষয় রয়েছে যেগুলো নিয়ে আসলে আলচনা হওয়াটা, কথা বলাটা এখন বেশ জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। কূপমন্ডুকতায় আচ্ছন্ন থেকে থেকে আমরা যদি সমাজের ভয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দেই তবে পিছিয়ে আমরাই থাকব। সমাজ, সভ্যতা, বিশ্ব, পৃথিবী এসব সব কিছুর সাথে তাল মিলিয়ে সামনে যাবার ইচ্ছা করলে প্রতিটি বিষয় নিয়েই কথা বলাটা এখন জরুরী বলে মনে করি।
আমাদের সমাজে অনেকেই সেক্স কিংবা সেক্সুয়াল এলিমেন্ট রয়েছে এমন বিষয়ে আলচনা করতে চান না বরং এড়িয়ে যেতে চান খুব সন্তর্পণে। এই ধরনের টেন্ডেন্সি আসলে আমাদের অনেক সময় জটিলতা বাড়ায়, কমায় না। সামাজিক ডায়ালগ, আলচনা, বাস্তবতা সব কিছু মিলেই আমাদের আসলে একটি উন্নতি দেশ কল্পে নিয়মিত কাজ করা উচিৎ এবং বলা উচিৎ।
বিষয়টি বাংলাদেশে উঠে এসেছে সম্প্রতি এদেশের প্রথম সমকামী পত্রিকা ‘রুপবান’ এর সম্পাদক হত্যার মধ্য দিয়ে। কারা হত্যা করেছে উনাকে তা জানা নেই। বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রচুর হত্যা হয়। কে কোন কারণে হত্যা হচ্ছে তা বুঝবার উপায় নেই তার পেশা এবং নেশা দেখে। নেশা কথাটি একারণেই এনেছি যে, সমকামিতা আমার কাছে একটি বিকৃত যৌন নেশা মনে হয়। এখন যদি অন্যান্য নেশাকে আইন করে নিষেধ করা যায় তবে সমাকামিতা কেন যাবেনা? প্রশ্ন রইলো সরকারের কাছে। ধর্মীয় বিষয় বাদ’ই দিলাম যেহেতু ইসলামের চেতনার বিপরীতে নতুন চেতনা উদ্ভাবনে সরকার মরিয়া। সমকামিতা কোনো নতুন বিষয় নয় এদেশের জন্য। এটি আগেও ছিলো যখন মানুষ পর্নের সাথে পরিচিত ছিলোনা তখন থেকেই। আগের দিনে সমাজের সম্পদশালীরা নিজেদের আনন্দের জন্য দেখতে সুন্দর দরিদ্র কিশোরদের বেছে নিতেন। তাদের স্ত্রীরা সেই ছেলেকে সতীনের মতই দেখতেন। কিন্তু গুমরে গুমরে কাদতেন। স্বামীর বিরুদ্ধে যাবার সাহস তাদের হতোনা। সমাজে এটিকে তখন নিজের প্রতিপত্তি জাহির করবার একটি উদ্দেশ্য হিসেবেই দেখা হতো। ‘ঘেঁটু পুত্র’ শব্দটির সাথে যারা পরিচিত তারা জানেন।
এখন কথা হলো, কেন সমকামিতাকে ‘না’? প্রথম এবং প্রধান কারণ স্বাভাবিকভাবে মাথায় যা আসে তা হলো, পৃথিবীর সবাই যদি সমকামী হয়ে যান তবে কি হবে? প্রকৃতিবিরুদ্ধ এই রীতি কিংবা ইচ্ছার দ্বারা মানবজাতী তার বংশ হারাবে। নতুন শিশু জন্মগ্রহণ করবে না। অথচ পৃথিবীর এবং মানব-মানবীর সৃষ্টিই হয়েছে বংশ বৃদ্ধিকে ঘীরে। সমকামিতার ব্যাপক প্রচলনে একসময় মানবজাতী ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বিবর্তনবাদীরাও এইকথা স্বীকার করতে বাধ্য। কারণ এই দুই প্রজাতী সৃষ্টির পেছনে তাহলে তাদের ব্যাখ্যা কি থাকে? শুধু পুরুষই হতে পারতো। পুরুষ অ্যামিবা কিংবা পুরুষ শিম্পাঞ্জী’র বিবর্তন। যেহেতু সুযোগ আছে প্লেজার নেবার। এখানে কিন্তু বিবর্তনবাদীরা মার খেয়ে যান।
কেবল যৌন তৃপ্তির জন্যই যদি এই অস্বাভাবিক সম্পর্ককে বৈধতা দেয়া হয় তবে পশু সঙ্গমের বৈধতা দেবার দাবী যখন কেউ কেউ তুলবে তখন কি হবে? যদি কখনো পশু সঙ্গম বৈধ করার দাবী করা হয় তখনও ঐ সকল দেশ তা বৈধ করে দিয়ে অতি উদারতার প্রমাণ দিতে পারবে? অর্থনৈতিক কিংবা প্রযুক্তিতে উন্নতদেশের উদাহরণ টেনে আনছেন কেন উনারা? অসভ্যতা কি অর্থনীতি কিংবা প্রযুক্তিতে উন্নত হলেই মুছে যায়? নাকি সভ্যতার অর্থ আরও ব্যাপক? সমাকামিতা আসলে একটি বিকৃতি, একপ্রকার মানসিক রোগ এবং যৌনতার ভিন্নতার নেশা। এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ‘নারীকে ভালো লাগছেনা-এতে আমার কি দোষ?’ এরকম যুক্তি দিয়ে পৃথিবীর আরও প্রচুর খারাপ নেশাকে খারাপ কাজকে বৈধ করে ফেলা যায়। যেহেতু ভালো লাগছেনা এবং যা ভালো লাগবে তা করো। বিষয়টি কি এরকম? তাহলে সাইকোপ্যাথরা বিকৃত খুন করে যেমন আনন্দ পায়, সেটিকে বৈধ করা হয়না কেন? যেহেতু আনন্দ পাওয়াটাই মুখ্য এখানে। নীতি কিংবা প্রকৃতি তথা সমাজের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই এদের। সমস্যা কি?
