নিজস্ব প্রতিবেদক:দেশের ক্রান্তিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের ৮ জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে করোনা পরিস্থিতি ঠিক না হলে সেপ্টেম্বরের আগে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে না বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি যদি না বদলায় তাহলে সেপ্টেম্বরের আগে কোনো স্কুল কলেজ খুলবে না। আগে করোনা বিদায় নেবে, তারপরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সংকট উত্তরণে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছেন।
এ দিকে পোশাক কারখানা গত পরশু থেকে থেকে ধাপে ধাপে চালু হচ্ছে। আমরা জানি এদেশে কার পেটের ক্ষুধা বেশি! আর পোশাক শিল্পকারখানা ধাপে ধাপে খোলার অর্থও আমরা বেশ জানি।
জনবহুল উৎস থেকে করোনা পরিস্থিতি দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। ঝুঁকিতে রয়েছে হাজার হাজার গার্মেন্টস কর্মীগণ, তা থেকেই অচিরেই ছড়িয়ে পড়বে এ দেশ আর দেশের সাধারন জনগণের মাঝে।
সরকারের চোখে স্কুল,কলেজ বন্ধের দাবি যতোটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে, ঠিক গার্মেন্টস কারখানা গুলো কি বন্ধ রাখা সময়ের দাবিতে জরুরি না? নাকি একজন গার্মেন্টস কর্মীর জীবনের চাইতে এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা অধিকতর অধিক গুরুত্বপূর্ণ ?গরীব চিরকালই তুচ্ছ, মরণেও কি এই বৈষম্য নিয়েই মরতে হবে? আসলে গরীবের জন্মই আজন্ম পাপ!
এটা সত্য যে সরকারের নীতির বা্রই যাওয়ার সাধ্য কারো নেই। তাহলে গার্মেন্টস কারখানা খোলা সংক্রান্তে সরকার নীরব ভূমিকা পালন করছেন কেনো?
অর্থনৈতিক জরিপ পর্যালোচনায় হত দরিদ্র দেশের মানুষ আমরা। এই মহামারির ক্রান্তিকালে চাকুরিজীবি, দিনমজুর থেকে শুরু করে নিন্মআয়ের,মধ্যবিত্ত পরিবারের সকলেই আজ চরম সংকটে জীবনযাপন করছেন। সরকার রাষ্ট্রের সাধ্যমত মানবেতর প্রণোদনা নিয়ে দুঃস্হ অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
কথায় আছে,”দশের লাঠি একের বোঝা” এই সমাজের বিত্তবানরা চাইলে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতে পারেন, অথচ কিছুসংখ্যক ছাড়া অধিকাংশই দেশের চরম সংকট জেনেও নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন। বরং এদের মধ্যেই অনেক পাতি নেতা গরিবদের রিলিফ চুরিতে ব্যস্ত। গার্মেন্টস শিল্পকারখানার মালিকরা নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্যের হিসেবনিকেশেই মশগুল!
এই সমাজে অভুক্ত মানুষের পেটের ক্ষুধার চাইতে শিল্পকারাখানা মালিকের মনের ক্ষুধা বেশি!
সত্যিকার অর্থে জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত নয় লজ্জিত, শোষিতকে আরো শোষন করে বড়লোক হবার হীন মানসিকতার জন্য।
সরকার বার বার জনগনের নিরাপত্তার সুবিধার্থে ঘোষনা দিচ্ছেন,ঘরে থাকুন,ঘরে থাকুন এবং ঘরে থাকুন। একই বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন। দেশের সুরক্ষা নিরাপত্তা বিবেচনায় গত মার্চের মাঝামাঝি হতে স্কুল, কলেজ বন্ধ ঘোষণা দিয়েছিলেন। লকডাউনে আছে চাকুরিজীবি হতে শুরু করে সাধারন দিনমজুর। ইতোমধ্যেই আমাদের কিছু আপনজনকে হারিয়েছি। দুঃসহ সেই স্মৃতি! আমরা কূল কিনারাহীন মৃত্যু ভয়াল সাগরে ভেসে যাচ্ছি যমপুরীর দেশে।
অভিশপ্ত করোনার নীল ছোঁবল হতে বাঁচাতে যুদ্ধে নেমেছে সময়ের সৈনিক চিকিৎসকরা। প্রশাসন লাঠি ঠেলে ঠেকাচ্ছে অবাধ্য ঘরবিমুখ জনতা।
“সোনার বাংলায়” করোনা বিস্তারে গার্মেন্টস হলো সবচেয়ে ঝুঁকির কেন্দ্র। সেটাই যদি চালু হল; তাহলে একেবারে দরিদ্র,নিঃস্ব, খেটে খাওয়া অসহায়, দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের ঘরে আটকে রেখে আর লাভ কি? তাদেরও ধাপে ধাপে কাজ করার সুযোগ দিন।
পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত হোক সবার কথা বিবেচনা করে,যাতে সবার জীবনই সচল থাকে।
বিশেষ মহলের কথা চিন্তা করে সরকারি দলের কিছু পা চাটা ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে এরকম ঝুঁকি নেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত??? যদি তাই করতে হয় তাহলে দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতি করে দেওয়া হোক. তা না হলে গরিব খেটে খাওয়া মানুষ অনাহারে মারা যাবে আর সরকারের দালাল আওয়ামীলীগ পন্থী ব্যবসায়ীরা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকবে এটা তো হতে পারে না.তাহলে কিভাবে সমাজের বৈষম্য দূর হবে???
সিদ্ধান্ত নিলে অচিরেই অসন্তোষ, বৈষম্য এতো প্রকট হয়ে উঠবে যে, আমজনতাকে কিছুতেই, কোন প্রণোদনাতেই কন্ট্রোল করা যাবেনা।সরকার কি শুধুই আওয়ামী লীগপন্থী ব্যবসায়ীদের??? তা তো নয়.
যে ভাবেই হোক, ভোট চুরি করে হোক বা যেকোন ভাবেই হোক দেশে একটা সরকার আছে এই সরকার তো শুধু আওয়ামী লীগের সরকার নয়.প্রধানমন্ত্রী শুধুকি আওয়ামীলীগের??? তা তো নয় …প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারটা দেশের আপামর জনগণের এটা একটা নির্বাহী চেয়ার. এই চেয়ারে যিনি থাকবেন তিনি তো সকলের চিন্তা মাথায় নিয়ে কাজ করবেন কিন্তু বর্তমান সরকার কি করছেন তা করছেন???
আমার তো মনে হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তা করছেন না.তিনি তার চেয়ারের অবমূল্যায়ন করছেন.যদি তা না হয় তাহলে কেন আওয়ামী লীগপন্থী ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য গার্মেন্টস এর মতো ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় কে খুলে দিতে হবে?
দেশে কি দেশের গরীব মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই? নাকি তারা শুধু অবহেলা ও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এই দেশে বাস করবে? চৌচল্লিশ হাজার বর্গফুটের এদেশের এর প্রতিটা ইঞ্চি মাটির সমান অংশীদার দেশের আপামর জনগণ সুতরাং সকলের দিক বিবেচনা করেই যথাযোগ্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে.
করোনা মুক্ত, ক্ষুধামুক্ত দেশ করার জন্য সার্বজনীন পরিকল্পনা গ্রহন করে যতো দ্রুত বাস্তবায়িত হবে, তা জাতির জন্য ততোই মঙ্গলজনক হবে।
লেখক—-এম,এস,ইসলাম মৃধা(সোহাগ)
(ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ).