আওয়ামী রাজনীতিবিদদের অপকর্ম, দুঃশাসনে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের রাজনীতি। রাজনীতিকে নয়,আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করুন।
আমরা সাধারণ জনগণ যখন একজন রাজনীতিবিদ নিয়ে কথা বলি,তখন কথা বলার সময় তার রাজনৈতিক যোগ্যতা,শিক্ষাগত যোগ্যতা,মেধা, পরিশ্রম,সততা,দেশপ্রেম,ত্যাগ,সংগ্রামময় জীবনের কথা গণনার মধ্যে না নিয়েই তার সম্বন্ধে ঢালাও মন্তব্য করি।এটা খুবই অন্যায়।বাংলাদেশের অধিকাংশ নাগরিক মনে করে,রাজনীতি করা মানেই হল দল ক্ষমতায় গেলে অথবা দলীয় শীর্ষ পদে আসীন হয়ে সেই রাজনীতিবিদ প্রচুর অর্থ বিত্তের মালিক হবে,সে নিরীহ ও নিপাট ভদ্রলোকদের উপর ছড়ি ঘুরাবে,সে তার পরিবারকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবে।
হ্যা,বিগত ১যুগে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের নিয়ে উপরোক্ত ধ্যান ধারনাগুলো সত্য।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র ভোট চুরি করে অবৈধ সরকারই গঠন করেনি,একইসাথে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে রাজনীতি তথা অধিকাংশ রাজনীতিবিদদের প্রতিই ঘৃণা জন্মাতে সফল ভূমিকা পালন করেছেন।আওয়ামী লীগের অত্যাচার,গুম,খুন, নির্যাতন,ভোট চুরি,চাল চুরি,গণতন্ত্র হত্যা,বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া সহ এমন কোন অপরাধ নাই,যে অপরাধগুলো আওয়ামী রাজনীতিবিদেরা করেন নাই।
বিগত ১যুগে আওয়ামী দুঃশাসনের ফলে তরুণ প্রজন্ম এতটাই ইতিহাস বিমুখ তথা রাজনীতি বিমুখ হয়েছে যে,তারা প্রায় ভুলেই গেছে ১যুগ আগের বিএনপি সরকারের সময়কার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাজনীতির মান কতটা উন্নত ছিল,গণতান্ত্রিক চর্চা কতটা উচ্চকিত ছিল,মিডিয়া তথা বাক স্বাধীনতা কতটা উচ্চকণ্ঠ ছিল,বিরোধী দলের প্রতি সরকার কতটা নমনীয় ছিল,বাংলাদেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে প্রতিটি ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা হলে ও ক্যাম্পাসে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সহাবস্থান করত,দ্রবমূল্য ও জীবন যাত্রার মান কতটা সহনীয় পর্যায়ে ছিল,রুচিবোধ কতটা উন্নত ছিল,শেয়ারবাজারে সাধারণ জনগণ আস্থার সহিত বিনিয়োগ করত,বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়নি,ব্যাংক লুট হয়নি,জঙ্গিদের আইনের আওতায় এনে ফাঁসি দেয়া হত কিন্তু ১মাস অন্তর অন্তর জঙ্গি নাটক হত না,পুলিশ বাহিনী জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করত।
গায়েবী মামলা,গুম,ইয়াবা,ক্লাস ফাইভ থেকে অনার্স মাস্টার্স, এমনকি অধিকাংশ চাকুরীর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস,অনেক ক্ষেত্রে আগের রাতে ফেসবুকে প্রশ্ন পাওয়া- আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, বিগত ১যুগ আগের বিএনপি সরকারের সময়ে এগুলো ঘটেনি।অর্থাৎ গায়েবী মামলা হত না,কেউ গুম হত না, বাংলাদেশে ইয়াবা ছিল না,ফেসবুকে প্রশ্ন পাওয়া যেত না।বিএনপি সরকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষা তথা জঙ্গিবাদ দমন করার জন্য র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠা করে,২০০৫ সালে দুর্নীতি দমনের জন্য দুদক প্রতিষ্ঠা করে।বাংলাদেশে সন্ত্রাসী,চাঁদাবাজ,ক্যাডারদের নির্মুলের জন্য কোন গণতান্ত্রিক সরকার সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সারাদেশে ক্লিন হার্ট অপারেশন চালানোর হিম্মত একমাত্র বিএনপি সরকার ২০০৩ সালে করে দেখিয়েছে।আজকের বাংলাদেশে এটা কল্পনা করা যায়..??
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব),দুদক,ক্লিন হার্ট অপারেশনে তৎকালীন বিরোধী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোন নেতাকে হয়রানি করা হয়েছিল..??শুধুমাত্র রাজনৈতিক তর্কের খাতিরে তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনা র্যাব,দুদক,ক্লিন হার্ট অপারেশনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়ে ছিল,যদিও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুদক ও র্যাবকে শুধুমাত্র বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি,নির্যাতন,গুম,খুনের জন্য ব্যবহার করেছে।বিএনপির আমলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ছিল প্রশ্নাতীত।সীমান্ত হত্যার প্রতিটি ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাত, আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করত,এমনকি প্রতিরোধেরও উদাাহরণ রয়েছে।আর এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শত শত সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে একটা প্রেস রিলিজ দেওয়ারও সাহস করেনা।
তাই আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করতে পারেন কিন্তু তাদের অপকর্মের দায়ে রাজনীতিবিমুখ হওয়া যাবে না।একজন সৎ,দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে।আওয়ামী লীগ,যুবলীগ,ছাত্রলীগের অপকর্ম, দুঃশাসন দেখে সকল রাজনীতিবিদদের ঘৃণা করা ও একই দৃষ্টিতে মাপা অনুচিত।
মোঃ রাকিবুল ইসলাম রাকিব
আহ্বায়ক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।