তথাকথিত উন্নতবিশ্বের একটি দেশ জাপান। প্রায় বছর তিনেক আগে একটি ডকুমেন্টরি দেখেছিলাম। রিয়েল ডল নামের জড় পদার্থের সাথে সঙ্গমকেও অনেক ব্যর্থ পুরুষ তাদের জীবনের আশ্রয় হিসেবে ধরে নিয়েছিলো। তাদের নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, অনেক দুঃখ প্রকাশ হয়েছে কিন্তু আদতে সবাই চাইছিলো তাদেরকে ঐ পথ থেকে সরিয়ে আনতে। এসবিএস এর যেই সাংবাদিক এই প্রতিবেদন করেছিলেন তিনি নিজে আটজনকে পরবর্তিতে বিয়ের জন্য খরচ যোগান এবং মানসিকভাবে সুস্থ করে তোলেন কন্সালটেন্সির মাধ্যমে।
মানুষের ব্যাক্তিগত যৌনতা কিরকম হবে তা তার নিজস্ব ব্যাপার। সেখানে একজনকে বৈধ করা হয়েছে। স্বাভাবিক সুন্দর সমাজের জন্য। আর মানবীকে বৈধ করা হয়েছে মানবের জন্য, স্বাভাবিক সুন্দর পৃথিবীর জন্য। সেখানে ব্যাক্তিগত আনন্দলাভের জন্য সমকামিতার বৈধতা যখন যখন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দেয়া হয় তখনই সমাজের সচেতন মানুষ এর বিরুদ্ধে এগিয়ে আসতে বাধ্য হন। নইলে এই নিস্ফল এবং মানবজাতির জন্য ক্ষতিকর বিকৃতিকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
সামগ্রিকভাবে সম্ভব কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে। আজ যে ছেলেটি জানলো সমকামের কথা কাল তার যদি ইচ্ছে জাগে তবে সে আইনের কথা ভেবে ওপথে পা বাড়াবেনা। কিন্তু আইন না থাকলে এবং প্রয়োগ না ঘটলে সে চাইতে পারে জিনিসটি কেমন তা দেখে নিতে যদি সুযোগ থাকে। যেহেতু মানুষের কামনা নতুন নতুন জিনিসের প্রতি দ্রুতগতিতে ধাবমান। অনুসন্ধিৎসু মানুষ। সুযোগ থাকলে আর সামাজিক কিংবা পারিবারিক নিন্দার ভয় না থাকলে সমাজের ক’জন পুরুষ নিজের স্ত্রী’র ভালোবাসার মর্যাদা দিতে চাইতেন তা এখানে আনতে হলো। বলতে খারাপ লাগছে তবুও বাধ্য হলাম।
সমাকামিতার প্রশ্নে নিরপেক্ষ থাকবার সুযোগ নেই পৃথিবীর স্বাভাবিকতা ধরে রাখবার স্বার্থেই। আমাদের সরকার এবং মুক্তমনারা উন্নতবিশ্বের মত দূর্নীতিমুক্ত প্রশাসন তৈরি করতে পারেন না, উন্নতবিশ্বের মত শিক্ষা ব্যবস্থা আনতে পারেন না, উন্নতবিশ্বের মত হত্যা এবং অন্যান্য অপরাধ কমিয়ে আনতে পারেন না। তারা পারেন উন্নতবিশ্বের নোংরামীকে টেনে এনে ‘আমরা উন্নত বিশ্বের কাছাকাছি গিয়েছি’ নামক স্বমেহনে লিপ্ত হতে। কি পরিমাণ মূর্খতা! এইদেশে জন্মে লজ্জা পেতে পেতে আজ নির্লজ্জ হয়ে গিয়েছি নিজেও।