২০১৪ সালে অবৈধভাবে সরকার গঠন করে ক্ষমতা দখল করে আওয়ামীলীগ এখন দেশ পরিচালনা করছে এটা সর্বজনস্বীকৃত। এই কালো অধ্যায়ের কথা আমরা সবাই জানি। আমরা এও জানি যে আওয়ামীলীগ বিভিন্ন সরকারি পদে তাদের অনুগত ব্যক্তিদের বসিয়ে রেখেছে যাতে তারা অবাধে দুর্নীতি করতে পারে এবং ভবিষ্যতে যাতে কোন ধরনের বিপদে পরলে এইসব অনুগত কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে।
সুপ্রিম কোর্ট এর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা-কেও আওয়ামীলীগ নিয়োগ দিয়েছিল তাদের একজন অনুগত কর্মী হিসেবেই। বিভিন্ন সময়েই সিনহা সাহেব বিভিন্ন রায়ের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ এর প্রতি তাঁর আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। কিন্তু একটা লোক খারাপ হলেই যে তাঁর সব কাজ খারাপ হয়ে যাবে তা কিন্তু না। সবারই বিবেক আছে। কেউ কেউ বিবেকের তাগিদে কখনো দুর্নীতি করে না, আবার কেউ কেউ দুর্নীতি করেও একটা পর্যায়ে গিয়ে যখন নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন চলে আসে তখন দুর্নীতির কথা না ভেবে নিজের বিবেকের কথাই শুনতে বাধ্য হোন।
ঠিক এই ঘটনাই ঘটেছে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সাথে। আওয়ামীলীগ ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান এর যে বিরূপ পরিবর্তন আনতে চেয়েছিল সেই সম্পর্কে সিনহা সাহেব মনে মনেই বিভিন্ন কারনে অখুশি ছিলেন। এবং এ বিষয়টি নিয়ে তিনি তাঁর অব্জার্ভেশন জানালেন তাঁর আদালতের দেওয়া ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের মাধ্যমে। কিন্তু এ ঘটনায় আওয়ামীলীগ একদম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বিচারপতি সিনহার উপর।
তারা এই প্রধান বিচারপতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য শুরু করেছে নানান কৌশল। বিভিন্নভাবে চাপ ও দেওয়া হচ্ছে বলে শুনেছি যাতে করে তিনি তাঁর দেওয়া রায় পরিবর্তন করে নেন। কিন্তু আদালতে দেওয়া রায় এভাবে কিভাবে পরিবর্তন করে ফেলবেন সিনহা সাহেব? দেশটা একটা মগের মুল্লুক হোলেও আইন তো চলে আইনের গতিতে, আদালতকেও তাঁর নিজের নিয়ম অনুযায়ীই আগাতে হয়। আর আমি যতটুকু খেয়াল করেছি যে, সুরেন্দ্র সিনহা অসম্ভব আত্মমর্যাদাশীল একজন মানুষ। তিনি ভেতর ভেতর আওয়ামী ধ্যান ধারনা রাখলেও প্রকাশ্যে কখনো আওয়ামীলীগের অনুগত- এভাবে নিজেকে দেখাতে দেন না। যা একজন প্রধান বিচারপতি হিসেবে খুব বাঞ্ছনীয় একটি গুন।
কিন্তু আওয়ামীলীগ কোন ভাবেই সিনহা সাহেবের দেওয়া রায় মেনে নিতে পারছে না। তাকে হুমকি দেওয়া থেকে শুরু করে সামাজিকভাবে হেয় করাও হচ্ছে। সংবাদপত্রে দেখলাম আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে বলেছেন,
‘আপনি বলেছেন বিচার বিভাগ অনেক ধৈর্য ধরেছে। আমরা আওয়ামী লীগও অনেক ধৈর্য ধরেছি। দেশের মানুষ অনেক ধৈর্য ধরেছে। আমি অতীতের উদাহরণ বলতে চাই না। বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথি মারা হয়েছে। এখনো সেই ঘটনা ঘটেনি। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক তা চাই না। আরেকজন প্রধান বিচারপতি এজলাসে বসতে পারেননি। বিদায় নিতে হয়েছে। আমরা চাই না দেশে সেই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক। আপনি দয়া করে পদত্যাগ করুন। দেশের জনগণ অনেক ধৈর্য ধরেছে। দেশের জনগণ অনির্দিষ্টকালের জন্য ধৈর্য ধরবে না।’
‘শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হলে আপনার মতো মৌলভীবাজার কোর্টের আইনজীবী কোনো দিন হাইকোর্টের বিচারপতি হতে পারতেন না। সংখ্যালঘু ও উপজাতীয় সম্প্রদায়ের বিবেচনায় আপনাকে হাইকোর্টের বিচারপতি করা হয়েছিল। অনগ্রসর সম্প্রদায় থেকে যে বিচারপতি হতে পারে সে উদাহরণ সৃষ্টি করার জন্য। কিন্তু আপনি প্রধান বিচারপতির পদকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।’
‘আপনি সংসদকে অপরিপক্ব বলেছেন। এ সংসদই তো আপনার বেতন-ভাতা মঞ্জুর করেছেন। আপনি রায়ের পর্যবেক্ষণে যেহেতু এ কথা বলেছেন, আমি অনুরোধ করবো আপনি সমস্ত বেতন-ভাতা ফেরত দিন।আপনি অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হওয়ার বিচারপতির শপথ ভঙ্গ করেছেন। বাংলাদেশের সংবিধানে লেখা আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আপনি আপনার রায়ে বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। আপনি সংবিধান লংঘন করেছেন। সুতরাং আপনি পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।’
এখন আপনারাই বলুন কি অবস্থা আওয়ামীলীগের? সাধারণ একজন আওয়ামীলীগ কর্মী দেশের প্রধান বিচারালয়ের প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে বলে? কে তাকে এই অধিকার দিয়েছে? তার এতো বড় সাহসই বা কেন হবে? এখানে শুধু একজন বিচারপতিকেই নিচু করা হয়নি, একজন সংখ্যালঘু, একজন উপজাতি, একজন মফস্বলের নিবাসী বলে এবিউজ করা হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। আওয়ামীলীগ নেতাদের উচিত নতুন করে শ্বকুলে ভর্তি হয়ে কিভাবে বড়ো ও উচ্চপদস্থ কারো সাথে আদব কায়দা বজায় রেখে ব্যবহার করতে হয়, তা শিখে আসা।